Exclusive: কেন বোস রূপে আর প্রকাশ্যে আসেননি সুভাষ? জানতেন এই মহিয়সী

বিশেষ প্রতিবেদন: গুমনামি কী নেতাজী ? এ নিয়ে হাজারও প্রশ্ন তর্কবিতর্ক রয়েছে থাকবেও। সুরজিৎ দাশগুপ্ত, বিজয় নাগ, পবিত্র মোহন রায়, অতুল সেন, সুনীল গুপ্ত এরা…

Leela nag roy only knows why subhas bose not came in front of public

বিশেষ প্রতিবেদন: গুমনামি কী নেতাজী ? এ নিয়ে হাজারও প্রশ্ন তর্কবিতর্ক রয়েছে থাকবেও। সুরজিৎ দাশগুপ্ত, বিজয় নাগ, পবিত্র মোহন রায়, অতুল সেন, সুনীল গুপ্ত এরা লক্ষ বার বলেছেন ,প্রমাণ দিয়েছেন যে গুমনামিই নেতাজী। তাঁর মৃত্যুর পর ফৈজাবাদের ঘর থেকে বহু চিঠির মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল এই দেশপ্রেমী বিপ্লবী মহিলার চিঠিও। তাঁকেই তিনি জানিয়েছিলেন কেন তিনি আর নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস (Subhas Bose) রূপে আর ফিরতে চান না। তিনি লীলা নাগ রায় (Leela Nag Roy)।

ষাটের দশকের লেখা এক চিঠি ও তার উত্তরে গুমনামি বাবার উত্তর সেই তথ্য দিচ্ছে। উত্তর প্রদেশে ফৈজাবাদের গুমনামী বাবার মৃত্যুর পর, তার সংগ্রহ থেকে ১৯৮৫ সালে বেশ কয়েকটি চিঠি উদ্ধার হয়। অন্যতম চিঠির প্রেরক লীলা নাগ রায়। এমনই এক চিঠিতে লীলা নাগ রায় গুমনামীকে বলছেন , “আপনার ব্যক্তিগত প্রয়োজন আমাকে জানাবেন। দাবী করছি আপনার ডেভোটেড সিস্টার হিসাবে। আমাদের কিছু করতে দিন। দেশকে আমরাও তো কিছু সামান্য ভালোবাসি। যিনি সাধ্যের অতীত গিয়ে কাজ করলেন ও করছেন তার জন্য কিছু করার আনন্দ থেকে আমাদের বঞ্চিত করার মতো নিষ্ঠুর হবেন না।” এর উত্তর গুমনামি যে উত্তর দিয়েছিলেন তার পুরোটা বোঝা যায় না। কিন্তু একটি। লাইনই স্পষ্ট করে দেয় কী পরিমাণ অভিমানের পাহাড় ওই মানুষটার মধ্যে জমেছিল, আর তা থেকেই তিনি লেখেন “আমি পাথরের মতো হয়ে গিয়েছি। আমাকে তোমরা ছেড়ে।দাও লী”। আর ঠিক এই কারণেই তিনি আর সুভাষ রূপে ফিরে আসেননি।

Leela nag roy only knows why subhas bose not came in front of public

১৯২২ থেকে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত নেতাজীর সংগ্রামের অন্যতম সহযোগী ছিলেন এই লীলা রায়। ১৯৬৩ সালে তিনি গুমনামি বাবার সঙ্গে দেখা করেন। ১৯৭০ সালের ১১ই জুন এই মহীয়সীর পরলোক গমনের আগে পর্যন্ত তিনি নিয়মিত ভগবানজীকে টাকা ও নেতাজীর পছন্দের জিনিসপত্র পাঠিয়ে গিয়েছেন । নেতাজী যেমন লীলা রায়কে ‘লী’ বলে ডাকতেন তেমনি ভগবানজী লীলা রায়কে যে সমস্ত চিঠি লিখেছেন তাতেও তাকে ‘লী’ বলেই উল্লেখ করেছেন । আজ সেই লী এর জন্মদিন ছিল। মহাত্মার জন্মদিনের আড়ালে ঢাকা পড়ে তাঁর জন্মদিবস। মেঘে ঢাকা তারা। তাই দিন শেষেই এই বিশেষ প্রতিবেদন।

১৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৫। তেরঙা পতাকায় মোড়া ভগবানজি বা গুমনামী বাবার দেহটি বের করে আনা হয় রাম ভবন থেকে। শবযাত্রী মাত্র ১৩ জন। বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ডা. আর পি মিশ্র, ডা. প্রিয়ব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, সরস্বতী দেবী শুক্লা আর রামকিশোর পান্ডা। সরযূ নদীর ধারে গুপ্তার ঘাটে হয় গুমনামি বাবা ওরফে ভগবানজির শেষকৃত্য। চিতায় আগুন লাগানো হতেই তাঁর পেয়ারের রামকিশোর কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, “যাঁকে শেষ বিদায় জানাতে ১৩ লাখ মানুষের উপস্থিত থাকার কথা তাঁর মৃত্যুর পর মাত্র ১৩ জন রয়েছি!”

Leela nag roy only knows why subhas bose not came in front of public

ফেরা যাক তিনি লীলা নাগ(রায়)-এ। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তিনিও এক সমোজ্জ্বল নক্ষত্র। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর খুব ঘনিষ্ঠ সহোযোগী এই বীরাঙ্গনা সিলেটের এক উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে ছিলেন। বাবা ছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট। চাইলে হয়তো জীবনটাকে অন্য ভাবে গড়তে পাড়তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার ডিগ্রীর প্রথম ছাত্রী এবং গ্র‍্যাজুয়েশনে ইংলিশে গোল্ড মেডেলিস্ট।

ছাত্রজীবনেই জড়িয়ে পড়েছিলেন সামাজিক আন্দোলনে। বিশেষত নারীদের জন্য সমাজ সংস্কারে, স্কুল চালু করায় ও তাদের স্বনির্ভরতার জন্য বিভিন্ন হাতের কাজ শেখানোর ও সেগুলো বিক্রির ব্যবস্থায়। সেই সময় দাঁড়িয়ে চালু করেন জয়শ্রী নামে শুধুমাত্র নারী লেখিকাদের জন্য পত্রিকা।

সামাজিক কাজের আড়ালে চালু করেন নারীদের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রস্তুত করার প্রস্তুতি। গোপনে চালু করেন নারী সশস্ত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র “দিপালী সংঘ”। সেই সংগঠন থেকেই উঠে আসেন প্রীতিলতা ওয়াদেদারদের মতন নারী স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িয়ে পরেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোসের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে। কংগ্রেসের সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়ে ৬ বছরের কারাদণ্ড হয় তাঁর। পরবর্তীতে নেতাজীর সাথেই তিনি ও তাঁর স্বামী অনিল চন্দ্র রায়, দুজনেই কংগ্রেস ত্যাগ করে যুক্ত হন ফরোয়ার্ড ব্লকের সাথে।

আবার ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে ১৯৪২ থেকে ১৯৪৬ এ কারাবাস হয়ে তাঁর। ১৯৪৬ এ মুক্তি পেয়ে কনস্টিটিউট এস্যাম্বলি অফ ইন্ডিয়াতে নির্বাচীতও হন তিনি। কিন্তু এর পরেই ভারত তথা বাংলার রাজনীতি অন্য দিকে মোড় নেয়। ভাতৃঘাতী দাঙ্গায় মেতে ওঠে ভারত। ভয়াবহ রূপ নেয় নোয়াখালী। যে নোয়াখালীতে সরোজিনী নাইডু পর্যন্ত গলায় সায়ানাইডের লকেট পড়ে ভিসিট করতে গিয়েছিলেন সেখানে তিনি মাটি কামড়ে পড়ে থেকে আর্ত-পীড়িতদের বাঁচানোর লড়াই চালান।

পরবর্তীতে ১৯৪৭ এ দেশ ভাগের পর চলে আসেন ভারতে আর ১৯৬০ এ নির্বাচিত হন ফরোয়ার্ড ব্লকের চেয়ারপার্সন। শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ১৯৭০। তার আগেই ফরোয়ার্ড ব্লকের রাজনীতির উপর শ্রদ্ধা হারিয়ে নিয়ে নিয়েছিলেন রাজনৈতিক সন্যাস।