শিলং লাজং এফসি-র (Shillong Lajong FC) জন্য গত ২০২৪-২৫ আই-লিগ সিজনের শুরুটা ছিল হতাশাজনক। প্রথম ম্যাচেই চার্চিল ব্রাদার্সের কাছে হোঁচট খেতে হয়েছিল দলটিকে। এরপর ডেম্পো স্পোর্টস ক্লাবের কাছে হেরে আরও পিছিয়ে পড়ে তারা। যদিও রাজস্থান ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে জয় ছিনিয়ে নিয়ে আই-লিগে প্রথম সাফল্য পায় শিলং লাজং, তবে সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেনি দলটি। জোসে কার্লোস রদ্রিগেজ হেভিয়ার নেতৃত্বে দলটি মৌসুমের শেষে ২২ ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলের অষ্টম স্থানে থেমে যায়। এই ফলাফল সমর্থকদের মধ্যে হতাশা ছড়িয়েছিল। তবে, নতুন মরসুমে (২০২৫-২৬) ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে শিলং লাজং এফসি তাদের প্রাক্তন খেলোয়াড় বীরেন্দ্র থাপার হাতে দলের দায়িত্ব তুলে দিয়েছে। গত শুক্রবার (১৮ জুলাই, ২০২৫) ক্লাবের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল থেকে এই ঘোষণা করা হয়েছে।
বীরেন্দ্র থাপা: শিলং লাজংয়ের চেনা মুখ
বীরেন্দ্র থাপা, যিনি ‘কোচ বিরু’ নামে পরিচিত, শিলং লাজংয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত। ২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি এই ক্লাবের হয়ে খেলেছেন এবং ২০০৯-১০ সিজনে আই-লিগে উঠার ঐতিহাসিক সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। খেলোয়াড়ি জীবনের পর, তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত শিলং লাজংয়ের টিম ম্যানেজার এবং সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। এরপর, ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনি মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব এবং শ্রীনিধি ডেকানের সহকারী কোচ হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। ২০২৪ সালে তিনি শিলং লাজংয়ে সহকারী কোচ হিসেবে ফিরে আসেন এবং এখন প্রধান কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন।
বীরেন্দ্র থাপার এই নিয়োগ শিলং লাজংয়ের ঐতিহ্য এবং স্থানীয় প্রতিভার প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে। তিনি দ্য শিলং টাইমস-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “এই দায়িত্ব পেয়ে আমি সম্মানিত এবং উত্তেজিত। ক্লাবের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা এবং দলের সঙ্গে কাজ করে বড় কিছু অর্জনের আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। গত ৩-৪ বছর ধরে দলের খেলোয়াড়দের কঠোর পরিশ্রম এবং নিষ্ঠা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি বিশ্বাস করি, আমরা একসঙ্গে দারুণ কিছু অর্জন করতে পারি।”
নতুন সহকারী কোচ: জর্জ ভ্যানি লিংডোহ নংগ্রাং
শিলং লাজং এফসি একই সঙ্গে জর্জ ভ্যানি লিংডোহ নংগ্রাংকে সহকারী কোচ হিসেবে নিয়োগ করেছে। জর্জ ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ক্লাবের যুব দলের খেলোয়াড় ছিলেন এবং ২০২৪ সালে কোচিং স্টাফ হিসেবে ফিরে আসেন। তাঁর নিয়োগ ক্লাবের স্থানীয় প্রতিভাকে উৎসাহিত করার নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে ক্লাবটি আই-লিগ এবং ডুরান্ড কাপে শক্তিশালী পারফরম্যান্সের লক্ষ্য নিয়েছে।
গত মরসুমের পারফরম্যান্স এবং চ্যালেঞ্জ
২০২৪-২৫ আই-লিগ সিজনে শিলং লাজং এফসি-র পারফরম্যান্স ছিল মিশ্র। তারা গত নভেম্বরে মহামেডান স্পোর্টিংয়ের বিরুদ্ধে ১-১ ড্র দিয়ে সিজন শুরু করে এবং গোকুলাম কেরালাকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথম জয় পায়। তবে, ধারাবাহিকতার অভাবে তারা লিগে শীর্ষস্থান অর্জন করতে পারেনি। ডিসেম্বরে ডেলহি এফসি-র কাছে ৩-১ গোলে হার এবং গোকুলাম কেরালার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র তাদের পিছিয়ে দেয়। তবে, ২০২৪ সালের ডুরান্ড কাপে তারা ইস্ট বেঙ্গলকে ২-১ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে সবাইকে চমকে দেয়, যদিও সেমিফাইনালে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের কাছে ৩-০ গোলে হারে। এছাড়া, ২০২৫ সালের মার্চে তারা শিলং প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জিতে স্থানীয় ফুটবলে তাদের আধিপত্য প্রমাণ করে।
২০২৫-২৬ সিজনের প্রস্তুতি
নতুন সিজনের জন্য শিলং লাজং এফসি তাদের প্রস্তুতি শুরু করেছে। বীরেন্দ্র থাপার নেতৃত্বে দলটি ডুরান্ড কাপ এবং আই-লিগে শক্তিশালী পারফরম্যান্সের লক্ষ্য নিয়েছে। থাপা জানিয়েছেন, “ডুরান্ড কাপে আমরা আমাদের সেরাটা দেব এবং ফলাফল আপনাচ আসবে। আই-লিগে আমরা একই দৃঢ়তা নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থাকার চেষ্টা করব।” তরুণ এবং অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের মিশ্রণে গঠিত এই দলটি ধারাবাহিকতা এবং কৌশলগত উন্নতির উপর জোর দিচ্ছে।
এদিকে, শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়াম ২০২৪ সালের ডুরান্ড কাপের একটি গ্রুপ পর্বের আয়োজক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে, যা মেঘালয়ের ফুটবলের জন্য গর্বের বিষয়। এই টুর্নামেন্টে শিলং লাজং তাদের স্থানীয় সমর্থকদের সামনে ভালো পারফরম্যান্স দেখানোর লক্ষ্য রাখছে।
শিলং লাজংয়ের ঐতিহ্য ও লক্ষ্য
১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত শিলং লাজং এফসি মেঘালয়ে ফুটবলের মান উন্নত করতে এবং স্থানীয় প্রতিভাকে তুলে ধরতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ‘লাজং’ শব্দটি খাসি ভাষায় ‘আমাদের নিজের’ বোঝায়, যা ক্লাবের স্থানীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে গভীর সংযোগ প্রকাশ করে। উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রথম দল হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে শিলং লাজং। ২০০৯-১০ সিজনে আই-লিগে উঠে তারা ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। তবে, ২০১৭ সালে রেলিগেশনের পর ২০২২-২৩ সিজনে আই-লিগ ২ থেকে আবার আই-লিগে ফিরে আসে তারা।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
নতুন সিজনে শিলং লাজং এফসি-র সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, তরুণ খেলোয়াড়দের সঙ্গে অভিজ্ঞদের সমন্বয় করা এবং প্রতিযোগিতামূলক আই-লিগে শীর্ষে থাকা তাদের প্রধান লক্ষ্য। বীরেন্দ্র থাপার অভিজ্ঞতা এবং স্থানীয় ফুটবলের প্রতি তাঁর গভীর বোঝাপড়া দলটিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। এছাড়া, জর্জ ভ্যানি
শিলং লাজং এফসি গত মরসুমের হতাশা পেছনে ফেলে নতুন সিজনে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্য নিয়েছে। বীরেন্দ্র থাপার নেতৃত্বে এবং জর্জ ভ্যানি লিংডোহ নংগ্রাংয়ের সহায়তায় দলটি ডুরান্ড কাপ এবং আই-লিগে শক্তিশালী পারফরম্যান্স দেখাতে প্রস্তুত। স্থানীয় প্রতিভা এবং অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে শিলং লাজং উত্তর-পূর্ব ভারতের ফুটবলের গর্ব হিসেবে নিজেদের জায়গা আরও মজবুত করতে চায়। সমর্থকরা এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন নতুন সিজনের শুরুর জন্য, যেখানে ‘রেড ড্রাগনস’ তাদের প্রকৃত সম্ভাবনা প্রকাশ করবে।