ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে বিশ্বজুড়ে জল্পনা যখন তুঙ্গে, ঠিক তখনই মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স রবিবার এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে জানালেন-ইরানের ৪০০ কেজিরও বেশি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের স্টকপাইল বর্তমানে কোথায় আছে, তা স্পষ্ট নয়। ভ্যান্সের দাবি, “ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলো হয় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, নয়তো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে৷” যদিও তিনি এই বিষয়টি নিয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চিত নন বলেও স্বীকার করেন। তবে, তাঁর মতে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি “গুরুতরভাবে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে”।
এই মন্তব্য এসেছে এমন এক সময়, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে সম্প্রতি ইরানে পরমাণু কেন্দ্রগুলির উপর একাধিক বিমান হামলা চালানো হয়। নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরান ৮৮০ পাউন্ড (প্রায় ৪০০ কেজি) ইউরেনিয়াম ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ করেছিল, যা পরমাণু বোমা তৈরির প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশের নিচে। এর একটি বড় অংশ সংরক্ষিত ছিল ইসফাহান কেন্দ্রটিতে।
ফোর্ডো ছিল মূল টার্গেট
ভ্যান্স জানিয়েছেন, হামলার মূল লক্ষ্য ছিল ভূগর্ভস্থ ও উচ্চ নিরাপত্তাবেষ্টিত ফোর্ডো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ কেন্দ্র। এই মিশনের উদ্দেশ্য ছিল “ফোর্ডো সাইট ধ্বংস করা” এবং অন্যান্য কেন্দ্রগুলোতেও বড় ক্ষতি করা।
“আমরা বিশ্বাস করি, ফোর্ডো কেন্দ্রটি কার্যত অকেজো করে দেওয়া গেছে এবং সেটাই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য,” বলেন ভ্যান্স।
ইসরায়েলের কৌশলগত হামলা uranium stockpile missing
এর আগে, সপ্তাহের শেষ দিকে ইসরায়েলও ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু কেন্দ্র—নাতাঞ্জ, ইসফাহান ও ফোর্ডোতে হামলা চালায়। ইরানের বেশ কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানী এই হামলায় নিহত হয়েছেন বলে সূত্রের দাবি। এই কেন্দ্রগুলো মূলত ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ এবং কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
নাতাঞ্জ ও ফোর্ডো মূলত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ করে, আর ইসফাহান কেন্দ্র সরবরাহ করে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল। ফলে, এই তিনটি স্থাপনায় আঘাত ইরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরির সামর্থ্যে বড়সড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।
বাঙ্কার বোমা ব্যবহার
রবিবার, মার্কিন সেনাবাহিনী তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রচলিত বোমা ব্যবহার করে ইরানের ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলিতে হামলা চালায়। ফোর্ডো কেন্দ্র, যা পাহাড়ের নিচে অবস্থিত, তা টার্গেট করে এই “বাঙ্কার-ব্রাস্টিং মিউনিশন” ব্যবহারের ঘটনা এই প্রথম।
কি হবে সেই ৯০০ পাউন্ড ইউরেনিয়ামের?
ভ্যান্সের কথায়, “আমরা আগামী কয়েক সপ্তাহে ইরান সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসব এই ফুয়েল নিয়ে কী করা হবে তা ঠিক করার জন্য। এটা আমাদের অগ্রাধিকার।”
পরিস্থিতি উদ্বেগজনক, তথ্য জটিল
যদিও হামলার প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির চিত্র এখনো পরিষ্কার নয়। ইরান সরকার এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় সম্পূর্ণ নীরব, যদিও ঘরোয়া সংবাদমাধ্যমে “বহু বিজ্ঞানীর মৃত্যু” এবং “সাইটে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি”র ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলা কেবল ইরানের পরমাণু কর্মসূচির উপর নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতির উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।