গত মরসুমে কলিঙ্গ সুপার কাপের ফাইনালে পৌঁছেও ট্রফি জয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি জামশেদপুর এফসি (Jamshedpur FC )। নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-কে হারানোর পর ফাইনালে মানোলো মার্কুয়েজের এফসি গোয়ার কাছে বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল খালিদ জামিলের দল। সেই হতাশা কাটিয়ে নতুন মরসুমে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বদ্ধপরিকর জামশেদপুর এফসি। এই লক্ষ্যে দলের ম্যানেজমেন্ট অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছে। বিদেশি ফুটবলারদের পাশাপাশি ভারতীয় ফুটবলার নির্বাচনেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সম্প্রতি কেরালার তরুণ ডিফেন্ডার জেস্টিন জর্জকে দলে ভেড়ানো হয়েছে, যিনি আসন্ন ডুরান্ড কাপে জামশেদপুরের রক্ষণভাগে নতুন শক্তি যোগ করবেন।
জামশেদপুর এফসি তাদের ২০২৫-২৬ মরসুমের প্রস্তুতি শুরু করেছে জেআরডি টাটা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে। আসন্ন ডুরান্ড কাপে দলটি তাদের গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচ ঘরের মাঠে খেলবে, যার প্রথম ম্যাচটি ২৪ জুলাই ত্রিভুবন আর্মি এফটি-র বিপক্ষে। এরপর ২৯ জুলাই ভারতীয় সেনা এফটি এবং ৮ আগস্ট ১লাদাখ এফসি-র বিপক্ষে খেলবে। এই টুর্নামেন্টে দলের শক্তি বাড়াতে ম্যানেজমেন্ট ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন ভারতীয় ফুটবলারকে দলে যুক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছেন সার্থক গোলুই, ভিন্সি ব্যারেটো, ক্যালভিন রোসারিও ব্যারেটো, নিশু কুমার, জয়েশ রানে, এবং ড্যানিয়েল লালহ্লিমপুইয়া। এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন কেরালার ২৭ বছর বয়সী সেন্টার ব্যাক জেস্টিন জর্জ।
Also Read | ISL-এর ইতিহাসে কিংবদন্তি কোচ! হাবাস কি সবার সেরা?
জেস্টিন জর্জ কেরালার একজন অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার, যিনি বেঙ্গালুরু এফসি-র রিজার্ভ দল থেকে উঠে এসে গোকুলাম কেরালা এফসি-তে নিজের নাম প্রতিষ্ঠা করেছেন। ২০১৯ সালে গোকুলাম কেরালার হয়ে ডুরান্ড কাপ জয় এবং ২০২০-২১ মরসুমে আই-লিগ শিরোপা জয়ে তার অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও তিনি নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি, রিয়েল কাশ্মীর এফসি এবং বেঙ্গালুরু ইউনাইটেড এফসি-র হয়ে খেলেছেন। তার দৃঢ় ডিফেন্সিভ উপস্থিতি এবং খেলার মাঠে নেতৃত্বের গুণ তাকে জামশেদপুর এফসি-র জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন করে তুলেছে। জেস্টিন নিজেই বলেছেন, “জামশেদপুর এফসি-র মতো ক্লাবের হয়ে ডুরান্ড কাপে ফিরতে পেরে আমি খুবই উত্তেজিত। এই টুর্নামেন্ট আমার কাছে বিশেষ, কারণ আমি গোকুলামের সঙ্গে এটি জিতেছি। আমি জানি এটি জিততে কতটা পরিশ্রম লাগে।”
জামশেদপুর এফসি-র প্রধান কোচ খালিদ জামিল দলের এই নতুন সংযোজন নিয়ে আশাবাদী। তিনি বলেছেন, “জেস্টিনের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আমাদের রক্ষণভাগে আরও গভীরতা এবং নমনীয়তা যোগ করবে। ডুরান্ড কাপে আমরা তার পারফরম্যান্সের দিকে নজর রাখব, কারণ এটি তার দলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার এবং নিজের ক্ষমতা প্রদর্শনের একটি দুর্দান্ত সুযোগ।” জামশেদপুর এফসি গত মরসুমে আইএসএল-এ পঞ্চম স্থান অর্জন করেছিল এবং সুপার কাপের ফাইনালে পৌঁছেছিল। এই মরসুমে তারা ডুরান্ড কাপে শক্তিশালী পারফরম্যান্স দেখাতে চায়, এবং জেস্টিনের মতো খেলোয়াড় তাদের এই লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
Also Read | এবার কনর শিল্ডকে নিতে আগ্ৰহী থাইল্যান্ডের এক ফুটবল ক্লাব
জেস্টিন জর্জের আগমন জামশেদপুরের রক্ষণভাগে নতুন শক্তি যোগ করবে। তিনি পূর্বে দিল্লি এফসি-র হয়ে খেলেছেন এবং বিভিন্ন ম্যাচে তার ডিফেন্সিভ দক্ষতা প্রমাণ করেছেন। তার শারীরিক শক্তি, বল নিয়ন্ত্রণ এবং খেলার মাঠে কৌশলগত সচেতনতা তাকে একজন নির্ভরযোগ্য সেন্টার ব্যাক করে তুলেছে। জামশেদপুর এফসি-র ঘরের মাঠ জেআরডি টাটা স্পোর্টস কমপ্লেক্স, যা ‘ফার্নেস’ নামে পরিচিত, সেখানে সমর্থকদের সমর্থন নিয়ে জেস্টিন নিজেকে প্রমাণ করার জন্য মুখিয়ে আছেন। তিনি বলেছেন, “জামশেদপুরের সমর্থকদের উৎসাহ আমি পূর্বে প্রতিপক্ষ হিসেবে অনুভব করেছি। এখন তাদের সামনে আমাদের জার্সিতে খেলতে পেরে আমি গর্বিত।”
ডুরান্ড কাপ, যা এশিয়ার প্রাচীনতম ফুটবল টুর্নামেন্ট, জামশেদপুর এফসি-র জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। গত মরসুমে তারা চেন্নাইয়িন এফসি-র বিপক্ষে ২-১ গোলে জয় পেয়েছিল, যেখানে ভিন্সি ব্যারেটোর গোল তাদের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এই মরসুমে জেস্টিন জর্জের মতো অভিজ্ঞ ডিফেন্ডারের সংযোজন দলের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়েছে। তবে, ত্রিভুবন আর্মি এফটি, ভারতীয় সেনা এফটি এবং ১লাদাখ এফসি-র বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলিতে তাদের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দেখাতে হবে।
জামশেদপুর এফসি-র ম্যানেজমেন্ট তাদের দল গঠনে সুচিন্তিত পদক্ষেপ নিয়েছে। জেস্টিন জর্জের পাশাপাশি সার্থক গোলুই এবং নিশু কুমারের মতো ডিফেন্ডারদের সংযোজন দলের রক্ষণভাগকে আরও শক্তিশালী করেছে। এছাড়াও, ভিন্সি ব্যারেটোর মতো দ্রুতগতির উইঙ্গার এবং জয়েশ রানের মতো অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার দলের আক্রমণাত্মক এবং মধ্যমাঠের শক্তি বাড়িয়েছে। এই মিশ্রণে অভিজ্ঞ এবং তরুণ খেলোয়াড়দের সমন্বয় জামশেদপুরকে ডুরান্ড কাপে একটি শক্তিশালী দল হিসেবে গড়ে তুলেছে।
আসন্ন ডুরান্ড কাপে জেস্টিন জর্জ কতটা প্রভাব ফেলতে পারবেন, তা দেখার জন্য সমর্থকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। তার অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা দলের জন্য মূল্যবান সম্পদ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। জামশেদপুর এফসি-র সমর্থকরা, যারা ‘মেন অফ স্টিল’ নামে পরিচিত, তাদের দলের এই নতুন মরসুমে বড় কিছু অর্জনের প্রত্যাশা করছেন। ডুরান্ড কাপে জামশেদপুরের যাত্রা কেমন হবে, তা এখন সময়ই বলবে।