বেঙ্গালুরু দুর্ঘটনায় এবার অপসারিত সিদ্দারামাইয়ার সচিব

বেঙ্গালুরুর (bengaluru) এম. চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি) এর আইপিএল ২০২৫ বিজয় উৎসবের সময় ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু…

bengaluru accident action

বেঙ্গালুরুর (bengaluru) এম. চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি) এর আইপিএল ২০২৫ বিজয় উৎসবের সময় ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু এবং ৪৭ জনের আহত হওয়ার ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। ইতিমধ্যেই পুলিশ কমিশনার সহ আর ও অনেক উচ্চ পদস্থ কর্মচারীকে অপসারণ করা হয়েছে। এবার খোদ কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার রাজনৈতিক সচিব নাসির আহমেদকে অপসারণ করা হয়েছে।

শিবকুমারের পদত্যাগ দাবি 

এই ঘটনার পর বিরোধী দল বিজেপি এবং জনতা দল (সেকুলার) মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি.কে. শিবকুমারের পদত্যাগ দাবি করেছে, এই ঘটনাকে “রাজ্য-প্রায়োজিত হত্যা” হিসেবে অভিহিত করে। ৩ জুন ২০২৫-এ আরসিবি আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে ছয় রানে জয়ী হয়ে ১৮ বছর পর প্রথমবার আইপিএল শিরোপা জয় করে।

   

বুধবার সকালে আরসিবি বেঙ্গালুরুতে ফিরে আসে এবং বিধান সৌধায় মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার (bengaluru) সঙ্গে সাক্ষাৎ করে, যেখানে তাদের সম্মানিত করা হয়। এরপর দলটি এম. চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে যায়, যেখানে কর্ণাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (কেএসসিএ) একটি উৎসবের আয়োজন করে। কিন্তু এই উৎসবের পরিকল্পনায় গুরুতর ত্রুটি ছিল।

ঘটনার পটভূমি (bengaluru) 

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, বিকেল ৩টার মধ্যে স্টেডিয়ামের এক কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ৫০,০০০ মানুষ জড়ো হয়েছিল, এবং ভিড় ক্রমশ বাড়ছিল। স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা মাত্র ৩৫,০০০ হলেও, প্রায় ২-৩ লক্ষ মানুষ ভিরাট কোহলি এবং অন্যান্য খেলোয়াড়দের দেখতে জড়ো হয়। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া স্বীকার করেছেন যে, এত বিশাল ভিড়ের কথা কেউ আশা করেনি।

তিনি বলেন, “স্টেডিয়ামের (bengaluru)  ধারণক্ষমতা ৩৫,০০০, কিন্তু ২-৩ লক্ষ মানুষ এসেছিল। আমরা এই ঘটনার জন্য দুঃখিত।” তিনি ঘোষণা করেন যে, মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হবে। তবে, এই ঘটনার জন্য তিনি কুম্ভ মেলার মতো অন্যান্য ঘটনার সঙ্গে তুলনা করে বলেন, “এই ধরনের ঘটনা অনেক জায়গায় ঘটেছে।

কুম্ভ মেলায় ৫০-৬০ জন মারা গিয়েছিল, কিন্তু আমরা তখন সমালোচনা করিনি।” এই মন্তব্যের জন্য বিজেপি নেতা প্রহ্লাদ জোশী তীব্র সমালোচনা করেন, বলেন, “কুম্ভের সঙ্গে এই ঘটনার তুলনা করা অযৌক্তিক। পুলিশ অনুমতি না দেওয়া সত্ত্বেও কেন এই শোভাযাত্রা করা হল?”

বেঙ্গালুরু পুলিশ কমিশনার সাসপেন্ড

এই ঘটনার পর সিদ্দারামাইয়া বেঙ্গালুরু পুলিশ কমিশনার বি. দয়ানন্দ, কাবন পার্ক থানার ইন্সপেক্টর, স্টেশন হাউস অফিসার, জোনাল এসিপি, সেন্ট্রাল ডিসিপি এবং স্টেডিয়ামের দায়িত্বে থাকা এসিপি-সহ শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের সাসপেন্ড করেছেন।

তিনি আরসিবি, (bengaluru) কেএসসিএ এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা ডিএনএ এন্টারটেইনমেন্টের প্রতিনিধিদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এই ঘটনার তদন্ত করছে, এবং অবসরপ্রাপ্ত হাইকোর্ট বিচারপতি জন মাইকেল ডি’কুনহার নেতৃত্বে একটি এক সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়েছে।

Advertisements

“সরকার-প্রণোদিত ভিড়”

বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্র এই ঘটনাকে “সরকার-প্রণোদিত ভিড়” বলে অভিহিত করেছেন এবং সিদ্দারামাইয়া (bengaluru) ও শিবকুমারের পদত্যাগ দাবি করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, “মুখ্যমন্ত্রী ও উপ-মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে কৃতিত্ব নেওয়ার প্রতিযোগিতা এই বিশৃঙ্খলার কারণ। স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ৩৫,০০০ হলেও ৩ লক্ষ মানুষ জড়ো হয়।

পুলিশ অনুমতি দেয়নি, তবু কেন এই উৎসব হলো?” জনতা দল (সেকুলার) নেতা এইচ.ডি. কুমারস্বামী অভিযোগ করেন, মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব কে. গোবিন্দরাজু এই অনুষ্ঠান বিধান সৌধায় আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছিলেন, যা সিদ্দারামাইয়ার ইমেজ বাড়ানোর জন্য করা হয়। তিনি বলেন, “মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরেও উৎসব চলতে থাকে, যখন মুখ্যমন্ত্রী জনার্ধন হোটেলে খাওয়ার মধ্যে ব্যস্ত ছিলেন।”

কর্ণাটক (bengaluru) হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এই ঘটনার বিষয়ে মামলা গ্রহণ করেছে এবং সরকারকে ১০ জুনের মধ্যে স্থিতি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, স্টেডিয়ামের কাছে একটি নর্দমার উপর অস্থায়ী স্ল্যাব ভেঙে পড়ায় ভিড়ের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, যা এই দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও নয়! স্টার্কের বড় সিদ্ধান্ত ভাইরাল

এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শোক প্রকাশ করেছেন, বলেন, “বেঙ্গালুরুর ঘটনা হৃদয়বিদারক। আমি আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।” রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এই ঘটনাকে “চমকে দেওয়া এবং হৃদয়বিদারক” বলে বর্ণনা করেছেন। বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী বলেন, “এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে কোনো উৎসব মানুষের জীবনের চেয়ে মূল্যবান নয়।”

নাসির আহমেদ, (bengaluru) সিদ্দারামাইয়ার রাজনৈতিক সচিব, বলেন, “আমরা এত বড় ভিড়ের আশা করিনি। খেলোয়াড়দের বিদেশে যাওয়ার তাড়া ছিল, তাই স্বল্প সময়ে যথাসাধ্য ব্যবস্থা করা হয়েছিল।” তবে, এই ব্যাখ্যা জনরোষ কমাতে পারেনি। সামাজিক মাধ্যমে #ArrestKohli ট্রেন্ড ভাইরাল হয়েছে, যদিও অনেকে বলছেন, কোহলি এই ইভেন্টের আয়োজক বা নিরাপত্তা ব্যবস্থাপক নন।

এই ঘটনা বেঙ্গালুরুর (bengaluru) ইতিহাসে একটি কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সরকার এবং আরসিবি উভয়েই দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে, এই ঘটনা ভারতীয় ক্রিকেটে জনসাধারণের উৎসবের নিরাপত্তা এবং পরিকল্পনার গুরুত্ব নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।