‘আদালতের সময় নষ্ট হচ্ছে’!, কেন বলল হাইকোর্ট ?

মুম্বই হাইকোর্ট (High-Court) আজ ২০২৪ সালের মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল বাতিলের দাবিতে দায়ের করা একটি পিটিশন খারিজ করে দিয়েছে এবং বলেছে যে এই পিটিশন ‘আদালতের…

High-Court order in mumbai

মুম্বই হাইকোর্ট (High-Court) আজ ২০২৪ সালের মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল বাতিলের দাবিতে দায়ের করা একটি পিটিশন খারিজ করে দিয়েছে এবং বলেছে যে এই পিটিশন ‘আদালতের সময় নষ্ট’ করেছে। বিচারপতি জি এস কুলকার্নি এবং বিচারপতি আরিফ এস ডক্টরের ডিভিশন বেঞ্চ মুম্বইয়ের বাসিন্দা চেতন আহিরের দায়ের করা পিটিশনটি প্রত্যাখ্যান করে।

পিটিশনটিতে দাবি করা হয়েছিল, নির্ধারিত ভোটগ্রহণের সময়সীমা সন্ধ্যা ৬টার পরেও ভোট দেওয়া হয়েছে, যা নির্বাচনের ফলাফলের বৈধতার উপর প্রশ্ন তুলেছে। এই সপ্তাহের শুরুতে রায় সংরক্ষণের পর বুধবার আদালত বলেন, “এই পিটিশনটি প্রত্যাখ্যান করা প্রয়োজন, এবং তাই এটি প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে।

   

এটি আদালতের (High-Court) সময় নষ্ট করেছে, তবে আমরা পিটিশনকারীর উপর কোনো জরিমানা আরোপ থেকে বিরত থাকছি।” পিটিশনটির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেছিলেন প্রবীণ উকিল এবং রাজনৈতিক নেতা প্রকাশ আম্বেদকর, যিনি ড. বি আর আম্বেদকরের নাতি এবং মহা বিকাশ আঘাড়ির সভাপতি। তিনি দাবি করেছিলেন, ২০ নভেম্বর, ২০২৪, ভোটগ্রহণের দিন সন্ধ্যা ৬টার পর মোট ৭৬ লক্ষ ভোট দেওয়া হয়েছিল, যা ৯০টি বিধানসভা কেন্দ্রের ফলাফলের উপর সিদ্ধান্তমূলক প্রভাব ফেলেছে।

আদালতের প্রশ্ন ও পর্যবেক্ষণ

সোমবার শুনানির সময় আদালত পিটিশনকারীর উকিলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছিল। বেঞ্চ জিজ্ঞাসা করে, (High-Court)“এটি কি প্রথমবার যে কোনো নির্বাচনে সন্ধ্যা ৬টার পর ভোট দেওয়া হয়েছে?” আদালত আরও প্রশ্ন করে, লোকসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে একই ধরনের ভোটদানের প্যাটার্ন থাকা সত্ত্বেও কেন কোনো চ্যালেঞ্জ করা হয়নি। এই প্রশ্নের জবাবে ভারতের নির্বাচন কমিশন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের উকিল জানান, সন্ধ্যা ৬টার পর ভোটগ্রহণ কোনো অনিয়ম নয়, বরং এটি ভারতীয় নির্বাচনের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, (High-Court) নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যাঁরা ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত থাকেন, তাঁদের ভোট দেওয়ার আইনি অধিকার রয়েছে, যার ফলে প্রায়ই ভোটগ্রহণের সময় বাড়ানো হয়। আদালত পিটিশনকারীর দাবিকে অগ্রাহ্য করে বলেন, গোটা রাজ্যের নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করার জন্য কোনো যথাযথ ভিত্তি নেই। বিচারপতিরা মনে করেন, পিটিশনটি ভিত্তিহীন এবং এটি আদালতের সময় অপচয় করেছে। তবে, পিটিশনকারীর উপর জরিমানা আরোপ না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে আদালত কিছুটা উদারতা দেখিয়েছে।

পিটিশনের বিষয়বস্তু (High-Court)

চেতন আহিরের পিটিশনে দাবি করা হয়েছিল, ২০২৪ সালের মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে সন্ধ্যা ৬টার পরে অস্বাভাবিকভাবে বেশি ভোট দেওয়া হয়েছে, যা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার উপর প্রশ্ন তুলেছে। পিটিশনে বলা হয়, এই ভোটগুলো ৯০টি বিধানসভা কেন্দ্রের ফলাফলকে প্রভাবিত করেছে।

প্রকাশ আম্বেদকর (High-Court) এই দাবির সমর্থনে যুক্তি দেন, এই ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া নির্বাচনী নিয়ম লঙ্ঘন করেছে এবং ফলাফল বাতিল করা উচিত। তবে, নির্বাচন কমিশনের উকিল এই দাবি খণ্ডন করে বলেন, ভোটারদের অধিকার নিশ্চিত করতে নির্ধারিত সময়ের পর ভোটগ্রহণ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

Advertisements

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

২০২৪ সালের মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে মহাযুতি জোট, যার মধ্যে বিজেপি, শিবসেনা (একনাথ শিন্ডে গোষ্ঠী) এবং এনসিপি (অজিত পাওয়ার গোষ্ঠী) রয়েছে, ২৮৮টি আসনের মধ্যে ২৩০টি আসন জিতে বিপুল জয় পায়। বিজেপি একাই ১৩২টি আসন জিতেছে, শিবসেনা ৫৭টি এবং এনসিপি ৪১টি আসন পেয়েছে।

অন্যদিকে, মহা বিকাশ আঘাড়ি (এমভিএ), যার মধ্যে কংগ্রেস, শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী) এবং এনসিপি (শরদ পাওয়ার গোষ্ঠী) রয়েছে, মাত্র ৪৬টি আসন পেয়েছে। এই ফলাফলের পর প্রকাশ আম্বেদকরের নেতৃত্বে পিটিশন দায়ের করা হয়, যা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

জুলাই মাসে ১৩ দিন বন্ধ থাকবে ব্যাংক, দেখে নিন পূর্ণাঙ্গ ছুটির তালিকা

নির্বাচন কমিশনের অবস্থান

নির্বাচন কমিশনের উকিল আদালতে জানান, (High-Court) ভোটগ্রহণের সময়সীমা অতিক্রম করা কোনো নিয়ম লঙ্ঘন নয়। নির্বাচনী নিয়ম অনুযায়ী, সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে যাঁরা ভোটকেন্দ্রে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন, তাঁদের ভোট দেওয়ার অধিকার রয়েছে। এই প্রক্রিয়া ভারতের প্রতিটি নির্বাচনে প্রচলিত। কমিশন আরও বলে, ৭৬ লক্ষ ভোটের দাবি অতিরঞ্জিত এবং এর কোনো প্রমাণ পিটিশনকারী দাখিল করেনি।

আদালতের রায়ের তাৎপর্য

মুম্বই হাইকোর্টের (High-Court) এই রায় মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। মহাযুতি জোটের জয়কে এই রায় বৈধতা দিয়েছে, এবং মহা বিকাশ আঘাড়ির জন্য এটি একটি ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। আদালতের ‘সময় নষ্ট’ মন্তব্য পিটিশনকারীদের দাবির দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়। তবে, প্রকাশ আম্বেদকর জানিয়েছেন, তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার কথা ভাবছেন।

মুম্বই হাইকোর্টের (High-Court) এই সিদ্ধান্ত ২০২৪ সালের মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের বৈধতা নিশ্চিত করেছে। সন্ধ্যা ৬টার পর ভোটগ্রহণকে অনিয়ম হিসেবে দাবি করা পিটিশনটি ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এই রায় নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতার উপর ভারতের নির্বাচন কমিশনের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। তবে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই বিষয়ে বিতর্ক অব্যাহত থাকতে পারে, বিশেষ করে আগামী দিনে সুপ্রিম কোর্টে আপিলের সম্ভাবনার প্রেক্ষাপটে।