iPhone 15 vs Pixel 8 in India: ভারতের স্মার্টফোন বাজারে প্রতিযোগিতা ক্রমশ তীব্র হচ্ছে, এবং এই লড়াইয়ে অ্যাপলের আইফোন ১৫ এবং গুগলের পিক্সেল ৮ দুটি শীর্ষস্থানীয় ফ্ল্যাগশিপ ফোন হিসেবে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে আইফোন ১৫ এবং অক্টোবরে পিক্সেল ৮ লঞ্চ হওয়ার পর থেকে, এই দুটি ফোনের মধ্যে তুলনা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। দাম, ক্যামেরা, পারফরম্যান্স, এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে কোন ফোনটি ভারতীয় ক্রেতাদের জন্য বেশি মূল্য দেয়? এই প্রতিবেদনে আমরা আইফোন ১৫ এবং পিক্সেল ৮-এর মধ্যে তুলনা করে দেখব কোনটি ভারতের বাজারে সত্যিই এগিয়ে।
দাম: কোনটি বেশি সাশ্রয়ী?
ভারতে দাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এবং এই ক্ষেত্রে পিক্সেল ৮ স্পষ্টভাবে এগিয়ে। গুগল পিক্সেল ৮-এর ১২৮ জিবি ভেরিয়েন্টের দাম শুরু হয় ৭৫,৯৯৯ টাকা থেকে, আর ২৫৬ জিবি ভেরিয়েন্টের দাম ৮২,৯৯৯ টাকা। অন্যদিকে, আইফোন ১৫-এর ১২৮ জিবি ভেরিয়েন্টের দাম শুরু হয় ৭৯,৯০০ টাকা থেকে, এবং ২৫৬ জিবি এবং ৫১২ জিবি ভেরিয়েন্টের দাম যথাক্রমে ৮৯,৯০০ এবং ১,০৯,৯০০ টাকা। ২০২৫ সালের মে মাসে, অ্যামাজনের মতো প্ল্যাটফর্মে আইফোন ১৫-এর দাম ৫৯,৭০০ টাকায় নেমে এসেছে, যা এটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। তবে, পিক্সেল ৮-এর জন্য ফ্লিপকার্টে আইসিআইসিআই, কোটাক, এবং অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের কার্ডে ৮,০০০ টাকার ছাড় পাওয়া যায়, যা এর দামকে আরও কমিয়ে দেয়।
দামের দিক থেকে পিক্সেল ৮ প্রাথমিকভাবে সাশ্রয়ী, তবে আইফোন ১৫-এর ডিসকাউন্ট এটিকে প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রেখেছে। যারা বেশি স্টোরেজ চান, তাদের জন্য আইফোন ১৫-এর ৫১২ জিবি বিকল্প একটি সুবিধা। তবে, সাধারণ ক্রেতাদের জন্য পিক্সেল ৮-এর কম দাম এবং ছাড়ের অফার বেশি মূল্য দেয়।
ডিজাইন এবং ডিসপ্লে: কমপ্যাক্ট ফ্ল্যাগশিপের লড়াই
আইফোন ১৫ এবং পিক্সেল ৮ দুটিই কমপ্যাক্ট ফ্ল্যাগশিপ ফোন, যা বড় ফোনের তুলনায় হাতে ধরতে আরামদায়ক। আইফোন ১৫-এর মাত্রা ১৪৭.৬ x ৭১.৬ x ৭.৮ মিমি এবং ওজন ১৭১ গ্রাম, যেখানে পিক্সেল ৮-এর মাত্রা ১৫০.৫ x ৭০.৮ x ৮.৯ মিমি এবং ওজন ১৮৭ গ্রাম। আইফোন ১৫-এর সুপার রেটিনা এক্সডিআর ওএলইডি ডিসপ্লে ৬.১ ইঞ্চি, রেজোলিউশন ২৫৫৬ x ১১৭৯ পিক্সেল, এবং পিক্সেল ডেনসিটি ৪৬০ পিপিআই। এটির পিক ব্রাইটনেস ২,০০০ নিটস, তবে রিফ্রেশ রেট মাত্র ৬০ হার্জ। পিক্সেল ৮-এর ৬.২ ইঞ্চি অ্যাকচুয়া ওএলইডি ডিসপ্লে রেজোলিউশন ১০৮০ x ২৪০০ পিক্সেল, পিক্সেল ডেনসিটি ৪২৮ পিপিআই, এবং ৬০-১২০ হার্জ রিফ্রেশ রেট। পিক্সেল ৮-এর ডিসপ্লে বেশি ফ্লুইড এবং মসৃণ অ্যানিমেশন দেয়, যা গেমিং এবং স্ক্রলিংয়ের জন্য ভালো।
ডিজাইনের ক্ষেত্রে, আইফোন ১৫-এর অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেম এবং ম্যাট ফিনিশ এটিকে প্রিমিয়াম লুক দেয়, এবং ডায়নামিক আইল্যান্ড ফিচারটি নোটিফিকেশনকে আরও ইন্টারেক্টিভ করে। পিক্সেল ৮-এর বাঁকা প্রান্ত এবং ক্যামেরা বার এটিকে আলাদা করে, তবে এর চকচকে পিছনের প্যানেলে আঙুলের ছাপ পড়ে। দুটি ফোনই আইপি৬৮ রেটিং সহ ধুলো এবং জলরোধী। পিক্সেল ৮-এর উচ্চ রিফ্রেশ রেট এবং বড় ডিসপ্লে এটিকে ডিসপ্লে কোয়ালিটির ক্ষেত্রে এগিয়ে রাখে।
পারফরম্যান্স: প্রসেসর এবং সফটওয়্যার
আইফোন ১৫-এর অ্যাপল এ১৬ বায়োনিক চিপসেট এবং ৬ জিবি র্যাম এটিকে অত্যন্ত দ্রুত এবং দক্ষ করে। এটি আইওএস ১৭-এ চলে, যা সহজ এবং স্ট্রিমলাইনড ব্যবহারকারী অভিজ্ঞতা দেয়। পিক্সেল ৮-এ গুগলের টেনসর জি৩ চিপসেট এবং ৮ জিবি র্যাম রয়েছে, যা অ্যান্ড্রয়েড ১৪-এ চলে। টেনসর জি৩ দৈনন্দিন কাজ এবং গেমিংয়ে ভালো পারফর্ম করে, তবে এ১৬ বায়োনিকের তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে। তবে, পিক্সেল ৮-এর এআই ফিচার, যেমন ম্যাজিক ইরেজার, অডিও ম্যাজিক ইরেজার, এবং লাইভ ট্রান্সলেট, এটিকে ফটোগ্রাফি এবং ভিডিও এডিটিংয়ে এগিয়ে রাখে।
আইফোন ১৫ অ্যাপলের ইকোসিস্টেমে গভীরভাবে সমন্বিত, যা ম্যাক, আইপ্যাড, বা অ্যাপল ওয়াচ ব্যবহারকারীদের জন্য আদর্শ। পিক্সেল ৮ অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্য বেশি কাস্টমাইজেশন এবং এআই-চালিত ফিচার দেয়। পারফরম্যান্সে আইফোন ১৫ এগিয়ে, তবে পিক্সেল ৮-এর সফটওয়্যার ফিচার এটিকে অনন্য করে।
ক্যামেরা: ফটোগ্রাফির লড়াই
আইফোন ১৫-এ ৪৮ মেগাপিক্সেল প্রাইমারি ক্যামেরা এবং ১২ মেগাপিক্সেল আল্ট্রাওয়াইড লেন্স রয়েছে, যা প্রাকৃতিক রঙ এবং লো-লাইট ফটোগ্রাফিতে দুর্দান্ত। পিক্সেল ৮-এ ৫০ মেগাপিক্সেল প্রাইমারি এবং ১২ মেগাপিক্সেল আল্ট্রাওয়াইড লেন্স রয়েছে, যা এআই ফিচার যেমন ম্যাজিক ইরেজার এবং বেস্ট টেক দিয়ে সমৃদ্ধ। পিক্সেল ৮-এর ফটোগুলো বেশি বিস্তারিত, তবে আইফোন ১৫-এর রঙ বেশি প্রাকৃতিক। ভিডিওর ক্ষেত্রে আইফোন ১৫ এগিয়ে, বিশেষ করে ৪কে ভিডিও এবং সিনেমাটিক মোডে। পিক্সেল ৮-এর অডিও ম্যাজিক ইরেজার ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ড নয়েজ কমাতে সাহায্য করে। ক্যামেরায় দুটি ফোনই প্রায় সমান, তবে পিক্সেল ৮-এর এআই ফিচার ফটোগ্রাফি উত্সাহীদের জন্য বাড়তি সুবিধা দেয়।
ব্যাটারি এবং চার্জিং
আইফোন ১৫-এর ব্যাটারি ৩,৩৪৯ এমএএইচ, যা সারাদিন চলে, তবে ২০ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং এবং ১৫ ওয়াট ম্যাগসেফ ওয়্যারলেস চার্জিং সমর্থন করে। পিক্সেল ৮-এর ৪,৫৭৫ এমএএইচ ব্যাটারি বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন এবং ২৭ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং এবং ১৮ ওয়াট ওয়্যারলেস চার্জিং দেয়। পিক্সেল ৮-এর ব্যাটারি লাইফ এবং চার্জিং গতি আইফোন ১৫-এর তুলনায় ভালো।
সফটওয়্যার আপডেট এবং মূল্য
পিক্সেল ৮ সাত বছরের সফটওয়্যার আপডেট প্রতিশ্রুতি দেয়, যেখানে আইফোন ১৫ সাধারণত ছয় বছরের আপডেট পায়। দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের জন্য পিক্সেল ৮ এগিয়ে। তবে, অ্যাপলের রিসেল মূল্য বেশি, যা আইফোন ১৫-এর দীর্ঘমেয়াদী মূল্য বাড়ায়।
কোনটি বেশি মূল্য দেয়?
ভারতের বাজারে পিক্সেল ৮ তার কম দাম, উচ্চ রিফ্রেশ রেট ডিসপ্লে, এআই ফিচার, এবং দীর্ঘ সফটওয়্যার আপডেটের কারণে বেশি মূল্য দেয়। আইফোন ১৫ অ্যাপল ইকোসিস্টেমে থাকা ব্যবহারকারীদের জন্য আদর্শ, এর প্রিমিয়াম বিল্ড এবং শক্তিশালী প্রসেসর এটিকে নির্ভরযোগ্য করে। ফটোগ্রাফি উত্সাহী এবং অ্যান্ড্রয়েড পছন্দকারীদের জন্য পিক্সেল ৮ ভালো, আর অ্যাপল ইকোসিস্টেম এবং ভিডিও কোয়ালিটির জন্য আইফোন ১৫। আপনার পছন্দ কোনটি?