নয়াদিল্লি: সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান এখন আরও দৃঢ় ও কৌশলগত। সীমান্তের ওপার থেকে আসা হুমকির জবাব এবার শুধু প্রতিরক্ষা নয়, সরাসরি প্রত্যাঘাতের ভাষায় দেওয়া হচ্ছে। এই নতুন ভারতের অবস্থানকে স্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। জম্মু ও কাশ্মীরের উধমপুরে নর্দার্ন কমান্ডের সেনা জওয়ানদের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর ভারত যে সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তাতে পাকিস্তানকে মাথা নত করতে বাধ্য হতে হয়েছে।”
ভারত নীরব দর্শক নয়
প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, পাকিস্তান বারবার ভারতের ভেতরে অস্থিরতা সৃষ্টির চক্রান্ত করে এসেছে, সন্ত্রাসবাদকে ব্যবহার করে ভারতের স্থিতি ও ঐক্যে আঘাত হানার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এবার আর ভারত নীরব দর্শক নয়। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, “আমরা শুধু তাদের ষড়যন্ত্র ভেস্তে দিয়েছি তা-ই নয়, এমন পাল্টা জবাব দিয়েছি যে তারা মাথা নিচু করে যুদ্ধবিরতির আবেদন জানাতে বাধ্য হয়েছে। ভবিষ্যতে ভারতের মাটিতে কোনও জঙ্গি হানার চেষ্টা হলে তার মূল্য পাকিস্তানকে চরমভাবে দিতে হবে।”
‘অপারেশন সিঁদুর’-কৌশলগত সামরিক অভিযান pak had to kneel down say rajnath
প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যের কেন্দ্রে রয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’-একটি কৌশলগত সামরিক অভিযান যা ভারত ২০২৫ সালের ৭ মে শুরু করেছিল পহেলগাঁও হামলার পরপরই। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সূত্র অনুযায়ী, এই অভিযানে ভারতের সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তানের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি এবং ১১টি সামরিক পরিকাঠামো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে। ভারতীয় সেনা সূত্রের দাবি, এই অভিযানে ৩৫ থেকে ৪০ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে ১০ মে ভারতের কাছে যুদ্ধবিরতির অনুরোধ জানায়-এই তথ্যই অপারেশনের সাফল্য ব্যাখ্যা করে।
রাজনাথ সিং স্পষ্ট করে জানান, অপারেশন সিঁদুর এখানেই শেষ হয়নি। এটি কেবলমাত্র একটি ‘বিরতি’। তাঁর কণ্ঠে ছিল দৃঢ় প্রত্যয়, “যদি আবার আমাদের ভূখণ্ডে কোনও সন্ত্রাসবাদী হামলার চেষ্টা করা হয়, তবে আমাদের জবাব হবে আরও কঠোর, আরও সুসংগঠিত এবং আরও ধ্বংসাত্মক।”
অপারেশন সিঁদুর গোটা বিশ্বের কাছে ভারতের বার্তা
প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য ছিল কেবল সেনাকে প্রেরণা জোগানোর জন্য নয়, বরং ভারতের সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী নীতির এক সুস্পষ্ট বিবৃতি। তিনি বলেন, “অপারেশন সিঁদুর গোটা বিশ্বের কাছে ভারতের বার্তা স্পষ্ট করে দিয়েছে৷ নতুন ভারত আর নিরুত্তর থাকবে না। এখন প্রতিটি আঘাতের জবাব কৌশলে ও শক্তিতে দেওয়া হবে। ভারত আজ আত্মরক্ষার নামে বসে নেই, বরং আক্রমণের আগে প্রতিরোধ ও প্রতিঘাতের রণকৌশলে বিশ্বাস রাখে।”
তিনি ভারতীয় সেনা, বায়ুসেনা, নৌসেনা এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলির নির্ভুল সমন্বয়ের প্রশংসা করেন। তাঁদের অসীম সাহস ও পেশাগত নিষ্ঠাকে কুর্নিশ জানিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “এই অপারেশন কেবল একটি সামরিক পদক্ষেপ নয়, এটি একটি কৌশলগত বার্তা-যে কেউ ভারতের অখণ্ডতা বা সার্বভৌমত্বে আঘাত হানার চেষ্টা করবে, তাকে উপযুক্ত জবাব দিতে ভারত প্রস্তুত এবং সক্ষম।”
রাজনাথ সিং আর কী বললেন?
এদিন আন্তর্জাতিক যোগ দিবস ২০২৫-এর প্রাক্কালে সেনা ছাউনিতে আয়োজিত বারাখানায় উপস্থিত সেনাদের উদ্দেশে রাজনাথ সিং বলেন, “শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা একজন সৈনিকের জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ। যোগ শুধু শরীর নয়, মনও শৃঙ্খলিত রাখে। যদি আপনারা শক্তিশালী থাকেন, আমাদের সীমান্ত শক্তিশালী থাকবে। আর সীমান্ত যখন মজবুত, তখনই ভারত থাকে অটল।”
এই অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী, নর্দার্ন কমান্ডের জিওসি-ইন-চিফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল প্রতীক শর্মা-সহ শীর্ষ সেনা কর্তৃপক্ষ উপস্থিত ছিলেন।
যে ভাষায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং কথা বলেছেন, তাতে একথা স্পষ্ট-সন্ত্রাসবাদকে রুখতে ভারত এখন শুধু প্রহরী নয়, প্রয়োজনে প্রহারকেও বেছে নিতে পিছপা হবে না। অপারেশন সিঁদুরের মতো অভিযানের মধ্য দিয়ে ভারত তার নতুন ভূমিকায় আত্মপ্রকাশ করেছে-একটি প্রতিশ্রুতিশীল, আত্মবিশ্বাসী এবং সুরক্ষিত জাতি হিসেবে।