ইংল্যান্ড মহিলা ক্রিকেট দল শনিবার লর্ডসে অনুষ্ঠিত বৃষ্টিবিঘ্নিত দ্বিতীয় মহিলা ওডিআই (2nd WODI 2025) ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে ৮ উইকেটের দাপুটে জয় তুলে নিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ১-১ এ সমতায় এনেছে। ইংল্যান্ডের ওপেনার অ্যামি জোন্স অপরাজিত ৪৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান, যেখানে ভারতীয় মহিলা দল ব্যাটিংয়ে নিষ্প্রভ পারফরম্যান্স দেখিয়ে ২৯ ওভারে মাত্র ১৪৩/৮ রান তুলতে সক্ষম হয়। স্মৃতি মান্ধানার ৪২ রান ছিল ভারতের সর্বোচ্চ স্কোর।
প্রথম ম্যাচে ভারতীয় মহিলা দল ২৫৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করে দুর্দান্ত জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে তাদের ব্যাটিং লাইনআপ পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। বৃষ্টির কারণে ম্যাচ ২৯ ওভারে সীমাবদ্ধ হয়, এবং ভারতের ব্যাটিং ইউনিট ইংলিশ বোলারদের সামনে লড়াই করতে ব্যর্থ হয়। স্মৃতি মান্ধানা ছাড়া দলের অন্য কোনও ব্যাটার উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারেননি। দলের মিডল অর্ডার ধসে পড়ে, এবং ইংল্যান্ডের বোলাররা নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে নিয়ে ভারতকে চাপে রাখে।
ইংল্যান্ডের পক্ষে বোলিংয়ে সবচেয়ে সফল ছিলেন তাদের পেসার এবং স্পিনারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। ভারতের ব্যাটিং লাইনআপের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ইংলিশ বোলাররা দ্রুত উইকেট তুলে নেন। স্মৃতি মান্ধানা এবং আরেক ব্যাটারের মধ্যে একটি ছোটখাটো জুটি গড়ে উঠলেও, তা দলের স্কোরকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে ব্যর্থ হয়। ভারতের রান তাড়ার সম্ভাবনা বৃষ্টির কারণে ম্যাচ সংক্ষিপ্ত হওয়ার পর আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ডের ওপেনার অ্যামি জোন্স এবং ট্যামি বিউমন্ট শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মনোভাব দেখান। তারা প্রথম উইকেটে ৫৪ রানের দৃঢ় জুটি গড়ে তুলে দলকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করান। ট্যামি বিউমন্ট ৩৫ বলে ৩৪ রান করে ভারতীয় অফ-স্পিনার স্নেহ রানার বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন। তবে, এরপর অ্যামি জোন্স দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান। তার অপরাজিত ৪৬ রানের ইনিংসে ছিল কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন শট, যা ইংল্যান্ডের জয়কে আরও সহজ করে তোলে।
ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ ভারতীয় বোলারদের তেমন কোনও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়নি। ভারতের পক্ষে স্নেহ রানা একটি উইকেট নিলেও, বাকি বোলাররা ছন্দহীন ছিলেন। পেসার এবং স্পিনাররা ইংলিশ ব্যাটারদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হন, এবং ইংল্যান্ড লক্ষ্য তাড়া করে মাত্র দুটি উইকেট হারিয়ে জয় ছিনিয়ে নেয়। এই জয়ের মাধ্যমে ইংল্যান্ড সিরিজে ১-১ এ সমতা ফিরিয়ে আনে, এবং তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি এখন সিরিজের ভাগ্য নির্ধারক হয়ে উঠেছে।
ভারতীয় দলের জন্য এই হার একটি বড় ধাক্কা। প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর দ্বিতীয় ম্যাচে তাদের ব্যাটিংয়ের এই ব্যর্থতা দলের মনোবলের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌরের নেতৃত্বে দলটি এখন তৃতীয় ম্যাচে ফিরে আসার জন্য কঠোর পরিশ্রম করবে। বিশেষ করে, ব্যাটিং ইউনিটের উপর নির্ভর করতে হবে আরও দায়িত্বশীল পারফরম্যান্সের জন্য। স্মৃতি মান্ধানা ছাড়া অন্য ব্যাটারদের, যেমন শেফালি ভার্মা এবং হরমনপ্রীত নিজের, তাদের ফর্ম ফিরে পাওয়া জরুরি।
অন্যদিকে, ইংল্যান্ড দল এই জয়ের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে। অ্যামি জোন্সের ব্যাটিং এবং তাদের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত পারফরম্যান্স দলকে শক্তিশালী অবস্থানে রেখেছে। তৃতীয় ম্যাচে তারা এই গতি ধরে রাখতে চাইবে। লর্ডসের এই ম্যাচে ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়রা তাদের কৌশল এবং দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে, যা ভারতের জন্য একটি সতর্কতা।
তৃতীয় ম্যাচে ভারতীয় দলের জন্য বোলিং ইউনিটের উন্নতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্নেহ রানা এবং দীপ্তি শর্মার মতো স্পিনারদের উপর বেশি দায়িত্ব পড়বে, এবং পেসারদেরও তাদের লাইন এবং লেংথে আরও নির্ভুল হতে হবে। ভারতীয় দলের কোচিং স্টাফ এখন দলের কৌশল পুনর্বিবেচনা করে তৃতীয় ম্যাচে জয়ের জন্য প্রস্তুতি নেবে।
এই সিরিজের তৃতীয় ম্যাচটি এখন উভয় দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় মহিলা দল তাদের প্রথম ম্যাচের ফর্ম ফিরিয়ে আনতে পারলে সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা থাকবে। অন্যদিকে, ইংল্যান্ড তাদের ঘরের মাঠে এই গতি ধরে রাখতে মরিয়া হবে। ক্রিকেটপ্রেমীরা এখন অধীর আগ্রহে তৃতীয় ম্যাচের জন্য অপেক্ষা করছেন, যা সিরিজের ফলাফল নির্ধারণ করবে।