বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই শপথ নেবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। আর এই সরকারের প্রধান হিসেবে মসনদে বসবেন নোবেল জয়ী ডা.মুহাম্মদ ইউনূস। এরমধ্যেই তাঁর গোটা ক্যাবিনেটের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সেদেশের সংবাদমাধ্যমে। সেখানে দেখা যাচ্ছে বিদেশমন্ত্রকের দ্বায়িত্ব সামলাতে চলেছেন পিনাকী ভট্টাচার্য (Pinaki Bhattacharya)। আর এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে নয়াদিল্লি। কারণ বাংলাদেশে একাধিক রাজনৈতিক বিতর্কের অন্যতম নাম পিনাকী ভট্টাচার্য (Pinaki Bhattacharya)। বর্তমানে প্যারিসে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন তিনি। সেখানেই নিজের নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল চালান তিনি। পাশাপাশি প্যারিসে সর্বোর্ণ ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন।
প্রয়োজনে ‘শ্বশুরবাড়ি’কেও অশান্ত করতে পারি, ‘জামাই’য়ের কথায় বিপদ দেখছে ভারত
কিন্তু ভারতের কাছে আশঙ্কার বিষয়টি অন্য। কারণ তিনি তাঁর ইউটিউব চ্যানেলের অন্যতম মূল বিষয়বস্তুই হল শেখ হাসিনার বিরোধিতা ও তারসঙ্গে তীব্র ভারত বিরোধিতা। একাধিক ভিডিওতে তিনি ভারত খেদাও, ইন্ডিয়া আউট, মোদীর হিন্দুত্ববাদ, ভারতীয় আধিপত্যবাদ এবং শেখ হাসিনার দমন ও দুর্নীতি নিয়ে লাগাতার প্রচার করেছেন। তাঁর ভিডিও মূলত নিচু শ্রেনীর ইসলামী চরমপন্থাকে উস্কানি দেয়। আর সেই কারণেই অচিরেই বিরাট জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি।
Bangladesh: প্রতিবেশী বাংলাদেশে অশান্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ ভারতীয় সেনার সিডিএসের
ইতিমধ্যেই ২৫ লক্ষের বেশি ফলোয়ার্স তৈরি করে ফেলেছেন বাংলাদেশের এই হবু বিদেশমন্ত্রী। তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা নিয়ে প্রচার করেন নিজের ইউটিউবে। সেখানে বাংলাদেশের ইতিহাস, ভারতের আধিপত্যবাদ, সীমান্তে বিএসএফের কার্যকলাপ নিয়ে তীব্র ভারত বিরোধী মত রাখেন। এই তীব্র ভারত বিরোধী মনোভাব নিয়ে বিদেশমন্ত্রকের মতো পদে তিনি কতটা মানানসই সেটা নিয়ে কূটনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে।
জন্ম বাংলাদেশের বগুড়া জেলায়। অল্প বয়সে পড়াশুনা শেষ করে ডাক্তারি পেশায় যুক্ত হন তিনি। ঢাকায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা কালীন নব্বইয়ের স্বৈরাচারী আন্দোলনে যুক্ত হন। ইতিমধ্যে রাজনীতি, ইতিহাস নিয়ে একাধিক বই লিখেছেন। এবং সেইসমস্ত বইয়ে ভারত বিরোধিতার ছাপ দেখা গিয়েছে। ২০১৮ সালে ঢাকায় পথ নিরাপত্তা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন। যার জেরে হাসিনা সরকারের চক্ষূশূল হন। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা ডিবি তাঁকে ডেকে পাঠালে সেখানে হাজিরা না দিয়ে ফেরার হয়েছিলেন। পরে জানা যায় প্রথমে ব্যাঙ্কক হয়ে প্যারিসে চলে যান।
‘আবার আসবেন…’ বলেছিলেন বুদ্ধবাবু, ভারতে আশ্রিত শেখ হাসিনা শোকাচ্ছন্ন
সেখানে পলিটিক্যাল আশ্রয়ে রয়েছেন। শোনা যায় তাঁর পরিবারের অনেকেই এখনও বাংলাদেশেই রয়েছেন। সম্প্রতি কোটা আন্দোলন থেকে হাসিনার পদত্যাগে প্যারিস থেকে তীব্র ভারত বিরোধী প্রচার করে গিয়েছেন তিনি। এবং হাসিনার পতনেও প্যারিসেও জয়োল্লাসে সামিল হন বিএনপি সদস্যদের সঙ্গে। একাধিক বার প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছিলেন। আর তাঁর প্রাণনাশের পেছনে ভারতের হাত থাকতে পারে বলেও একাধিক ভিডিও-লেখালেখিতে জানিয়েছিলেন।
সুতরাং, এই ধরনের ব্যক্তি যার ধ্যানে জ্ঞ্যানে ভারত বিরোধিতা, এহেন মানুষকে বিদেশমন্ত্রকের মতো কূটনৈতিক স্পর্শকাতর পদে কতটা গ্রহণযোগ্য তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়াটা স্বাভাবিক। আর এই নতুন বিদেশমন্ত্রী কিভাবে দেশের নয়া কূটনৈতিক দর্শন রচনা করবেন সেদিকেও তাকিয়ে থাকবে নয়াদিল্লি।