আলিপুরদুয়ারে মিলল বিরল গোলাপি কলা গাছ, চাঞ্চল্য

অয়ন দে , আলিপুরদুয়ার: জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম দক্ষিণ চেংমারীতে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যে মুগ্ধ গ্রামবাসী। সবুজে ঘেরা এই শান্ত গ্রামের এক কোণে একটি ব্যতিক্রমী গাছ সকলের…

Rare Pink Banana Tree Discovered in Alipurduar’s Chengmari, Sparks Tourism Hopes

অয়ন দে , আলিপুরদুয়ার: জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম দক্ষিণ চেংমারীতে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যে মুগ্ধ গ্রামবাসী। সবুজে ঘেরা এই শান্ত গ্রামের এক কোণে একটি ব্যতিক্রমী গাছ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এটি কোনো সাধারণ গাছ নয়, বরং একটি গোলাপি কলা গাছ (Rare Pink Banana Tree), যার বৈজ্ঞানিক নাম মুসা ভ্যালুটিনা। এই গাছের ফল দেখতে গোলাপি রঙের এবং পাকলে টকটকে লাল হয়ে যায়, যা স্থানীয়দের কাছে ‘পিঙ্ক বানানা’ নামে পরিচিত। এই অসাধারণ গাছটি কেবল গ্রামবাসীদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি করেনি, বরং এলাকায় পর্যটনের নতুন সম্ভাবনাও তৈরি করছে।

দক্ষিণ চেংমারীর এই গোলাপি কলা গাছটি প্রথম লক্ষ্য করেন স্থানীয় বাসিন্দা মনোজ বাবু। তিনি জানান, “এক বছর আগে কুমারগ্রামে এই গাছটি প্রথম দেখি। এর অসাধারণ রঙ ও গঠন আমাকে মুগ্ধ করে। তাই একটি চারা কিনে এনে আমার বাড়ির উঠোনে লাগাই।” মনোজ বাবু আরও বলেন, “এই কলার আকার সাধারণ কলার তুলনায় ছোট, তবে স্বাদে অতুলনীয়। এর ফলনও বেশ ভালো, এবং খুব বেশি যত্নের প্রয়োজন হয় না।” তাঁর এই উদ্যোগ এখন গ্রামের অন্যান্য বাসিন্দাদেরও অনুপ্রাণিত করছে।

   

মুসা ভ্যালুটিনা মূলত হিমালয় এবং আসাম অঞ্চলের একটি প্রজাতি। এই গাছের গড় উচ্চতা প্রায় দেড় মিটার, যা এটিকে বাগান বা উঠোনে লাগানোর জন্য আদর্শ করে তোলে। এর ফল শুধু দেখতে সুন্দরই নয়, বরং স্বাদেও অনন্য। পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এই কলা স্থানীয় বাজারে বিক্রির সম্ভাবনাও তৈরি করছে। স্থানীয় কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই গাছটি কম রক্ষণাবেক্ষণে ভালো ফলন দেয়, যা কৃষকদের জন্য একটি লাভজনক বিকল্প হতে পারে।

Rare Pink Banana Tree Discovered in Alipurduar’s Chengmari, Sparks Tourism Hopes
Rare Pink Banana Tree Discovered in Alipurduar’s Chengmari, Sparks Tourism Hopes

গ্রামবাসীদের মধ্যে এই গোলাপি কলা গাছ নিয়ে উৎসাহের শেষ নেই। স্থানীয় বাসিন্দা রিনা দেবী বলেন, “এই গাছটি দেখতে এত সুন্দর যে দূর থেকে মনে হয় যেন কোনো রঙিন ছবির দৃশ্য। আমরা এর ফল খেয়েছি, স্বাদও দারুণ।” অনেকে মনে করছেন, এই গাছ শুধু গ্রামের সৌন্দর্য বাড়াচ্ছে না, বরং পর্যটকদের আকর্ষণ করতেও সক্ষম হবে। স্থানীয় কৃষক সমিতির এক সদস্য বলেন, “এই ধরনের গাছ আমাদের গ্রামকে পর্যটনের মানচিত্রে নিয়ে আসতে পারে। পর্যটকরা এই বিরল কলা গাছ দেখতে এবং এর ফলের স্বাদ নিতে আসতে পারেন।”

Advertisements

আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসনও এই উদ্যোগের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে। জেলা কৃষি দপ্তরের এক আধিকারিক জানান, “মুসা ভ্যালুটিনা একটি বিরল প্রজাতি, এবং এটি আমাদের অঞ্চলের জলবায়ু ও মাটির সঙ্গে খুব ভালোভাবে খাপ খায়। আমরা কৃষকদের এই গাছ চাষে উৎসাহিত করার জন্য প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদানের পরিকল্পনা করছি।” তিনি আরও বলেন, এই গাছের চাষ বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হতে পারে এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

এই গোলাপি কলা গাছটি কেবল কৃষি ও অর্থনীতির দিক থেকেই নয়, পরিবেশের জন্যও উপকারী। এর কম রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা এবং দ্রুত বৃদ্ধির কারণে এটি পরিবেশবান্ধব চাষের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। স্থানীয় পরিবেশবিদরা মনে করেন, এই ধরনের গাছের চাষ বৃদ্ধি পেলে এলাকার জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ হবে এবং কৃষি পর্যটনের মাধ্যমে গ্রামের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

দক্ষিণ চেংমারীর এই গোলাপি কলা গাছ এখন শুধু গ্রামের গর্ব নয়, বরং আলিপুরদুয়ারের পর্যটন সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত। মনোজ বাবুর উদ্যোগ অন্যান্য কৃষকদেরও এই বিরল প্রজাতির চাষে উৎসাহিত করছে। স্থানীয়রা আশা করছেন, এই গাছটি শীঘ্রই গ্রামের পরিচয় হয়ে উঠবে এবং দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা এই অপূর্ব সৌন্দর্য দেখতে আসবেন। আলিপুরদুয়ারের এই ছোট্ট গ্রাম এখন নতুন এক সম্ভাবনার পথে এগিয়ে চলেছে, যেখানে প্রকৃতি, ঐতিহ্য এবং অর্থনীতি একসঙ্গে মিলিত হচ্ছে।