শুধু ঘাটাল নয় সুরাটের মতো শহরের জলছবিও নজর কেড়েছে নেটিজনদের

গুজরাটের সুরাট (Surat) শহর মৌসুমি বৃষ্টির প্রথম ধাক্কাতেই জলমগ্ন। বানভাসির কারণে টেক্সটাইল মার্কেটে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সুরাটকে ‘এ১ সিটি’…

Surat flood

গুজরাটের সুরাট (Surat) শহর মৌসুমি বৃষ্টির প্রথম ধাক্কাতেই জলমগ্ন। বানভাসির কারণে টেক্সটাইল মার্কেটে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সুরাটকে ‘এ১ সিটি’ এবং ‘স্মার্ট সিটি’ হিসেবে প্রচার করলেও, এই ঘটনা শহরের পরিকাঠামোর দুর্বলতা এবং প্রশাসনিক অবহেলাকে সামনে এনেছে বলে মনে করছে নেটিজেনরা।

সামাজিক মাধ্যমে নেটিজেনরা শুধু পশ্চিমবঙ্গের ঘাটাল নয়, সুরাটের এই জলছবির তীব্র সমালোচনা করে অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস এক্স প্ল্যাটফর্মে লিখেছে, “আরেক বর্ষা, আরেক ‘মাস্টারস্ট্রোক’ ব্যর্থ! বিজেপি ‘এ১ সিটি’র গর্ব করলেও, সুরাটের ব্যবসায়ীরা জলমগ্নতার কারণে কোটি কোটি টাকার ক্ষতির মুখে।”

   

বানভাসির প্রভাব

সুরাট, (Surat) যে শহর ভারতের টেক্সটাইল হাব হিসেবে পরিচিত, প্রতি বছর মৌসুমি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে। এই বছর জুন মাসে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতে শহরের ব্যস্ততম এলাকা যেমন বরাছা রোড, অডাজন এবং পান্ডেসারা জলমগ্ন হয়ে যায়।

দোকানের বেসমেন্টে জল ঢুকে পড়ায় ব্যবসায়ীরা কাপড়ের স্টক এবং যন্ত্রপাতির ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সুরাটের টেক্সটাইল ব্যবসায় জলাবদ্ধতার কারণে প্রতিদিন ১০০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছিল, এবং এই বছরও পরিস্থিতি একই রকম।

স্থানীয় ব্যবসায়ী রমেশ তুলসিয়ান বলেন, (Surat) “প্রতি বছর বৃষ্টির সময় আমাদের ব্যবসা থমকে যায়। সরকার স্মার্ট সিটির কথা বলে, কিন্তু নিকাশি ব্যবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি।” ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি দৈনিক মজুরির শ্রমিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, কারণ বাজার বন্ধ থাকায় তাদের উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে।

নেটিজেনদের ক্ষোভ

এক্স প্ল্যাটফর্মে সুরাটের (Surat)  জলাবদ্ধতার ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। নেটিজেনরা সমালোচনায় মেতে বলছেন , “মোদী ও বিজেপি যে ‘গুজরাট মডেল’ দেশে বিক্রি করেছে, সুরাটের এই দশা তার প্রমাণ। গত ৩০ বছর ধরে বিজেপি ক্ষমতায়, তবু এই অবস্থা।” একজন পোস্ট করেছেন, “মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে সুরাটের রাস্তা সুইমিং পুলে পরিণত। বিজেপি ২৫ বছর ধরে গুজরাট শাসন করছে, এটাই কি উন্নয়ন?” নেটিজেনরা প্রশ্ন তুলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী ক্ষেত্র বারাণসীর মতো সুরাটও কেন পরিকাঠামো অবহেলার শিকার?

Advertisements

স্মার্ট সিটি প্রকল্পের সমালোচনা (Surat)

সুরাটকে ২০১৫ সালে কেন্দ্র সরকারের স্মার্ট সিটি প্রকল্পের অধীনে নির্বাচিত করা হয়েছিল। কিন্তু একটি গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, শহরের প্রাকৃতিক নিকাশি চ্যানেলে নির্মাণ ও বর্জ্য ফেলার কারণে জলাবদ্ধতা বেড়েছে। সুরাট মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (এসএমসি) জল সংরক্ষণের জন্য রিচার্জ ওয়েল তৈরি করলেও, নিকাশি ব্যবস্থার আধুনিকীকরণে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়নি।

আইনি জটিলতায় শিক্ষক নিয়োগে বড় সিদ্ধান্ত স্কুল সার্ভিস কমিশনের

রাজনৈতিক বিতর্ক

বিজেপি গুজরাটে ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকলেও, বিরোধীরা এই ঘটনাকে তাদের ব্যর্থতা হিসেবে তুলে ধরছে। তৃণমূল কংগ্রেসের পোস্টে বলা হয়েছে, “এটি স্মার্ট সিটি নয়, অবহেলায় ডুবন্ত শহর।” কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি (এএপি) নেতারাও বিজেপির ‘গুজরাট মডেল’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে, বিজেপি নেতা জানক দাভে দাবি করেছেন, প্রশাসন পরিস্থিতি বানভাসি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

সুরাটের (Surat) এই পরিস্থিতি শুধু পরিকাঠামোর সমস্যাই নয়, এটি গুজরাটের উন্নয়ন মডেলের সীমাবদ্ধতাও তুলে ধরেছে। নেটিজেনদের ক্ষোভ এবং ব্যবসায়ীদের ক্ষতি সরকারের দাবিকে চ্যালেঞ্জ করছে। প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বে স্মার্ট সিটির স্বপ্ন দেখানো হলেও, সুরাটের বাস্তবতা অন্য গল্প বলছে।