অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কড়া জবাব দিলীপ ঘোষের

বৃহস্পতিবার কলকাতার ইকোপার্কে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে মুখ খুলে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক…

Dilip Ghosh Slams Abhishek Banerjee, Defends BJP’s Rath Yatra in West Bengal Politics

বৃহস্পতিবার কলকাতার ইকোপার্কে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে মুখ খুলে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছেন। রাজনীতি, ধর্ম, সমাজ, এবং রাজ্যের শাসক দলের কার্যকলাপ নিয়ে তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ। তাঁর বক্তব্যে তৃণমূলের নীতি ও কাজের তীব্র সমালোচনার পাশাপাশি বিজেপির অবস্থানও স্পষ্ট করেছেন তিনি।

‘২৬-এ বিজেপি ৫০-এর নিচে’ অভিষেকের দাবির জবাব
দিলীপ ঘোষ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন। অভিষেক দাবি করেছিলেন যে ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ৫০টিরও কম আসন পাবে। এই বক্তব্যের জবাবে দিলীপ ঘোষ বলেন, “উনি তো বলেছিলেন অর্জুন সিংকে ব্যারাকপুরে ২ লাখ ভোটে হারাবো, নাহলে রাজনীতি ছেড়ে দেব। সেটা ২০১৯ সালের কথা। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়েও বলেছিলেন রাজনীতি ছেড়ে দেব। কিন্তু রাজনীতি তো ছাড়েননি। শুধু ফোরকাস্ট করেন।” তিনি আরও বলেন, “সাধারণ মানুষই ঠিক করবে কে কত আসন পাবে। মানুষের আশীর্বাদে বিজেপি এতদূর এসেছে। তৃণমূলের সমস্ত চক্রান্ত ব্যর্থ করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।”

   

দিলীপ ঘোষের এই বক্তব্যে স্পষ্ট যে তিনি অভিষেকের দাবিকে গুরুত্ব না দিয়ে জনগণের উপর ভরসা রাখছেন। তাঁর মতে, তৃণমূলের ‘চক্রান্ত’ সত্ত্বেও বিজেপি জনগণের সমর্থন নিয়ে এগিয়ে চলেছে।

‘রথ নিয়ে রাজনীতি’ প্রসঙ্গ
দিলীপ ঘোষ রাজ্যে ধর্মীয় উৎসবগুলোর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নিয়েও মুখ খুলেছেন। তিনি বলেন, “এই রাজ্যে সব কিছু নিয়ে রাজনীতি হয়। বিয়ে থেকে মৃত্যু—সবকিছুই রাজনীতির অংশ। জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা কীভাবে দেখবেন, সেটা আপনার ওপর নির্ভর করে। রথ ভাবে আমি দেব, পথ ভাবে আমি দেব, মূর্তি ভাবে আমি দেব, হাসেন অন্তর্যামী।” এই বক্তব্যে তিনি ইঙ্গিত করেছেন যে ধর্মীয় উৎসবগুলোকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা রাজ্যের শাসক দলের পুরনো অভ্যাস। তবে তিনি এটাও বলেন যে এই ধরনের উৎসব জনগণের ভক্তি ও বিশ্বাসের সঙ্গে জড়িত, এবং এর মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে।

শুভেন্দু অধিকারীর ‘পাল্টা রথযাত্রা’
তৃণমূলের দুর্গাপুজো কার্নিভাল বা অন্যান্য ধর্মীয় উৎসব নিয়ে রাজনীতির অভিযোগের জবাবে দিলীপ ঘোষ বলেন, “দুর্গাপুজো বা কার্নিভাল কি রাজনীতি নয়? রামনবমী নিয়ে কি রাজনীতি হয় না? তাহলে জগন্নাথ কেন বাদ থাকবেন?” তিনি আরও বলেন, “বিজেপি কয়েক বছর আগে রথযাত্রা শুরু করেছিল। বিজেপি তো চাইবেই রথের একটা ভালো বিকল্প দিতে। এটা ভালো কথা। এই অধর্মের রাজত্বে যদি ধর্ম জাগরণ হয়, ভক্তি বাড়ে, তাহলে সমাজের মঙ্গল হবে।” এই বক্তব্যে তিনি শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে কলকাতায় রথযাত্রার পাল্টা উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছেন এবং এটাকে ধর্মীয় জাগরণের অংশ হিসেবে দেখছেন।

Advertisements

তমন্নার মায়ের টাকা প্রত্যাখ্যান
দিলীপ ঘোষ রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে আরও একটি গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, “টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করার রাজনীতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু করেছেন। আরজিকরে অভয়ার বাবা-মাকে টাকা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। কালীগঞ্জে অপমানজনকভাবে বিধায়ককে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরা টাকা চায়নি। বহু কষ্টে ওদের মেয়ে হয়েছিল। কোল খালি হয়ে গেছে। টাকা নিয়ে কী করবে? ধর্ষণ হলে তার জন্য রেট ফিক্স হচ্ছে। এই সরকার আর কত নিচে নামবে?” এই বক্তব্যে তিনি রাজ্যে ধর্ষণের ঘটনার পর ক্ষতিপূরণ হিসেবে টাকা দেওয়ার প্রচলিত প্রথার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাঁর মতে, এটি কেবল নৈতিক অবক্ষয়ের প্রতীক।

দীঘার পর রাজ্যে পুরীর প্রসাদ বিতরণ
জগন্নাথ দেবের প্রসাদ বিতরণ নিয়েও দিলীপ ঘোষ তৃণমূলের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “এখানকার প্রসাদ নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। লোকের ভক্তি নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। দেশে প্রসাদের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা আছে। জগন্নাথের প্রসাদ যদি বাড়িতে বসে পাওয়া যায়, তাহলে তো আনন্দের কথা।” তিনি ইঙ্গিত করেছেন যে বিজেপি এই ধরনের উদ্যোগকে সমর্থন করে এবং এটি জনগণের ধর্মীয় ভাবাবেগের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর একটি মাধ্যম।

দিলীপ ঘোষের এই বক্তব্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তাঁর তীব্র অবস্থান স্পষ্ট। তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি থেকে শুরু করে রাজ্য সরকারের নীতি, ধর্মীয় উৎসবের রাজনীতিকরণ, এবং সামাজিক অবক্ষয় নিয়ে সরব হয়েছেন। তাঁর বক্তব্যে বিজেপির জনগণের প্রতি ভরসা এবং ধর্মীয় জাগরণের প্রতি সমর্থনের বিষয়টিও উঠে এসেছে। এই বক্তব্য নিঃসন্দেহে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।