ঢাকা: বাংলাদেশে ফের হিন্দু নির্যাতনের খবর৷ ইউনূস জমানায় লাগাতার অত্যাচারের শিকার সেদেশের সংখ্যালঘুরা৷ কুমিল্লার মুরাদনগরে হিন্দু নারী ধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকার রাজপথে নেমেছে হাজারো ছাত্রছাত্রী, প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন সাধারণ মানুষ, মানবাধিকার কর্মী ও নাগরিক সমাজ। রাজধানীর শাহবাগ, টিএসসি ও প্রেসক্লাব এলাকাজুড়ে দিনভর চলে বিক্ষোভ, যেখানে শিক্ষার্থীরা অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও দ্রুত বিচার দাবিতে স্লোগানে মুখর ছিলেন।
ঘটনাটি ঘটে ২৬ জুন রাতে, কুমিল্লার মুরাদনগরের রামচন্দ্রপুর পাঁচকিট্টা গ্রামে। অভিযোগ অনুযায়ী, স্থানীয় এক প্রভাবশালী রাজনীতিক এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর নেতা ফজর আলী (৩৮) রাত দশটার দিকে নির্যাতিতার বাবার বাড়িতে জোরপূর্বক প্রবেশ করে তাঁকে ধর্ষণ করে। ওই মহিলার স্বামী দেশের বাইরে, দুবাইয়ে কর্মরত। তিনি সন্তানদের নিয়ে বাবা-মায়ের বাড়িতে ছিলেন৷ ‘হরি সেবা’ নামক স্থানীয় উৎসব উপলক্ষে অবস্থান করছিলেন।
রাজনীতিকের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অভিযোগ, পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার
স্থানীয়দের তৎপরতায় অভিযুক্ত ফজর আলি ধরা পড়েন এবং তাঁকে গণপিটুনির দেওয়া হয়৷ তবে অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে তিনি পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। পরে ৩০ জুন ভোররাতে ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে তিনজনকে ধর্ষণের ভিডিও করা ও তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে আটক করা হয়েছে।
মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে রুজু করা হয়েছে। মুরাদনগর থানার ওসি জানিয়েছেন, পুলিশ সক্রিয়ভাবে তদন্ত শুরু করেছে এবং প্রযুক্তি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সহায়তায় দ্রুত অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিংসতা? উঠছে প্রশ্ন Bangladesh Hindu Persecution
ঘটনাটি শুধু একটি ব্যক্তিক ধর্ষণ নয় এর পেছনে স্পষ্ট একটি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মাত্রাও উঠে এসেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। নির্যাতিতা হিন্দু সম্প্রদায়ের হওয়ায় ঘটনাটি ঘিরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সংখ্যালঘুদের উপর হিংসা বাড়ছে বলে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বারবার অভিযোগ করে আসছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সহিংসতার নজির রয়েছে। এবারও একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠে আসায় সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয়েছে নিন্দার ঝড়।
ঢাবি শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ: “নিরাপদ বাংলাদেশ চাই”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঘটনার প্রতিবাদে একত্রিত হয়ে একটি ভিডিও বার্তায় বলেন, “একটি স্বাধীন দেশে একজন হিন্দু নারী নিজের বাড়িতে নিরাপদ নন—এটা শুধু একজনের নয়, গোটা জাতির ব্যর্থতা।” তাঁরা ‘প্রতীকী নীরবতা’ থেকে বেরিয়ে এসে সরাসরি বিচার এবং প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা দাবি করেন।
সামাজিক মাধ্যমজুড়ে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা হাততালি দিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন, “ধর্ষকের বিচার চাই, দলমত নয়, মানবতার জয় চাই!”
সরকার নীরব, উদ্বিগ্ন জনমত
ঘটনার কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও সরকারের শীর্ষ মহল থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া আসেনি। এই নীরবতায় জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। অনেকেই মনে করছেন, অভিযুক্ত রাজনৈতিক দলের পরিচয়ই হয়তো বিচারপ্রক্রিয়ায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।