দীঘার নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদ বিতরণকে কেন্দ্র করে নতুন বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP) অভিযোগ করেছে যে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকার জগন্নাথ দেবের পবিত্র প্রসাদ হিসেবে গজা এবং পেড়া তৈরি ও বিতরণের জন্য মুসলিম মালিকানাধীন মিষ্টির দোকানগুলিকে দায়িত্ব দিয়েছে।
বিজেপির (BJP) দাবি, এটি হিন্দু ভক্তদের ধর্মীয় আবেগে আঘাত এবং সনাতন ধর্মের অপমান। এই অভিযোগের মধ্যে বিজেপি আরও দাবি করেছে যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পদক্ষেপ জনসংখ্যার গঠন পরিবর্তন এবং তথাকথিত তুষ্টিকরণ নীতির অংশ।
বিজেপির (BJP) আইটি সেল প্রধান অমিত মালব্য মঙ্গলবার (১৭ জুন, ২০২৫) সামাজিক মাধ্যমে একটি নথি প্রকাশ করে অভিযোগ করেন, মুর্শিদাবাদ জেলার সুতি ১ ব্লকে মুসলিম মালিকানাধীন মিষ্টির দোকান এবং রেশন ব্যবসায়ীদের জগন্নাথ দেবের প্রসাদ হিসেবে গজা ও পেরা তৈরি ও বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিনি লেখেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু আবেগের উপর নির্মমভাবে আঘাত করছেন। এটি কেবল প্রশাসনিক অবহেলা নয়, ইচ্ছাকৃত উস্কানি। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে অ-হিন্দুদের প্রবেশ নিষিদ্ধ, অথচ মমতার বাংলায় জগন্নাথ ভক্তদের জন্য প্রসাদ এমন দোকান থেকে আনা হচ্ছে, যারা এই ধর্ম মানে না।”
বিজেপির (BJP) এই অভিযোগে আরও জোর দিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, “এটি হিন্দু ভক্তদের আবেগে আঘাত। স্থানীয় মিষ্টির দোকান থেকে প্রসাদ কিনে তা জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হিন্দু ধর্মের অবমাননা।” তিনি দাবি করেন, এই পদক্ষেপ তৃণমূলের তুষ্টিকরণ নীতির অংশ, যা হিন্দু উৎসবের উপর নিষেধাজ্ঞা, দুর্গা মূর্তি বিসর্জনের বাধা এবং রাম নবমীর শোভাযাত্রায় হয়রানির মতো ঘটনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
বিজেপি (BJP) নেতা দিলীপ ঘোষও এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “গত ১৫ বছর ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার হিন্দুদের বিশ্বাসের অপমান করছেন। স্থানীয় মিষ্টিকে জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদ হিসেবে প্যাকেজিং করে বিতরণ করা এই অপমানের আরেকটি উদাহরণ।” তিনি এই পদক্ষেপকে হিন্দু আবেগের উপর আঘাত হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগকে তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন বলেন, “শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদ মন্দির থেকেই সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং রাজ্যের প্রতিটি এলাকায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজকে অপমান করার জন্য বিজেপি এই ধরনের মিথ্যা অভিযোগ করছে।”
তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম এই অভিযোগকে ‘ছোটো মনের চিন্তা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ভগবান সবার জন্য এবং তাঁর প্রসাদও সবার জন্য। এই পৃথিবী ভগবানের সৃষ্টি, তাই প্রসাদ যে কেউ গ্রহণ করতে পারে। যারা ইচ্ছুক তারা গ্রহণ করবেন, আর শুভেন্দু অধিকারীর মতো নাস্তিকরা গ্রহণ করবেন না।”
দীঘার জগন্নাথ মন্দির, যা পুরীর বিখ্যাত মন্দিরের একটি প্রতিরূপ, গত ৩০ এপ্রিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে উদ্বোধন হয়। রাজ্য সরকারের ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই মন্দিরটি পর্যটন ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে প্রচারিত হয়েছে। তবে, এই মন্দিরের নাম ‘জগন্নাথ ধাম’ হিসেবে ব্যবহার এবং প্রসাদ বিতরণের প্রক্রিয়া নিয়ে ওড়িশার পুরী মন্দির কর্তৃপক্ষ এবং বিজেপি (BJP) উভয়ই আপত্তি তুলেছে। পুরীর মন্দিরে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ৫৬টি খাদ্যদ্রব্যকে ‘মহাপ্রসাদ’ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এই প্রসাদ শুধুমাত্র মন্দিরের ভিতরে প্রস্তুত হয়।
দেশজুড়ে কমছে করোনা, ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পাচ্ছে অ্যাক্টিভ রোগী সংখ্যা
বিজেপির (BJP) অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে হিন্দু ভোটারদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন, কিন্তু তাঁর এই পদক্ষেপ হিন্দু ধর্মীয় ঐতিহ্যের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করছে। অন্যদিকে, তৃণমূলের দাবি, এই উদ্যোগ রাজ্যের প্রতিটি পরিবারের কাছে জগন্নাথের আশীর্বাদ পৌঁছে দেওয়ার একটি প্রয়াস।
এই বিতর্ক রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। বিজেপির (BJP) দাবি, মমতার এই পদক্ষেপ হিন্দুদের প্রতি অবিচার এবং তুষ্টিকরণ নীতির প্রমাণ। তৃণমূল পাল্টা অভিযোগ করেছে যে, বিজেপি ধর্মীয় বিষয়কে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। এই ঘটনা ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।