পাকিস্তানেও পড়তে যান ভারতীয়রা, অবাক করা পরিসংখ্যান শিক্ষামন্ত্রকের

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলমান রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা সত্ত্বেও, অবাক করা একটি তথ্য সম্প্রতি উঠে এসেছে। ভারতীয় ছাত্রদের (Indian Students) পাকিস্তানে শিক্ষার…

Indian Students in Pakistan: Education Ministry Reveals Surprising Decline from 2019-2024

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলমান রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা সত্ত্বেও, অবাক করা একটি তথ্য সম্প্রতি উঠে এসেছে। ভারতীয় ছাত্রদের (Indian Students) পাকিস্তানে শিক্ষার জন্য যাওয়ার সংখ্যা কয়েক বছর ধরে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, তবে এই সংখ্যা এখনো শূন্য নয়। ভারতের শিক্ষা মন্ত্রণালয় (MoE) থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ৬৭০ জন ভারতীয় ছাত্র-ছাত্রী পাকিস্তানে পড়াশোনার জন্য গিয়েছিলেন। তবে ২০২৪ সালে এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১১০-এ। এই হঠাৎ কমে যাওয়া পরিসংখ্যান বিদেশ মন্ত্রকের মধ্যেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

পরিসংখ্যানের ধরনধারণ
২০১৯ সালে শুরু হওয়া এই পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২০ সালে সংখ্যা কমে ৫০৫-এ নেমে আসে। ২০২১ সালে এটি হঠাৎ করে ৬৬-এ নেমে যায়, যা বিশেষজ্ঞদের মতে পাকিস্তানে চলমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও ভারতীয় সরকারের সতর্কবাণীর প্রভাব হতে পারে। ২০২২ ও ২০২৩ সালে সংখ্যা যথাক্রমে ৩৯৬ ও ৩৩১-এ দাঁড়ায়, কিন্তু ২০২৪ সালে এটি আরও কমে ১১০-এ পৌঁছায়। এই তথ্যগুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন প্রশ্ন তুলছেন—এই ১১০ জন কারা? তারা কী শিক্ষা নিতে যাচ্ছেন? এবং এই বিষয়ে ভারতীয় সরকারের কী নীতি?

   

সরকারি সতর্কবাণী ও নিরাপত্তা উদ্বেগ
২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (UGC) ও অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিকাল এডুকেশন (AICTE) একটি যৌথ বিজ্ঞপ্তি জারি করে ভারতীয় ছাত্রদের পাকিস্তানে উচ্চশিক্ষার জন্য না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে, পাকিস্তানে অর্জিত ডিগ্রী ভারতে স্বীকৃত হবে না এবং এমন শিক্ষার প্রভাবে ভারতের চাকরি বা আরও উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাওয়া যাবে না। এই সিদ্ধান্তের পেছনে নিরাপত্তা উদ্বেগ ও ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে জটিল রাজনৈতিক সম্পর্কের প্রভাব রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ২০২১ সালে সংখ্যার হঠাৎ কমে যাওয়া এই সতর্কবাণীর সরাসরি ফলাফল হতে পারে।

কেন যাচ্ছেন এখনো কিছু ভারতীয়?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, কিছু ছাত্র-ছাত্রী হয়তো পাকিস্তানে নির্দিষ্ট বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে আগ্রহী, যা ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাওয়া যায় না। তবে এই বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে যে, কিছু ক্ষেত্রে এই ভ্রমণ নিরাপত্তা-সম্পর্কিত প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। সামাজিক মাধ্যমে এই বিষয়ে বিভিন্ন মন্তব্য উঠে এসেছে, যেখানে কিছু ব্যবহারকারী মজা করে বলছেন যে, “শायद তারা বোমা বিস্ফোরণ বা ড্রোন চালানো শিখতে যাচ্ছে!” এই ধরনের মন্তব্যগুলো রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রতিফলন হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

Advertisements

ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের প্রেক্ষাপট
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর থেকে সংঘাত চলছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা এই সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছিল। সাম্প্রতিক সময়ে, ২০২৫ সালে “অপারেশন সিন্দুর” এর মাধ্যমে ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তান সীমান্তে নয়টি আতঙ্কবাদী ক্যাম্প ধ্বংস করেছে, যা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এই পটভূমিতে শিক্ষার্থীদের ভ্রমণ কমে যাওয়া স্বাভাবিক, তবে এখনো কিছু মানুষের যাওয়া বিস্ময়কর।

ভবিষ্যৎ চিন্তা ও সমাধান
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতীয় সরকারকে এই ১১০ জনের পেছনে যে কারণগুলো রয়েছে তা তদন্ত করা উচিত। এছাড়া, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য নিয়ে আরও গভীর গবেষণা করা দরকার, যাতে এই প্রবণতা বুঝতে পারা যায়। একই সঙ্গে, ভারতের নিজস্ব শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে হবে, যাতে ছাত্র-ছাত্রীদের বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন না হয়।