Cafe de Luxe: প্রেম-রাজনীতির চর্চাকেন্দ্র ক্যাফেটারিয়াকে ঐতিহ্য বজায় রাখার সম্মান

“ক্যাফে ক্যাফে আমার প্রিয়ার ক্যাফে, কাঁপে কাঁপে আমার হিয়া কাঁপে”।  মহিনের ঘোড়াগুলির এই গানটি মনে পড়ে? সত্তর আশির দশক থেকে শুরু করে নব্বইয়ের মাঝ পর্যন্ত…

Cafe-de-luxe

“ক্যাফে ক্যাফে আমার প্রিয়ার ক্যাফে, কাঁপে কাঁপে আমার হিয়া কাঁপে”।  মহিনের ঘোড়াগুলির এই গানটি মনে পড়ে? সত্তর আশির দশক থেকে শুরু করে নব্বইয়ের মাঝ পর্যন্ত বহু প্রেমের শুরু হতো এই ক্যাফেগুলি (cafe )দিয়ে। গৌতম ভট্টাচার্য এমনি তো এমন গান লেখেননি। ওইসব ক্যাফেগুলির সূত্রপাত বেশিরভাগই ইংরেজ জমানার পরে।

পঞ্চাশের দশক থেকে এদের রমরমা বাড়তে থাকে। শহরের ঐতিহ্যের প্রমাণ ওই সব বহু ক্যাফেই হারিয়েছে কালের অতলে। অনেকেই আজও রেখেছে ঐতিহ্য। জায়গা করে নিয়েছে আজকের সিসিডি’রা। এমনই এক ঐতিহ্যবাহী ক্যাফেকে সম্মান জানাল পুরনো কলকাতার গল্প। তাঁদের সম্মান ঐতিহ্যের।

Cafe-de-luxe

কলকাতার হাজরা মোড়ের Cafe de Luxe’কে পিকেজি থেকে সম্মানিত করা হয়। ১৯৫২ সাল, অর্থাৎ স্বাধীনতার প্রায় ৫ বছর পরই শুরু হয়েছিল ওই ক্যাফেটেরিয়ার যাত্রা। ইতিমধ্যেই কলকাতার ক্লাব কালচারের ওপর নেমে এসেছিল বিপর্যয়, দেশ স্বাধীন হতে যাচ্ছে।

বিদেশীদের হাত ধরে স্ন্যাক্স আর আড্ডার ক্ষণিক বিনোদনের স্থান হিসেবে মহানগরীর বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছিল এই ক্যাফেগুলি। কিছু কিছু জায়গায় পানীয়র (বিদেশী মদ) ব্যবস্থাও ছিল। অনেকের ধারণা, শহরে বৃটিশ রাজত্ব সত্ত্বেও পর্তুগিজ ও ফরাসি প্রভাব থেকে কলকাতা কখনোই মুক্ত হতে পারেনি। মূলতঃ তাঁদের খাদ্য ও পানীয়র সাথে নিজেদের বিনোদনের এই জায়গাগুলোকে একটা অন্য মাত্রা এনে দিয়েছিল বৃটিশদের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা এই ক্যাফে কালচার। বিশেষকরে, শহরের ক্লাব ক্যাফে গুলোতে যে শেফ’রা ছিলেন তাঁরা বেশিরভাগই বৃটিশ নন।

কিছু কিছু ক্লাবে ভারতীয় শেফরাও এই স্ন্যাক্স তৈরিতে পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন। এবার, স্বাধীনতার আঁচে বড় ক্লাবগুলো ক্রমশঃ বন্ধ হয়ে যেতে থাকে, ইতিমধ্যে ভারতীয় অর্থাৎ কলকাতার অপেক্ষাকৃত শিক্ষিত ও কিছুটা পয়সাওয়ালা বাবুদের মুখে ক্যাফের খাবারের স্বাদ মুখে লেগেও গিয়েছিল। এই রকম এক অদ্ভুত পরিস্থিতির মধ্যে বড় ক্লাবগুলোর ক্যাফে একে একে বন্ধ হবার সঙ্গে সঙ্গেই কলকাতার অলিগলি-বড় রাস্তার ধারে গজিয়ে উঠতে থাকে অসংখ্য ক্যাফেটেরিয়া, আয়তনে ছোট, অথচ সেই বিদেশী স্বাদের খাবার নিয়ে। এটা করেছিলেন মূলতঃ ভারতীয় শেফ’রাই। নতুন করে ভারতীয়দের তৈরি ক্যাফে ব্যবসা শুর হ’ল।

শহরের বর্ধিষ্ণু, প্রাণচাঞ্চল, সংস্কৃতির কেন্দ্র গুলিকে কেন্দ্র করেই এই ছোট ছোট ক্যাফের অবস্থান। চা, কফি, ফিসফ্রাই, ফিস ফিঙ্গার, ব্রেইন চপ, ভেজিটেবল ও চিকেন কাটলেট, ফিস ও মটন চপ, ভেজিটেবল চপ, মাংসের সিঙ্গারা, এগ ডেভিল, চিকেন ও মটন স্ট্যু, মোগলাই পরোটা, স্যান্ডউইচ, ফিস ও চিকেন কবিরাজি, পুডিং আরও অন্যান্য খাবারের একটা আস্বাদ শহরবাসীর মধ্যে রয়ে যাওয়ার ফলে, ক্যাফেটেরিয়া গুলিকে স্বাধীনতার ঠিক পরে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি ব্যবসায়িক বিষয়ে অর্থ রোজগার করতে।

পিকেজি জানাচ্ছে, “সময়ের সাথে সাথে বনেদীবাড়ি, একান্নবর্তী পরিবার, বনেদীয়ানা এখন খন্ডবিখন্ড। অর্থনৈতিক পরিকাঠামো অনেক পাল্টে গেছে। মানুষের পারস্পরিক মেলামেশার ইচ্ছে গুলিও বস্ত ও আত্মকেন্দ্রিক। ছোট্ট ফ্ল্যাটের ৩-৪ জন প্রাণী, আর শপিং-মলের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বৃহৎ জায়গার চাকচিক্য ও হাতছানি থেকে নতুন প্রজন্মকে মানবিক ঐতিহ্য, সভ্যতার ঐতিহ্য, মহানগরীর ঐতিহ্য সম্পর্কে অবহিত করতে না পারার “আপেক্ষিক খেসারত” দিতে হচ্ছে আমাদের মতো সেই সব মানুষদের, যাঁরা একসময় সিনেমা দেখে, কলেজ পালিয়ে, নতুন প্রেমের সাক্ষাতে বা বিরহে, অথবা মনের মধ্যে বিপ্লবী চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে ঘন্টার পর ঘন্টা আলোচনার চিৎকারে সময় নষ্ট করেছিলাম কলকাতার এই ক্যাফে গুলিতে। তাদেরকেই আমরা সম্মান জানালাম”