Qatar WC: জয়ের আনন্দ ভুলে স্টেডিয়ামে সাফাই কাজ! জাপানিরা মনে হয় আবেগহীন

সুজানা ইব্রাহিম মোহনা, দোহা সিটি: ‘জয় এশিয়া’- এমনই বলতে ইচ্ছে করছে। দোহা (Doha City) শহর থেকে একসাথে কলকাতা ও ঢাকায় বিশ্বকাপ খেলার (Qatar WC) সংবাদ…

সুজানা ইব্রাহিম মোহনা, দোহা সিটি: ‘জয় এশিয়া’- এমনই বলতে ইচ্ছে করছে। দোহা (Doha City) শহর থেকে একসাথে কলকাতা ও ঢাকায় বিশ্বকাপ খেলার (Qatar WC) সংবাদ পাঠাচ্ছি, আর দেখছি একটা অভাবনীয় দৃশ্য- জাপানিরা জয়ের আনন্দ ফেলে রেখে খলিফা স্টেডিয়াম পরিচ্ছন্ন করছেন।  চারবারের বিশ্বজয়ী দুর্ধষ্য জার্মানি (Germany)  পরাজিত নীল সামুরাই জাপানের (Japan) কাছে। এই ঐতিহাসিক জয়ের পরও ভবলেশহীন জাপানি দর্শকরা। তারা নিমগ্ন গ্যালারি সাফাই অভিযানে। এরা কি আবেগহীন মানুষ?

বু়ধবার সকালে যখন প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলাম তখনও এই জাপানিদের সাফাই অভিযানের কথা লিখেছি। আর লিখেছিলাম বিশ্বের অন্যতম সেরা দল জার্মানি হলেও তার সমর্থন তেমন নেই। যতটুকু নিজ দেশের দর্শকরা ততটুকুই তাদের সমর্থন। তবে বিরাট সংখ্যায় জার্মানরা এসেছেন কাতারে (Qatar)। আর জাপানের কাছে পরাজয়ের পর ভগ্ন মনে ফিরেছেন যে যার সাময়িক আস্তানায়।

 

কিন্তু জাপানিরা? তারা ফেরবার আগে খলিফা স্টেডিয়ামের সাফাই করলেন। যেমনটা গত কয়েকদিন ধরে দেখা যাচ্ছে, আজও তেমন হলো। এই দৃশ্য দেখে ফের বলতে হয় খেলার আগে যেমন দিল জিতেছেন জাপান সমর্থকরা, মাঠে জয়ের পর তারা সেই ‘দিল’ জেতার ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেন।

মঙ্গলে সৌদি আরবের ঐতিহাসিক জয়, আর্জেন্টিনার পরাজয় হয় ২-১ গোলের ব্যবধানে। দ্বিতীয়ার্ধে জয়ী হয়েছে আরবরা। একইভাবে বুধবার ঐতিহাসিক জয় জাপানের, পরাজয় জার্মানির মধ্যেও ২-১ গোলের ব্যবধান। সেই দ্বিতীয়ার্ধে জয়ী জাপান। পরপর দুদিন এশিয়ার গর্জনে কেঁপে গেল দক্ষিণ আমেরিকা ও ইউরোপ।

এমনিতে কাতারে গিজগিজ করছেন প্রবাসী বাংলাদেশি, ভারতীয় ও পাকিস্তানিরা। ঠিক কতজন কতজন জাপানি আছেন হাতে গুনে বলে দেওয়া যাবে। দিনরাত এই জাপানিরা নিজেদের ইচ্ছায় সাফাই অভিযান করছেন।

সকালে এক ব্যক্তিকে তাঁর দেশ জাপানের পতাকা সহ দেখে মনে হয়েছিল এদের কি খেয়ে দেয়ে কোনও কাজ নেই, খামোকা বেগার খেটে চলেছে। ছোট্টখাট্টো মোটাসোটা লোকটা ঝাঁটা আর প্লাস্টিকের বড় থলি নিয়ে ময়লা ফেলার জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। বিশ্বকাপ (Qatar WC) উপলক্ষে এমন জাপানিদের গত কয়েকদিন ধরেই দেখছি। ভাঙা ভাঙা ইংরাজিতে তিনি বললেন, আমরা এমন করতে ভালোবাসি। ময়লা থাকা ভালো না।

বোঝো কান্ড! জাপানিরা বিশ্বকাপের আসরে চলে এসেছে খেলা দেখতে নয়, নিজের দেশের হয় তারস্বরে গলা ফাটাতেও নয়। এরা এসেছে ঝাঁটা মারতে। বুধবার জাপান-জার্মান ফুটবল যুদ্ধের আগে যেমন নীরবে নিজেদের ভালোবাসার কাজ অর্থাৎ ময়লা সরিয়েছিলেন জাপানিরা। জয়ের পর সেটাই করে গেলেন।

বিশ্বে অন্যতম পরিচ্ছন্ন দেশ জাপান। তাদের রকম সকমই আলাদা। ময়লা সরানো তাদের ভালোলাগা-ভালোবাসা।স্টেডিয়ামে জাপানি দর্শকরা যেমন খেলা দেখছেন, তেমনই অন্যান্য দেশের দর্শকদের ফেলে যাওয়া বিস্তর ব্যাগ, থলি, পানির বোতল (জলের বোতল) তুলে নিচ্ছেন ভালোবেসে। পরিচ্ছন্নতা তাদের প্রাথমিক কর্তব্য। কাতার এমনিতে পরিচ্ছন্ন দেশ। তবে বিশ্বকাপ উপলক্ষে আসা বিভিন্ন দেশের বিপুল দর্শকদের চাপে নাজেহাল পরিস্থিতি।

এই জাপানি সমর্থকরা যেভাবে স্টেডিয়াম পরিচ্ছন করছেন তাতে স্টেডিয়াম সাফাইকর্মীদের কাজ বহু কমে গেছে। একেকজন জাপানি কমপক্ষে একশ দর্শকাসন ঝাঁটা দিয়ে সাফাই করছেন। কাতার তো কোন ছার, সারা দুনিয়ার দিল জিতে নিয়েছেন জাপানিরা।

মঙ্গলবারের রাতে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে পুরো আরব দুনিয়ায় উল্লাস হয়েছিল। বুধবার তাই কাতার সহ পুরো এশিয়ার নজর ছিল জাপানের উপর। চাপ কাটিয়ে তারা জয় পেল।বিশ্বকাপের উন্মাদনার মাঝেও নীরব জাপানিরা। দেশের হয়ে গলা ফাটানোর বদলে স্টেডিয়ামে স্বেচ্ছাশ্রম দেওয়া তাদের ভালোলাগার কাজ মানে সাফাই করতে তারা বেশি আগ্রহী।