রাস্তার নিরাপত্তা বাড়ানোর লক্ষ্যে মোদি সরকার (Modi Government) একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছে। আগামী দিন থেকে দেশজুড়ে প্রতিটি নতুন দুইচাকার যানবাহনের ক্রয়ের সঙ্গে দুটি আইএসআই সার্টিফাইড হেলমেট বাধ্যতামূলকভাবে দেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্তটি ইউনিয়ন পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রী নিতিন গড়করী গত মার্চ মাসে নতুন দিল্লিতে অনুষ্ঠিত অটো সম্মেলনে ঘোষণা করেন। এই নতুন বিধিটি দেশের রাস্তায় দুইচাকার যানের চালক ও প্যাসেঞ্জারদের জন্য নিরাপত্তা বাড়ানোর লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয়েছে, যা বছরে প্রায় ৬৯,০০০ জন রাইডারের মৃত্যুর মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
মোটর যান পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর ভারতের রাস্তায় ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় প্রায় অর্ধেক মৃত্যু হেলমেট ব্যবহার না করার কারণে ঘটছে। এই পরিস্থিতি বদলানোর জন্য দুইচাকার হেলমেট উৎপাদনকারীদের সংগঠনও এই পদক্ষেপের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। তাদের মতে, হেলমেট ব্যবহার জনগণের মধ্যে নিরাপত্তা সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করবে এবং দুর্ঘটনার পরিণতিতে মৃত্যুর হার কমাবে। এই নতুন বিধি চালু হওয়ার পর থেকে, প্রতিটি নতুন মোটরসাইকেল বা স্কুটির ক্রেতাকে দুটি হেলমেট সরবরাহ করতে হবে, যা চালক ও প্যাসেঞ্জার উভয়ের জন্যই ব্যবহারযোগ্য হবে।
নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
ভারতের রাস্তায় দুইচাকার যানের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে, তবে হেলমেট ব্যবহারের রেওয়াজ এখনো ততটা ছড়িয়ে পড়েনি। অনেক ক্ষেত্রে চালকরা নিজেরা হেলমেট পরলেও প্যাসেঞ্জারদের জন্য এটি উপেক্ষা করা হয়। এই অভ্যাসের ফলে দুর্ঘটনার সময় মাথার আঘাতে মৃত্যু বা গুরুতর চোট লাগার ঘটনা বেড়েছে। ২০১৮ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায়, ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ কমিউনিটি মেডিসিনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, হেলমেট ব্যবহার করা রাইডারদের মাথার আঘাত পাওয়ার ঝুঁকি ৪২% এবং মৃত্যুর ঝুঁকি ৩৯% কমিয়ে দেয়। এই পরিসংখ্যান মোদি সরকারের এই নতুন বিধিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
নিতিন গড়করী এই বিষয়ে জানিয়েছেন যে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক রাস্তার নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে এবং ২০২৪ সালের শেষের মধ্যে রাস্তা দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার কমানোর লক্ষ্য অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। তিনি বলেছেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো রাস্তায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা। হেলমেট ব্যবহার একটি সাধারণ কিন্তু জীবন বাঁচানোর অস্ত্র।”
চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনা
যদিও এই নতুন বিধি স্বাগত জানানোর মতো, তবুও এর সফলতার উপর প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে মনে করছেন যে, হেলমেট কিনে দেওয়া বা বাধ্যতামূলক করা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো এর ব্যবহার নিশ্চিত করা। ভারতের গ্রামীণ এলাকায় এবং কিছু নগরে এখনো হেলমেট ব্যবহারের প্রতি উদাসীনতা দেখা যায়। সামাজিক মিডিয়ায় ব্যবহারকারীরা প্রশ্ন তুলেছেন যে, কীভাবে এই বিধি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হবে এবং কারা এর নিরীক্ষণ করবে।
অন্যদিকে, রাস্তার অবস্থা নিয়ে সমালোচনা বেশি শোনা যাচ্ছে। অনেকে মনে করছেন যে, পথের গর্ত ও দুর্গত অবস্থা দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ। এই প্রসঙ্গে একজন ব্যবহারকারী সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, “হেলমেট দিয়ে দিলে নিরাপত্তা বাড়বে না যদি রাস্তা মেরামত না হয়।” তবে, সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, রাস্তা উন্নয়নের কাজও অগ্রগতিতে চলছে এবং এই দুটি পদক্ষেপ একসঙ্গে কার্যকর হলে ফলাফল ভালো হবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এই নতুন বিধি চালু হওয়ার পর সরকার জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রচারণা শুরু করবে। স্কুল, কলেজ এবং সামাজিক সংগঠনগুলোর মাধ্যমে হেলমেট ব্যবহারের গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হবে। এছাড়া, ট্রাফিক পুলিশের পাহারাও বাড়ানো হবে যাতে এই বিধি সঠিকভাবে পালন হয়।
এই পদক্ষেপের সাফল্য নির্ভর করছে জনগণের সহযোগিতা ও সচেতনতার উপর। যদি চালক ও প্যাসেঞ্জার উভয়েই হেলমেট ব্যবহারের অভ্যাস গ্রহণ করে, তবে ভারতের রাস্তা কিছুটা নিরাপদ হতে পারে। মোদি সরকারের এই উদ্যোগটি একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের শুরু হতে পারে, তবে এর সফলতা নির্ভর করছে সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টার উপর।