ভারতের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (SBI) তাদের গ্লোবাল মার্কেট ইউনিট কলকাতা থেকে মুম্বইয়ে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর সেই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করেই সৃষ্টি হয়েছে তীব্র বিতর্ক ও উদ্বেগ। নাগরিকদের একটি মঞ্চ ‘দেশ বাঁচাও, ব্যাঙ্ক বাঁচাও’ এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। তাদের দাবি, এর ফলে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আয় কমপক্ষে ২৫ কোটি টাকা জিএসটি বাবদ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এই নাগরিক মঞ্চের তরফে বলা হয়েছে, গ্লোবাল মার্কেট ইউনিটের কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে একাধিক ব্যাঙ্কিং কার্যকলাপ। এই ইউনিট এবং তার অধীনে থাকা অন্যান্য শাখা থেকে যে রাজস্ব রাজ্য সরকারের ভাঁড়ারে ঢোকে, তার একটা বড় অংশ আসে জিএসটি বাবদ। চলতি বছরে অন্তত ২৫ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের সম্ভাবনা থাকলেও, ইউনিট মুম্বইয়ে স্থানান্তরের ফলে সেই সম্ভাবনা আর থাকবে না।
এই সিদ্ধান্তকে ‘স্বৈরাচারী’ এবং ‘অস্বচ্ছ’ আখ্যা দিয়েছে নাগরিক মঞ্চ। যৌথ আহ্বায়ক বিশ্বরঞ্জন রায় এবং সৌম্য দত্ত এক বিবৃতিতে জানান, “এটি শুধুমাত্র প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে রাজ্যের অর্থনৈতিক স্বার্থ, ইতিহাস এবং কর্মসংস্থান।”
তাঁরা আরও জানান, ইউনিটটি স্থানান্তরিত হলে কমপক্ষে ৭০ জন চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী চাকরি হারাতে পারেন। এই কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরেই কলকাতা ইউনিটে কর্মরত। ইউনিট সরানোর ফলে কর্মসংস্থানের দিক থেকেও তৈরি হবে বড় সংকট।
এসবিআই-এর কর্পোরেট সেন্টারের পক্ষ থেকে ১১ জুন একটি চিঠি প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, “ব্যবসায়িক ও প্রশাসনিক চাহিদার ভিত্তিতে শাখা খোলা, বন্ধ বা স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়মিতভাবে নেওয়া হয়। এটি একটি চলমান অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার অঙ্গ।”
তবে এই ব্যাখ্যা ‘নিতান্তই আমলাতান্ত্রিক’ বলে দাবি করেছে ‘দেশ বাঁচাও, ব্যাঙ্ক বাঁচাও’ মঞ্চ। তাদের বক্তব্য, “এটি কোনও যুক্তিসঙ্গত উত্তর নয়। কারণ, ২০০৮ সালে এসবিআই এবং কর্মী সংগঠনের মধ্যে একটি লিখিত চুক্তি হয়েছিল যেখানে স্পষ্টভাবে বলা ছিল যে, গ্লোবাল মার্কেট ইউনিট কলকাতা থেকেই পরিচালিত হবে। ব্যাঙ্ক এখন সেই চুক্তিকে অস্বীকার করছে।”
এছাড়াও, ইউনিটটি দীর্ঘদিন ধরে কলকাতায় থাকার ফলে এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে বহু আইনি এবং ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা। ইউনিটটি স্থানান্তরিত হলে তার বাস্তবিক এবং আর্থিক প্রভাব পড়বে শুধু রাজ্যের উপর নয়, দেশের ব্যাঙ্কিং কাঠামোর উপরও।
এই পরিস্থিতিতে মঞ্চটি প্রশাসনিক সংস্কার এবং ব্যাঙ্কিং অভিযোগ দপ্তরের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে। তারা আশা করছে, সংশ্লিষ্ট দপ্তর বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য এসবিআই কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেবে।
কলকাতা থেকে মুম্বইয়ে এসবিআইয়ের গ্লোবাল মার্কেট ইউনিট সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘিরে তৈরি হয়েছে প্রশাসনিক, আর্থিক এবং মানবিক বিতর্ক। পশ্চিমবঙ্গের রাজস্ব ক্ষতি ও কর্মসংস্থান সংকটের আশঙ্কায় যে প্রশ্ন উঠেছে, তার জবাব দিতে বাধ্য হবে দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক।