বাঙালি এক এমন জাতি যাদের পাত পেরে খেতে যেমন ভালোলাগে তেমনি ভালোলাগে দেশ বিদেশ ঘুরতে। কোথাও না হোক পাহাড় হলে দার্জিলিং, সমুদ্র হলে দীঘা।মন খারাপ হলেই কোলাহল থেকে দূরে অজানা অচেনা জায়গায় চলে যেতে ইচ্ছা হয় সবার । যেখানে কেউ খুঁজে পাবে না , থাকা যাবে নিরিবিলিতে একান্তে। তবে এসবই তো হাতের নাগালে।
পৃথিবীর এমন অনেক স্থান আছে যা সম্পর্কে জানলে বিস্মিত হবেন আপনি। চলুন আজ জেনে নেওয়া যাক এমনই কয়েকটি জায়গার নাম, যা কিনা আপনার স্থায়ী ঠিকানার থেকে বহু দূরে। সেই অদ্ভুত বিস্ময়কর জায়গা গুলির মধ্যে প্রথমে যে স্থানটির নাম উঠে আসে তা হল-
১) ডেড সি বা মৃত সাগর:- ‘ মৃত সাগর’ নামটি শুনলেই হয়তো বুকটা যেন কেমন কেঁপে ওঠে। এই সাগরটি অবস্থিত সুদূর ইসরাইলেয়ে। ইসরাইলের এই সাগরটির এমন নাম হওয়ার পেছনে রয়েছে গভীর কারণ, তা হল ‘ডেড সি’ আসলে কোন সাগর নয় লবণাক্ত জলের হ্রদ। এই হ্রদের জলে লবণাক্তের পরিমাণ ৩৪.২ শতাংশ, যা সাধারণ সমুদ্রের জলের চেয়ে ৮.৬ গুন বেশি। এই হ্রদের জলে অত্যাধিক মাত্রায় লবণ হওয়ার কারণে বিশেষ ধরনের কয়েক প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া ছাড়া আর কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব নেই। আর এই হ্রদে মাছ না থাকার কারণে কোন পাখিদের আনাগোনাও দেখতে পাওয়া যায় না। কার্যত এই সকল কারণে সাগর মৃত হওয়াতে মানুষের ভ্রমণের জন্য যেন স্বর্গ। বিশেষত রোগীদের বায়ু পরিবর্তনের জন্য চমৎকার একটি জায়গা।
২) পামুক্কেল:- এই স্থানটি তুরস্কে অবস্থিত। নামটা একটু অদ্ভুত হলেও এটি হলো একটি গরম জলের ঝর্ণা। দক্ষিণ-পশ্চিম তুরস্কের মেন্দেরেজ নদীর উপত্যকায় অবস্থিত পামুক্কেল তুরস্ক সহ সমগ্র পৃথিবীর অন্যতম সেরা আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। তুর্কি ভাষায় ‘পামুক্কেল’ শব্দটির অর্থ ‘তুলোর প্রাসাদ’। এই ঝর্ণার জল সবসময় গরম থাকার কারণে প্রাচীন কাল থেকেই এই ঝর্ণার জনপ্রিয়তা রয়েছে। ঠিক কিভাবে গরম জল ঝর্নার আকারে আসে এটাও একটা অবাক করা বিষয় সকলের কাছে। আরামদায় এই জলে বহু পর্যটনরা খানিক নিজেদের লোভ সামলাতে না পেরে, স্নানে নেমে পড়েন। এক কথায় বলা যেতে পারে প্রকৃতি ও মানুষের তৈরি এই অদ্ভুত ও বিস্ময়কর জায়গা দেখতে এখানে ভিড় করেন পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষ।
৩) জায়ান্টাস কজওয়ে:- আয়ারল্যান্ডের অভূতপূর্ব এই স্থানটি ইউনেস্কোর বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় নিজের নাম তালিকাভুক্ত করেছে। এটি পৃথিবীর অন্যতম বিস্ময়কর দর্শনীয় স্থান, যা কিনা উত্তর আয়ারল্যান্ডের উত্তর তীরে অবস্থিত। এটি প্রায় চল্লিশ হাজার হেক্টগোনাল পাথরের কলামে তৈরী একটি প্রাকৃতিক ও প্রাচীন গুহা। এই শিলা বা পাথরগুলো প্রাচীন আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত দ্বারা তৈরি হয়েছিল। এই শিলাগুলোর আশ্চর্যকর ব্যাপার হল এগুলি বেশিরভাগ ষড়ভূজীও। এই ধরনের আশ্চর্যকর কারণ থাকার কারণে পর্যটকদের সারা বছর ধরে আনাগোনা লেগেই থাকে এই স্থানে। এই স্থানটিতে প্রাকৃতিকভাবে বিস্ময়কর ইউনাইটেড কিংডমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং সৌন্দর্যের দিক থেকে এটি বিশ্বের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ভ্রমণের স্থান।
৪) ডেনসিয়া ল্যান্ডস্কেপ:- ডেনসিয়া ল্যান্ডস্কেপ হলো একটি পাহাড়, যা কিনা অবস্থিত চীনের গানসুতে ঝাংয়ে ন্যাশনাল জিওপার্কে অবস্থিত। চীনের এই পাহাড়টি দেখতে বেশ রঙিন এবং নানা ধরনের স্তর বিশিষ্ট। এই পাহাড়ের পাথরগুলো ২৪ মিলিয়ন বছর ধরে জমা পড়ে আছে বলে, পাহাড়গুলো এমন রঙিন। বায়ুজনিত কারণ, বৃষ্টি এবং সময়ের সাথে সাথে টেকটোনিক প্লেট গুলির স্থানান্তরের ফলে এখানকার পাহাড়গুলি এমন রূপ ধারণ করেছে। এটি বিশ্বের অন্যতম বিস্ময়কর স্থান হিসেবে পরিচিত। রঙিন পাহাড় দেখার জন্য সারা বছরই স্থানে ভিড় লেগেই থাকে পর্যটনদের।