বাংলাদেশে সদ্য রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে। নোবেল জয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নের্তৃত্বে গঠিত হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আর তাতেই সিঁদূরে মেঘ দেখছে ভারত। তার কারণ বাংলাদেশের পুরনো সরকারের সঙ্গে যথেষ্ট বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল নয়াদিল্লির। সেই সুবাদে বিভিন্ন রাজনৈতিক চুক্তি থেকে বড় বড় আর্থিক চুক্তিও সাক্ষর করেছিল দুই প্রতিবেশী দেশ। যেখানে গারমেন্টস থেকে জ্বালানী, কয়লা, বিদ্যুত্ তথা বিভিন্ন শক্তি উত্পাদন ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে হাজার-কোটি টাকার বিনিয়োগ করেছে ভারত। আর এদের মধ্যে আদানি গোষ্ঠী বিশেষভাবে উল্লেখ্য।
ড. ইউনূসের শপথে নেই ভারত! বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকার থেকে দূরত্ব?
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই ‘কাছের বন্ধু’র বিনিয়োগ অস্বীকার করতে পারেনি তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর আমলে কয়লা থেকে বিদ্যুত্ এবং নৌবন্দরে ব্যপক বিনিয়োগ করে গৌতম আদানি।
২০১৭ সালে করা চুক্তির আওতায় আদানি আগামী ২৫ বছরে ১,৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিক্রি করার কথা বাংলাদেশকে। এই প্রকল্পটি চালু হয় ২০২৩ সালে। তবে আদানির বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রে সরবরাহ করা কয়লার দাম নিয়ে এর আগে প্রশ্ন উঠেছে। তবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর চুক্তির ভবিষ্যত নিয়েও আলোচনা হতে পারে। মুর্শিদাবাদের রঘুনাথপুরে আদানির বিদ্যুত্ সরবরাহ কেন্দ্র রয়েছে। যেখান থেকে বাংলাদেশের সাতক্ষীরায় বিদ্যুত্ সরবরাহ হয়। এবার সেই সমস্ত বানিজ্যচুক্তির ভবিষ্যত নিয়ে ঘনাচ্ছে ধোঁয়াশা।
তীব্র ভারত-বিরোধী ইউটিউবার এবার নয়া বিদেশমন্ত্রী, সুসম্পর্কের পথে কাঁটা বিঁধছে বাংলাদেশ?
বাংলাদেশের অস্থিরতা ভারতের বস্ত্র শিল্পের জন্য মিশ্র পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ভারতীয় সুতার বড় বাজার বাংলাদেশ। ভারতে উৎপাদিত সুতার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশই বাংলাদেশে যায়। বর্ধমান টেক্সটাইলসের যুগ্ম ব্যবস্থাপনা পরিচালক নীরাজ জৈন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে খুব বেশি সমস্যা হচ্ছে না, তবে বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটলে তা হবে তাঁদের জন্য উদ্বেগের।
দেশে পা রেখেই হিংসা বন্ধের বার্তা ইউনূসের
অন্যদিকে, চট্টোগ্রাম ও মংলায় বন্দর সম্প্রসারণের কাজেও ইতিমধ্যে ভারতের সঙ্গে কথাবার্তা এগিয়েছে বাংলাদেশ। কারণ বঙ্গোপসাগরের ওপর অবস্থিত চট্টোগ্রাম বন্দরটি ভূ-রাজনৈতিক ও কৌশলগতদিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এই বন্দরের ওপর দীর্ঘদিন ধরেই নজর রয়েছে চিন ও আমেরিকার। কিন্তু এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই বন্দর সম্প্রসারণ চুক্তি কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে উদ্বেগে নয়াদিল্লি।
প্রয়োজনে ‘শ্বশুরবাড়ি’কেও অশান্ত করতে পারি, ‘জামাই’য়ের কথায় বিপদ দেখছে ভারত
ওই বন্দর বিনিয়োগে মোদীর ‘কাছের বন্ধু’ গৌতম আদানির স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে বলে জানা যায়। তাই এবার বাংলাদেশে পটপরিবর্তন অনেকটা আদানির ‘পাকা ধানে মই’ দেওয়ার মতো। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল। কিন্তু নতুন সরকারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলাই এখন মূল লক্ষ্য ভারতের। তারপর চুক্তিবদ্ধ বিনিয়োগ নিয়ে এগোতে চায় দিল্লি। হয়তো পথ আগের মতো ততটা মসৃণ হবে না। কিন্তু চেষ্টা তো করতেই হবে কূটনৈতিক স্বার্থে।
আর এই বিপুল বিনিয়োগ জলে গেলে কী প্রতিক্রিয়া দিতে পারেন ‘ঘনিষ্ট’ শিল্পপতি গৌতম আদানি? তাঁর কতটা প্রভাব পড়বে মোদী-শাহের রাজনৈতিক ইনিংসে? সেই সবকিছু প্রশ্নও কিন্তু ঘুরপাক খাচ্ছে নয়াদিল্লির অলিন্দে।