Furniture on EMI: ভারতের মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য স্বপ্নের বাড়ি সাজানো এখন আর অসম্ভব নয়। ফার্নিচার কেনার ক্ষেত্রে ‘নো-কস্ট ইএমআই’ (No-Cost EMI) অফারগুলো এনে দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা। বাজারে সোফা, বেড, ডাইনিং টেবিল, ওয়ার্ডরোব থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ফার্নিচার এখন ইএমআই-তে কেনা সম্ভব, তাও আবার কোনো অতিরিক্ত সুদ ছাড়াই। এই অফারগুলো মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য বাড়ি সাজানোর খরচকে আরও সাশ্রয়ী এবং সুবিধাজনক করে তুলেছে। বাজাজ ফিনসার্ভ, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে, যা মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য একটি বড় স্বস্তি। কিন্তু এই নো-কস্ট ইএমআই কীভাবে কাজ করে, এবং এটি কি সত্যিই মধ্যবিত্তদের জন্য লাভজনক? আসুন বিস্তারিত জেনে নিই।
নো-কস্ট ইএমআই কী?
নো-কস্ট ইএমআই হলো এমন একটি অর্থপ্রদানের ব্যবস্থা, যেখানে ক্রেতাকে ফার্নিচারের মোট মূল্য এককালীন পরিশোধ করতে হয় না। এর পরিবর্তে, মোট খরচকে কয়েকটি মাসিক কিস্তিতে ভাগ করে দেওয়া হয়, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই কিস্তিতে কোনো অতিরিক্ত সুদ যুক্ত হয় না। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি সোফা সেটের দাম ৩০,০০০ টাকা হয়, তবে ৬ মাসের নো-কস্ট ইএমআই-তে প্রতি মাসে ৫,০০০ টাকা করে পরিশোধ করা যায়। এই ব্যবস্থায় ক্রেতাকে কোনো অতিরিক্ত সুদ বা প্রসেসিং ফি দিতে হয় না, যদিও কিছু ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ন্যূনতম প্রসেসিং ফি চার্জ করতে পারে। বাজাজ ফিনসার্ভ, এইচডিএফসি, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, এবং অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এই সুবিধা দিচ্ছে।
মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য সুবিধা
মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য ফার্নিচার কেনা প্রায়ই একটি বড় আর্থিক সিদ্ধান্ত। এককালীন বড় অঙ্কের টাকা খরচ করা তাঁদের সঞ্চয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করে। নো-কস্ট ইএমআই এই সমস্যার সমাধান দিয়েছে। এই ব্যবস্থায় ক্রেতারা তাঁদের পছন্দের ফার্নিচার কিনতে পারেন এবং মাসিক কিস্তিতে সহজে পরিশোধ করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, বাজাজ ফিনসার্ভ ইএমআই নেটওয়ার্ক কার্ডের মাধ্যমে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্রেডিট লিমিটে ফার্নিচার কেনা যায় এবং ১ থেকে ৬০ মাসের মধ্যে পরিশোধ করা যায়। এছাড়া, কিছু ক্ষেত্রে জিরো ডাউন পেমেন্টের সুবিধাও পাওয়া যায়, যা মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য আরও আকর্ষণীয়।
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেমন বাজাজ মল, অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট, এবং পেপারফ্রাইয়ের মতো সাইটগুলো এই নো-কস্ট ইএমআই অফার দিচ্ছে। এছাড়া, আইকিয়া, গোদরেজ ইন্টেরিও, এবং ডুরিয়ানের মতো ব্র্যান্ডগুলো তাঁদের দোকানে এই সুবিধা প্রদান করছে। এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক এবং বাজাজ ফিনসার্ভের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ৩ থেকে ২৪ মাসের নো-কস্ট ইএমআই অফার করছে, যা ক্রেতাদের জন্য সুবিধাজনক।
কীভাবে কাজ করে নো-কস্ট ইএমআই?
নো-কস্ট ইএমআই-এর ক্ষেত্রে, পণ্যের মূল্যের উপর সুদের পরিমাণ প্রায়ই বিক্রেতা বা ব্যাঙ্ক কর্তৃক ছাড় হিসেবে দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি ৪৫,০০০ টাকার ডাইনিং সেট যদি ৬ মাসের নো-কস্ট ইএমআই-তে কেনা হয়, তবে ক্রেতাকে প্রতি মাসে ৭,৫০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে, এবং কোনো অতিরিক্ত সুদ লাগবে না। তবে, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশিকা অনুযায়ী, কিছু ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক সুদের পরিমাণ পণ্যের মূল্যের সঙ্গে যুক্ত করে এবং পরে ক্যাশব্যাক বা ছাড়ের মাধ্যমে তা ফেরত দেয়। এই কারণে, ক্রেতাদের কেনার আগে শর্তাবলী ভালোভাবে পড়ে নেওয়া উচিত।
মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য কেন উপকারী?
মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য বাড়ি সাজানো একটি বড় স্বপ্ন। তবে, উচ্চমূল্যের ফার্নিচার কেনার ক্ষেত্রে আর্থিক সীমাবদ্ধতা প্রায়ই বাধা হয়ে দাঁড়ায়। নো-কস্ট ইএমআই এই সমস্যার সমাধান করেছে। এই ব্যবস্থায়:
জিরো ডাউন পেমেন্ট: বাজাজ ফিনসার্ভ এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে জিরো ডাউন পেমেন্টের সুবিধা রয়েছে, যার ফলে ক্রেতাদের প্রাথমিক খরচের চিন্তা করতে হয় না।
- নমনীয় মেয়াদ: ৩ থেকে ২৪ মাস বা তার বেশি সময়ের ইএমআই মেয়াদ নির্বাচন করা যায়, যা মাসিক বাজেটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
- বিস্তৃত পণ্যের পরিসর: সোফা, বেড, ডাইনিং টেবিল, বুকশেলফ, এবং মডুলার কিচেনের মতো বিভিন্ন ফার্নিচার এই অফারের আওতায় পাওয়া যায়।
- ক্রেডিট কার্ড ছাড়াও সুবিধা: বাজাজ ফিনসার্ভ ইনস্টা ইএমআই কার্ডের মতো সুবিধার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড ছাড়াই ফার্নিচার কেনা যায়।
কীভাবে কিনবেন?
ফার্নিচার কেনার জন্য নো-কস্ট ইএমআই ব্যবহার করতে চাইলে ক্রেতাদের কয়েকটি সহজ পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হবে:
১. পণ্য নির্বাচন: বাজাজ মল, অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট, বা আইকিয়ার মতো প্ল্যাটফর্মে পছন্দের ফার্নিচার নির্বাচন করুন।
২. ইএমআই অপশন: চেকআউটের সময় ‘নো-কস্ট ইএমআই’ অপশন নির্বাচন করুন এবং পছন্দের মেয়াদ বেছে নিন।
৩. কার্ড বা ডকুমেন্ট: বাজাজ ফিনসার্ভ ইএমআই কার্ড বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করুন। যদি কার্ড না থাকে, তবে দোকানে গিয়ে কেওয়াইসি ডকুমেন্ট জমা দিয়ে ইএমআই সুবিধা নেওয়া যায়।
৪. অনুমোদন: ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তাৎক্ষণিক অনুমোদন পাওয়া যায়, এবং পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হয়।
চ্যালেঞ্জ এবং সতর্কতা
নো-কস্ট ইএমআই অত্যন্ত সুবিধাজনক হলেও, কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশিকা অনুযায়ী, কিছু ক্ষেত্রে সুদের পরিমাণ পণ্যের মূল্যের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে, যা পরে ছাড় হিসেবে ফেরত দেওয়া হয়। এছাড়া, কিস্তি সময়মতো পরিশোধ না করলে অতিরিক্ত জরিমানা বা সুদ লাগতে পারে। ক্রেতাদের কেনার আগে ব্যাঙ্কের শর্তাবলী এবং রিটার্ন পলিসি ভালোভাবে পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।
মধ্যবিত্তের জন্য নতুন দিগন্ত
নো-কস্ট ইএমআই মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য বাড়ি সাজানোর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করছে। এই ব্যবস্থা শুধু আর্থিক চাপ কমায় না, বরং উচ্চমানের ফার্নিচার কেনার সুযোগ করে দেয়। বাজাজ মল, পেপারফ্রাই, এবং আইকিয়ার মতো প্ল্যাটফর্মগুলো বিভিন্ন ধরনের ফার্নিচার অফার করছে, যা আধুনিক এবং ঐতিহ্যবাহী স্বাদের সঙ্গে মানানসই। এছাড়া, নিলকমল, ডুরোফ্লেক্স, এবং ড্যানিউব হোমের মতো ব্র্যান্ডগুলো মধ্যবিত্ত পরিবারের বাজেটের মধ্যে ফার্নিচার সরবরাহ করছে।
নো-কস্ট ইএমআই অফার মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য ফার্নিচার কেনাকে আরও সাশ্রয়ী এবং সুবিধাজনক করে তুলেছে। এই সুবিধার মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের স্বপ্নের বাড়ি সাজাতে পারছেন বিনা চিন্তায়। তবে, ক্রেতাদের সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে এবং শর্তাবলী বুঝে কেনাকাটা করা উচিত। বাজাজ ফিনসার্ভ, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এই উদ্যোগ মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। তাই, যদি আপনি আপনার বাড়ি নতুনভাবে সাজাতে চান, তবে এই নো-কস্ট ইএমআই অফারগুলো আপনার জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ।