অ্যাপেল সিডার ভিনিগার, সংক্ষেপে এ.সি.ভি. (ACV), ঘরোয়া চিকিৎসার অন্যতম জনপ্রিয় উপাদান হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রান্নার পাশাপাশি স্বাস্থ্যের নানা সমস্যার প্রাকৃতিক সমাধান হিসেবেও ব্যবহৃত এই ভিনিগার নিয়মিত গ্রহণ করলে শরীরের নানা উপকার হতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস জলেতে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে খেলে আদৌ কী পরিবর্তন আসে শরীরে (apple cider vinegar benefits)?
নিচে এক মাস ধরে নিয়মিত ACV জল খেলে যেসব শারীরিক পরিবর্তন দেখা যায়, তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা তুলে ধরা হল-
১. রক্তে শর্করার পরিমাণ কমায়
বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যাপেল সিডার ভিনিগার শরীরের ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমাতে সহায়তা করে, যার ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এমনকি যাঁরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নন, তাঁদের ক্ষেত্রেও ACV রক্তে সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে—যা বার্ধক্য ও বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়।
এছাড়া, গবেষণায় দেখা গেছে, ACV রক্তে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস করে—বিশেষত যাঁরা ডায়াবেটিস বা ডিসলিপিডেমিয়ায় (চর্বিজনিত সমস্যা) ভুগছেন।
২. ওজন কমাতে সাহায্য করে
রোজ সকালে হালকা গরম জলে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার খেলে ওজন কমার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ACV খাওয়ার পর দীর্ঘ সময় পেট ভরা ভাব থাকে, যার ফলে অতিরিক্ত খাওয়া কমে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি খাওয়ার পর ১২০ মিনিট পর্যন্ত ক্ষুধা দমন করে এবং পরবর্তী ৩ থেকে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অতিরিক্ত স্ন্যাক্স খাওয়ার প্রবণতাও কমিয়ে দেয়।
৩. হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হৃদরোগ। ACV খাওয়ার ফলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL), ট্রাইগ্লিসারাইড, এবং মোট কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যেতে পারে, এবং ভালো কোলেস্টেরলের (HDL) মাত্রা বাড়তে পারে, যা হৃদযন্ত্রের পক্ষে ইতিবাচক।
৪. ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে
প্রাকৃতিক অ্যাসিড হিসেবে ACV শুষ্ক ত্বক, একজিমার মতো সমস্যায় কার্যকর হতে পারে। জলের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে এটি শরীরের অভ্যন্তর থেকে ত্বকের পিএইচ ব্যালান্স ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং স্কিন ব্যারিয়ার মজবুত করে। তবে যাঁদের ত্বকে ইতিমধ্যেই ক্ষত আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার না করাই ভালো।
৫. ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু ধ্বংসে কার্যকর
ACV বহুদিন ধরেই প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিছু নির্দিষ্ট জীবাণু যেমন E. coli প্রতিরোধেও এটি কার্যকর। এটি অনেকেই ব্যবহার করেন পায়ের নখের ফাঙ্গাস, উকুন, কানের ইনফেকশন এবং আঁচিল নিরাময়ে। এমনকি খাবার সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও অ্যাপেল সিডার ভিনিগার ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে কার্যকর।
কীভাবে খাবেন এবং কোন মাত্রায় খাবেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যাপেল সিডার ভিনিগার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করার সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হল রান্নার মধ্যে ব্যবহার করা। যেমন: সালাড ড্রেসিং বা ঘরে তৈরি মেয়োনেজে মেশানো। সরাসরি খাওয়ার জন্য ১-২ চা চামচ ভিনিগার একটি বড় গ্লাস জলে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
তবে সতর্কতা জরুরি, অতিরিক্ত ACV গ্রহণ করলে দাঁতের এনামেল ক্ষয়, পাকস্থলীর জ্বালা বা ওষুধের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাকশনের সম্ভাবনা থাকে। তাই শুরুতে কম মাত্রা থেকে শুরু করাই শ্রেয়।
অ্যাপেল সিডার ভিনিগার কোনও ম্যাজিক নয়, তবে একটি সুস্থ অভ্যাসে পরিণত করলে এটি স্বাস্থ্যকে বহুমাত্রিক ভাবে উপকৃত করতে পারে। তবে প্রতিটি শরীরের চাহিদা আলাদা। তাই নিয়মিত গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ।