পুরস্কার মূল্য ১০ কোটি! বড় প্রতিযোগিতার ঘোষণা ভারত সরকারের

ভারত সরকার একটি অভূতপূর্ব উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসছে, যা দেশের আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানের দিকে আশার আলো ফেলতে পারে। গতকাল, ১৯…

India Announces ₹10 Crore Bhagwan Birsa Munda Prize for Sickle Cell Disease Drug Development

ভারত সরকার একটি অভূতপূর্ব উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসছে, যা দেশের আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানের দিকে আশার আলো ফেলতে পারে। গতকাল, ১৯ জুন কেন্দ্রীয় আদিবাসী কার্য মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রমন্ত্রী দুর্গাদাস উইকে একটি বড় ঘোষণা করেন। তিনি জানিয়েছেন যে সরকার সিকল সেল রোগ (Sickle Cell Disease) চিকিৎসার জন্য একটি নতুন ওষুধ উন্নয়নের জন্য ১০ কোটি টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছে। এই পুরস্কারটির নাম দেওয়া হয়েছে “ভগবান বিরসা মুন্ডা পুরস্কার”। এই প্রতিযোগিতায় এআইআইএমএস-দিল্লির সঙ্গে সহযোগিতা করা হবে, যিনি সর্বোত্তম ওষুধ প্রস্তাবটি নির্বাচন করবেন।

সিকল সেল রোগ একটি জিনগত রক্তের ব্যাধি, যা প্রধানত দেশের আদিবাসী সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করে। এই রোগে রক্তে থাকা হিমোগ্লোবিনের কোষগুলো অস্বাভাবিক আকৃতি গ্রহণ করে, যা রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে এবং জীবনের জন্য গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করে। ভারতের আদিবাসী অঞ্চলে এই রোগের প্রকোপ ১০% থেকে ৪০% পর্যন্ত রয়েছে, যা ২০১৬ সালের আইসিএমআর (ICMR) গবেষণার মতে প্রকাশ পেয়েছে। বর্তমানে এই রোগের জন্য শুধুমাত্র হাইড্রক্সিইউরিয়া নামক ওষুধটি ব্যবহার করা হয়, তবে গর্ভাবস্থা বা অন্যান্য জটিল রোগের ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা সীমিত। তাই একটি নতুন ওষুধের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে।

   

এই প্রতিযোগিতাটি জাতীয় সিকল সেল এনিমিয়া উচ্ছেদ মিশনের (National Sickle Cell Anaemia Elimination Mission) অংশ হিসেবে গড়ে উঠছে, যা ২০২৩ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কর্তৃক চালু করা হয়েছিল। এই মিশনের লক্ষ্য ২০৪৭ সালের মধ্যে এই রোগটি সম্পূর্ণ নির্মূল করা। এর অধীনে ইতোমধ্যে ৫.৭ কোটি মানুষের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে, বিশেষ করে ৪০ বছরের কম বয়স্কদের মধ্যে। এই নতুন উদ্যোগটি সেই লক্ষ্যকে আরও সুদৃঢ় করবে।

তবে এই ১০ কোটি টাকার পুরস্কারটি যথেষ্ট কিনা, তা নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। নতুন ওষুধ উন্নয়নের জন্য সাধারণত ১ থেকে ২ বিলিয়ন ডলার (করমর্দ ৮,৩০০ কোটি থেকে ১৬,৬০০ কোটি টাকা) ব্যয় হয়, যা ২০২১ সালের জার্নাল অফ দ্য আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের একটি গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। তাই অনেকে মনে করছেন যে এই পুরস্কারটি কেবল একটি প্রাথমিক উৎসাহ হতে পারে, কিন্তু গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য আরও বড় বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে।

Advertisements

এআইআইএমএস-দিল্লির সঙ্গে সহযোগিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই প্রতিষ্ঠানটি দেশের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসা গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এছাড়া, একটি নতুন আদিবাসী স্বাস্থ্য ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং আদিবাসী চিকিৎসা বিষয়ক একটি পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট কোর্স চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা আদিবাসী সম্প্রদায়ের স্বাস্থ্য সমস্যা নিরাকরণে সহায়ক হবে।

সামাজিক গবেষকরা এই উদ্যোগটিকে স্বাগত জানিয়েছেন, কিন্তু তাদের মতে, সাফল্যের জন্য শুধুমাত্র পুরস্কার নয়, স্বাস্থ্য সুবিধা এবং গবেষণার জন্য স্থায়ী বিনিয়োগ প্রয়োজন। ভারতের গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বর্তমানে জাতীয় জিডিপির মাত্র ০.৭% বিনিয়োগ হয়, যা বিশ্ব গড় ২.৫% এর তুলনায় কম। তাই এই ক্ষেত্রে আরও বড় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

সামগ্রিকভাবে, এই ১০ কোটি টাকার পুরস্কার এবং এআইআইএমএস-দিল্লির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবন উন্নত করতে পারে। তবে এটি সফল হলে সরকারের দৃষ্টি এবং বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ানোর প্রয়োজন হবে।