নয়াদিল্লি: ইন্দোনেশিয়ায় নিযুক্ত ভারতীয় প্রতিরক্ষা সংযুক্ত আধিকারিক ক্যাপ্টেন (নৌবাহিনী) শিব কুমারের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিতর্ক। জাকার্তায় আয়োজিত এক সামরিক সেমিনারে তিনি উল্লেখ করেন যে,অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন ভারতীয় বায়ুসেনা (IAF) কয়েকটি যুদ্ধবিমান হারিয়েছে, যার মূল কারণ ছিল রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ।
এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিরোধীরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে জাকার্তায় ভারতীয় দূতাবাস একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জারি করে জানায়, ক্যাপ্টেন কুমারের বক্তব্য “প্রসঙ্গ বিচ্ছিন্নভাবে তুলে ধরা হয়েছে” এবং “মূল বার্তাকে বিকৃত করা হয়েছে।”
ঠিক কী বলেছিলেন প্রতিরক্ষা আধিকারিক?
জুন ১০ তারিখে জাকার্তায় আয়োজিত একটি প্রতিরক্ষা বিষয়ক সেমিনারে বক্তব্য রাখেন ক্যাপ্টেন কুমার।
সেখানে তিনি বলেন, “শুরুতে আমরা কিছু যুদ্ধবিমান হারিয়েছিলাম, কারণ রাজনৈতিক নেতৃত্বের নির্দেশ ছিল পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটি বা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আক্রমণ না করা।” তিনি আরও জানান, এই প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির পর ভারত কৌশলগতভাবে পরিবর্তন আনে। তিনি আরও বলেন, “আমরা শত্রুপক্ষের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম নিস্ক্রিয় করার পর, ব্রহ্মোস মিসাইল ব্যবহার করে লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল আঘাত হানতে সক্ষম হই।”
ঠিক কী ধরেনর নিয়ন্ত্রণ? Operation Sindur Political Control
ঠিক কী ধরনের নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছিল, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ক্যাপ্টেন শিব কুমার বলেন, “আমাদের স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে কোনও সামরিক বা বেসামরিক স্থাপনায় আঘাত হানা যাবে না। জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয়, এমন কোনও লক্ষ্যবস্তুতে হামলা নিষিদ্ধ ছিল। এই সীমাবদ্ধ নির্দেশনার কারণে অভিযান শুরুর দিকে আমাদের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।”
তবে তিনি যোগ করেন, “এর পরপরই আমরা কৌশলগত পরিবর্তন আনি। শত্রুপক্ষের সামরিক ঘাঁটিগুলিকে লক্ষ্য করে পাল্টা আঘাত হানি। তাদের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার পর, আমাদের মিসাইলগুলো পাকিস্তানের অভ্যন্তরে অনায়াসে ঢুকে নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়।”
ভারতীয় দূতাবাসের প্রতিক্রিয়া: অপারেশন সিঁদুর প্রকৃত উদ্দেশ্য ভুলভাবে ব্যাখ্যা
সামরিক আধিকারিকের বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায়, জাকার্তায় ভারতীয় দূতাবাস এক বিবৃতি জারি করা হয়৷ দূতাবাস জানায়, অপারেশন সিঁদুরে মূল লক্ষ্য ছিল নির্দিষ্ট৷ শুধুমাত্র জঙ্গি ঘাঁটি ও সন্ত্রাসবাদ-সম্পর্কিত পরিকাঠামো ধ্বংস করাই ছিল মূল লক্ষ্য৷ ভারতের উদ্দেশ্য ছিল সংঘাতকে আন্তর্জাতিক মাত্রায় না নিয়ে গিয়ে, সুনির্দিষ্ট ও লক্ষ্যভিত্তিক প্রতিক্রিয়া জানানো।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া: কংগ্রেসের সরাসরি আক্রমণ
প্রতিরক্ষা সংযুক্ত আধিকারিকের বক্তব্য সামনে আসতেই প্রতিরোধ শুরু করে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, “প্রধানমন্ত্রী কেন সর্বদলীয় বৈঠকে বসতে রাজি নন? কেন বিশেষ অধিবেশন চেয়ে করা দাবি খারিজ করা হচ্ছে?” কংগ্রেস নেতা পবন খেরা মন্তব্য করেন, “এটি মোদী সরকার ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ। সরকার জানে তারা জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে আপস করেছে, এবং এখন আতঙ্কে ভুগছে।”
তিনি চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহানের পূর্ববর্তী মন্তব্য উদ্ধৃত করেন, যেখানে জেনারেল চৌহান জানান, “প্রাথমিক ধাপে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তা থেকে কৌশলগত শিক্ষা নিয়ে ভারত আরও কার্যকর অভিযান চালিয়েছে।” উল্লেখ্য, পাকিস্তান সরকার দাবি করেছিল তারা ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যা জেনারেল চৌহান “সম্পূর্ণ মিথ্যা” বলে প্রত্যাখ্যান করেন।