Special Report: ফৈজাবাদ জেল থেকে লেখা বিপ্লবীর চিঠি কাঁপিয়ে দেয় বুক

Special Report: ১৯ শে ডিসেম্বর ১৯২৭। ফৈজাবাদ জেল থেকে এক মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী তার শেষ চিঠিতে লিখলেন, “I take pride in the fact that I…

Ashfaqulla Khan

Special Report: ১৯ শে ডিসেম্বর ১৯২৭। ফৈজাবাদ জেল থেকে এক মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী তার শেষ চিঠিতে লিখলেন, “I take pride in the fact that I will be the first and foremost Muslim to embrace death on the gallows for the freedom of my country”. তিনি আসফাকুল্লা খান (Ashfaqulla Khan)।

২২ অক্টোবর ১৯০০ সালে উত্তরপ্রদেশের শাজাহানপুরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলমান পরিবারে জন্ম নেন আসফাক উল্লা খান । জন্মসূত্রে পাঠান এই পরিবারের অনেকেই শিক্ষিত এবং পদস্থ রাজ কর্মচারী ছিলেন । চার ভাইয়ের মধ্যে কনিষ্ঠ এই ভাইটির ছোট থেকেই উর্দু কবিতা রচনা করার শখ , হসরত ছদ্মনামে বেশ কিছু কবিতা এর মধ্যেই লিখে ফেলেছেন। কথায় কথায় দাদার কাছে শুনলো তার সহপাঠী রামপ্রসাদের কথা, সেও বিসমিল ছদ্মনামে উর্দু কবিতা লেখে।

অসহযোগ আন্দোলনের সময় একদিন শাজাহানপুরের এক জনসভায় সে দেখা করে বিসমিলের সাথে । নিজের পরিচয় দেবার পর তাকে শোনালো নিজের লেখা কবিতা । মুগ্ধ বিসমিল তাকে প্রশংসার সাথে সাথে দীক্ষিত করলো স্বাধীনতার মন্ত্রে । তখন সে বাইশ বছরের যুবক । একজন পাক্কা আর্য সমাজীর সাথে আরেকজন কট্টর মুসলমানের এই বন্ধুত্ব, স্বাধীনতার লক্ষে আমৃত্যু ছিল অটুট!

Ashfaqulla Khan

এলো ১৯২২ সাল । উত্তর প্রদেশের চৌরিচৌরায় অসহযোগ আন্দোলনকারীরা থানা জ্বালিয়ে দিয়ে কুড়িজন পুলিশ কে পুড়িয়ে মারলো । প্রতিবাদে গান্ধীজী আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিলেন। এতে আরও বহু যুবকের মতন হতাশ হলেন আশফাক । ততদিনে তারা বুঝে গেছেন কাকুতি মিনতি করে বৃটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়া যাবেনা । সশস্ত্র সংগ্রামই হলো একমাত্র পথ, কিন্ত এরজন্য চাই প্রচুর টাকা ! বন্ধু রামপ্রসাদের সাথে পরামর্শ করে পরিকল্পনামতো আরও আট সঙ্গীর সাথে ৯ই আগষ্ট ১৯২৫ সালে কাকোরি স্টেশনে লুটে নিলেন ইংরেজদের প্রাপ্য খাজনা ।

স্তম্ভিত বৃটিশ প্রশাসন ‘Scotland Yard’কে তদন্তের ভার দিল । একে একে সবাই ধরা পড়লেও আসফাক লুকিয়ে পালিয়ে আসেন বিহার । সেখানে একটা কারখানায় দশমাস কাজ করার পর আসেন দিল্লী, উদ্দেশ্য বিদেশে গিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের লক্ষে লালা হর দয়ালের সাহায্য নেওয়া । পাসপোর্টের জন্য পরিচিত এক পাঠান বন্ধুর সাহায্য চাইলেন কিন্ত সেই বিশ্বাসঘাতক পুলিশে খবর দিল ।

বিচারের জন্য তাকে আনা হয় ফৈজাবাদ জেলে । কারা কর্তৃপক্ষ বিসমিলের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব ভাঙ্গার জন্য সাম্প্রদায়িক তাস খেললে জবাব দেন, “Jailor saab, if you are right then I am also quite sure that a Hindu India will be much better than your British India to whom you are serving like a servant.” বিচারে বিসমিল সহ তাঁদের চারজনের ফাঁসির আদেশ হয় । জেলের দিন গুলোতে উনি পাঁচবার নমাজ পাঠ সহ সম্পূর্ণ সাত্বিক জীবন যাপন করতেন। ১৯২৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর তাঁর ফাঁসি হয় এবং ঐদিনেই মজঃফরপুর জেলে বিসমিলকেও ফাঁসি দেওয়া হয় ।

নির্জন সেলে বসে লেখা শেষ কবিতাতেও দেশমাতৃকার সাথে সাথে এসেছে বন্ধুও। ‘যাউঙ্গা খালি হাত মগর ইয়ে দর্দ সাথ হি যায়েগা , জানে কিস দিন হিন্দুস্থান আজাদ ওয়াতন কহলায়েগা ? বিসমিল হিন্দু হ্যায় কহতে ফির আউঙ্গা, ফির আউঙ্গা, ফির আকর কে ইয়ে ভারত মা তুঝকো আজাদ করাউঙ্গা । জী কহতা হ্যায় ম্যায় ভি কহ দুঁ পর মজহব সে বঁধ জাতা হুঁ, ম্যায় মুসলমান হুঁ পুনরজনম কি বাত নহি কর পাতা হুঁ । এ খুদা অগর মিল গ্যয়া কঁহি আপনি ঝোলি ফ্যায়লা দুঙ্গা, আওর জন্নত কে বদলে উসসে এক পুনরজনম হি মাগুগাঁ !’
এই জন্যই তিনি দেশপ্রেমিক।