মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইজরায়েলের (Iran-Israel War) মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। একাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর আশঙ্কা আরও গভীর হয়েছে যে, এই সংঘর্ষ যে-কোনও সময় পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। এই যুদ্ধে ভারত সরাসরি না জড়ালেও, এর প্রভাব ভারতের অর্থনীতির উপর বিপজ্জনকভাবে পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধ হলে তেলের দাম হু-হু করে বেড়ে যাবে, যার পরিণতি প্রত্যক্ষভাবে ভারতের ঘরে ঘরে টের পাওয়া যাবে।
ভারতের সঙ্গে ইরান ও ইজরায়েলের বাণিজ্যিক সম্পর্ক
ভারত ইরান ও ইজরায়েল—উভয় দেশের সঙ্গেই নানা বাণিজ্যিক লেনদেন চালিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলে এই দুই পক্ষের সঙ্গে বাণিজ্যে ঘাটতি আসতে পারে, যা ভারতের সরবরাহ শৃঙ্খল ও মূল্যবৃদ্ধির উপর প্রভাব ফেলবে।
ভারত ইরান থেকে কী কী আমদানি করে?
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পরে ভারত ইরান থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি বন্ধ করে দিলেও, এখনও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পণ্য ভারত ইরান থেকে আমদানি করে থাকে, যেমন:
এলপিজি ও এলএনজি (গৃহস্থালী ও শিল্পে ব্যবহৃত)
খেজুর, পেস্তা, কাঠবাদাম ও জাফরান
উদ্ভিদজাত গাম, রেজিন, ল্যাকার দ্রব্য
হাতে তৈরি কার্পেট ও হস্তশিল্প
মিথানল, বিটুমেন, রাসায়নিক পদার্থ
নুন, চুন, পাথর, কাদামাটি, সিমেন্ট
ভারত ইরানকে কী রফতানি করে?
ভারতের রফতানি তালিকাও বেশ বড়:
বাসমতী চাল – ২০২৪-২৫ সালে ইরান ৮.৫৫ লক্ষ মেট্রিক টন চাল কিনেছে
চা, চিনি, ফলমূল
ওষুধ ও ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য
বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ
কৃত্রিম গয়না, রাবারজাত পণ্য, প্রক্রিয়াজাত খনিজ পদার্থ
যুদ্ধ হলে ভারতের উপর কী প্রভাব পড়বে?
তেলের দাম বৃদ্ধি: ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ হলে, বিশ্ববাজারে ক্রুড অয়েল বা অপরিশোধিত তেলের দাম মারাত্মকভাবে বেড়ে যেতে পারে। কারণ, এই অঞ্চলটি বিশ্ব জ্বালানি সরবরাহের কেন্দ্র।
জ্বালানির দাম বৃদ্ধির চেইন রিঅ্যাকশন: পেট্রোল ও ডিজেলের দাম বাড়লে, পরিবহণ খরচ বাড়ে। তার প্রভাব পড়ে শাকসবজি, মুদিখানা, ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের উপর।
মুদ্রাস্ফীতি ও ঘাটতি: দাম বাড়ার পাশাপাশি অনেক পণ্যের সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে। এর ফলে দেশজুড়ে মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঘাটতির সমস্যাও দেখা দেবে।
বাণিজ্য ঘাটতি: যুদ্ধ পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে, ইরান ও ইজরায়েলের সঙ্গে থাকা বাণিজ্যিক লেনদেন থমকে যেতে পারে, যার প্রভাব ভারতীয় রপ্তানিকারকদের উপর পড়বে। যুদ্ধ যতই দূরে হোক, ভারতের ঘরে ঘরে এর প্রভাব পড়তে বাধ্য। আন্তর্জাতিক তেল বাজার অস্থির হলে, ভারতের মতো তেল-নির্ভর দেশ বিপাকে পড়বে। সরকারকে এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় আগেভাগেই বিকল্প জ্বালানি উৎস এবং অন্তর্জাতিক কূটনীতি জোরদার করতে হবে।