প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়ে ভিন ধর্মের প্রেমিকাকে খুন (Arif Ahmed)। এই ঘটনাটি ঘটেছে অসমের বাজালি জেলার সরুপেটায়। এই মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনায় ১৯ বছর বয়সী মনিকা বর্মনকে তার প্রাক্তন প্রেমিক আরিফ আহমেদ ধর্ষণ ও খুন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আরিফ এই জঘন্য অপরাধকে আত্মহত্যা হিসেবে প্রমাণিত করার জন্য মনিকার দেহটি একটি ঘরের সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে দেয়।
তবে, বাজালি পুলিশের তদন্তে এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং অপরাধের আসল সত্য প্রকাশিত হয়। অভিযুক্ত আরিফ আহমেদকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তিনি বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত অনুসারে, মনিকা বর্মন এবং আরিফ আহমেদের মধ্যে আগে একটি প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
মনিকা এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসে নতুন একটি সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন, যা আরিফ মেনে নিতে পারেননি। তীব্র ঈর্ষা ও ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে আরিফ মনিকাকে তাদের পূর্বের সম্পর্কের ব্যক্তিগত ছবি ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেল করতে শুরু করেন। মনিকার পরিবার জানিয়েছে, তারা গত ১৫ বছর ধরে আরিফের বাড়ির কাছাকাছি এলাকায় ভারতীয় নাগরিক হিসেবে বসবাস করে আসছেন।
এই সময়ের মধ্যে আরিফের সঙ্গে মনিকার সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা পরে ভেঙে যায়।ঘটনার দিন, ১৯ জুলাই ভোররাত প্রায় ৪টার সময়, আরিফ মনিকাকে হুমকি ও ভয় দেখিয়ে তার বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসে। এরপর তাদের মধ্যে তীব্র তর্কাতর্কি শুরু হয়। পুলিশের তথ্য অনুসারে, এই তর্কের মধ্যেই আরিফ মনিকাকে ধর্ষণ করে এবং পরে গলা টিপে তাকে হত্যা করে।
অপরাধ গোপন করার জন্য, আরিফ মনিকার দেহকে সরুপেটার একটি ভাড়া ঘরের সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে দেয়, যাতে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে মনে হয়। তবে, বাজালি পুলিশের তৎপরতায় ঘটনাস্থলের প্রমাণ পরীক্ষা করে এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলের প্রমাণ আত্মহত্যার দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, যার ফলে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মনিকার পরিবার জানিয়েছে, আরিফ তাদের মেয়েকে দীর্ঘদিন ধরে ব্ল্যাকমেল করে আসছিল। আগের সম্পর্কের ব্যাক্তিগত ছবি ব্যবহার করে সে মনিকাকে ভয় দেখাত এবং তার জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে জানিয়েছেন যে মনিকা এই হুমকির কারণে মানসিক চাপের মধ্যে ছিল।
ঘটনার পর মনিকার দেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে, এবং ফরেনসিক বিশ্লেষণের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।এই ঘটনা স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। সরুপেটা এলাকার বাসিন্দারা নারীদের নিরাপত্তা এবং অন্তরঙ্গ সম্পর্কের হিংসার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় নারী সংগঠন এবং সমাজকর্মীরা এই ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন এবং অপরাধীদের দ্রুত বিচারের দাবি তুলেছেন। সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, যেখানে অনেকে নারী নিরাপত্তা এবং ব্ল্যাকমেলিংয়ের মতো অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর আইনের আওতায় আনার দাবি করেছেন।
বাজালি পুলিশ জানিয়েছে, আরিফ আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, খুন এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত চলছে , এবং পুলিশ কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে এই মামলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে। এই ঘটনা অসমে নারীদের বিরুদ্ধে বেড়ে চলা হিংসার ঘটনার আরও একটি ঘটনার উদাহরণ।
বাঙালি পারিবারিক সম্পর্কের সংজ্ঞা বদলে দিল তৃণমূল সরকার, বিস্ফোরক শুভেন্দু
স্থানীয় সম্প্রদায় এবং নাগরিক সংগঠনগুলি সরকারের কাছে নারী নিরাপত্তার জন্য আরও কঠোর পদক্ষেপ এবং সচেতনতা প্রচারের দাবি জানিয়েছে।এই ঘটনা শুধুমাত্র সরুপেটার নয়, বরং গোটা অসমের জন্য একটি জাগরণের ডাক। নারীদের নিরাপত্তা এবং সম্মান রক্ষায় সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা ও কঠোর আইনি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা এই ঘটনা দ্বারা আরও স্পষ্ট হয়েছে।