কলকাতা: রথযাত্রা (Rath Yatra) মানেই ধর্মীয় উচ্ছ্বাস, ভক্তির আবেগে মাতোয়ারা হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু এ বছর বাংলায় সেই আবেগে মিশে গেল রাজনৈতিক উত্তাপ। দিঘার নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দির এবং পুরীর ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রাকে ঘিরে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস ও বিরোধীদের মধ্যে শুরু হয়েছে টানটান লড়াই।
সূত্রের খবর, তৃণমূলের উচ্চস্তরে অলিখিতভাবে নির্দেশ গিয়েছে—দলীয় নেতা-কর্মীরা যেন এবছরের রথযাত্রা উপলক্ষে পুরী না যান, বরং দিঘাতেই উপস্থিত থাকেন। রীতিমতো দলীয় পর্যায়ে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে, যাতে রথযাত্রার মূল নজর কেন্দ্রীভূত থাকে দিঘাতেই।
দিঘার এই মন্দির নির্মাণ থেকে শুরু করে পুজোর আয়োজন, প্রসাদ বিলি—প্রতিটি বিষয় খুঁটিয়ে তদারকি করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। রাজনৈতিক মহলের মতে, ধর্মীয় আবেগকে সামনে রেখে দিঘাকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করতেই তৃণমূলের এই কৌশল।
কাশীপুর বেলগাছিয়ার তৃণমূল বিধায়ক অতীন ঘোষ বলেন, “ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান। আমি নিজেও বহুবার পুরী যাইনি। বাড়িতেই জগন্নাথ দেব আছেন। এ বছর উল্টো রথে দিঘায় যেতে পারি।” তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট, দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি একপ্রকার সমর্থন।
১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ বলেন, “প্রভু এবার বাংলায় এসেছেন। দিঘায় মন্দির তৈরি হয়েছে। এই পুজোর দায়িত্ব আমাদের সকলের।”
অন্যদিকে, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অনিন্দ্য কিশোর রাউত সাফ জানিয়ে দেন, “দিঘাতেই যাবো। যাঁরা যাবেন, তাঁরা নিশ্চয়ই দিঘাতেই যাবেন।”
তবে বিরোধীরা এই ধর্মীয় আয়োজনকে ঘিরে রাজনীতির তীব্র সমালোচনা করছেন। বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল কটাক্ষ করে বলেন, “ওনার (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) কথা ফেলবার নয়, কিন্তু ওনার দলের লোকেরাই নির্দেশ মানে না, সেটাও দেখা যায়। সবটাই লোকদেখানো।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পুরীর মত আন্তর্জাতিক ধর্মীয় কেন্দ্রকে পাশ কাটিয়ে দিঘাকে প্রমোট করা একপ্রকার রাজনৈতিক কৌশল। কারণ দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের অবস্থান, পর্যটন এবং তৃণমূল সরকারের প্রত্যক্ষ সংযুক্তি রয়েছে।
একাংশের মতে, এটি ‘বাঙালির রথ’ প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন চাইছে, বাংলার মধ্যে একটি বিকল্প পুণ্যস্থান হিসেবে দিঘাকে তুলে ধরতে।
এদিকে, দিঘার রথযাত্রা ঘিরে পর্যটক ও ভক্তদের ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। রাজ্য পরিবহণ নিগমের তরফে ২০ লক্ষের বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। পর্যটন বিভাগও বাড়তি পরিকাঠামো গড়ে তুলছে দিঘা জগন্নাথধামকে ঘিরে।
রথযাত্রা এবার শুধুই ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং বাংলার রাজনীতির অন্যতম চর্চার কেন্দ্রবিন্দু। পুরী না দিঘা—এই দ্বন্দ্ব রাজনৈতিক অবস্থানকেও স্পষ্ট করছে। শাসক-বিরোধী তরজা বাড়তে বাড়তে বাংলার ধর্মীয় আবেগে মিলেমিশে এক নতুন মাত্রা পেতে চলেছে এ বছরের রথযাত্রা।