ওয়াশিংটন: ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সাম্প্রতিক উত্তেজনার পর অবশেষে স্বস্তির সুর শোনা গেল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কণ্ঠে। তবে এবার নিজেকে কৃতিত্ব না দিয়ে দুই দেশের নেতার কৌশলী সিদ্ধান্তের প্রশংসা করলেন তিনি। বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা ও পরিণত নেতৃত্বের ফলেই যুদ্ধ থেমেছে-এমনটাই মত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের।
আসিম মুনিরকে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ
বুধবার হোয়াইট হাউসে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরকে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, “আমি ওঁকে (মুনির) ধন্যবাদ জানাতে চেয়েছি যুদ্ধ না চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীকেও ধন্যবাদ জানাই। তারা দু’জনই অত্যন্ত বুদ্ধিমান নেতা। তারা বুঝেছেন, এই যুদ্ধটা পারমাণবিক দিকেও গড়াতে পারত। তাই থামার সিদ্ধান্তটা সঠিক ও প্রয়োজনীয় ছিল।”
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম সামরিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। ১০ মে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে। এরপর থেকেই ট্রাম্প বারবার বলছিলেন, এই সমঝোতার পেছনে তাঁর ভূমিকা ছিল। তিনি নাকি দুই দেশকে বোঝান যদি সংঘর্ষ থামে, তাহলে আমেরিকা “অনেক বাণিজ্য” করবে।
কিন্তু বুধবারের বক্তব্যে ট্রাম্পের সুরে বদল। নিজেকে সরিয়ে রেখে এবার আলোচনার মঞ্চে জায়গা দিলেন মোদী ও শরিফ প্রশাসনকে। “তারা নিজেরাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি খুশি যে তারা যুদ্ধ চালিয়ে যায়নি,” বললেন প্রেসিডেন্ট।
ইরান প্রসঙ্গেও মন্তব্য Trump credits India-Pak
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “পাকিস্তানিরা ইরানকে খুব ভালো চেনে। তারা খুশি নয়, আর সেটা ইজরায়েলের সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত নয়। ওরা দুই দেশকেই চেনে। কিন্তু ইরান নিয়ে ওদের স্পষ্ট উদ্বেগ আছে এবং ওরা আমার অবস্থানের সঙ্গেই একমত।”
ট্রাম্প-মোদী বৈঠক হয়নি, ফোনে ৩৫ মিনিট কথা
G7 শীর্ষ সম্মেলনের সময় কানাডার কানানাসকিসে মোদী ও ট্রাম্পের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রাম্প পূর্ব নির্ধারিত সময়ের আগেই ওয়াশিংটনে ফিরে আসায় সরাসরি বৈঠক হয়নি। পরিবর্তে ফোনে ৩৫ মিনিট কথা বলেন দুই নেতা।
ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি স্পষ্টভাবে জানান, “অপারেশন সিঁদুর”-এর সময় বা পরে কোনও পর্যায়ে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি, কিংবা মার্কিন মধ্যস্থতা নিয়ে আলোচনা হয়নি।
তিনি আরও জানান, “ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে দুই দেশের সেনাবাহিনীর নিজস্ব যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে হয়েছে। ইসলামাবাদের তরফ থেকেই প্রস্তাব আসে।”
টেকঅ্যাওয়ে
ট্রাম্প সাধারণত আন্তর্জাতিক উত্তেজনা প্রশমনের ক্ষেত্রে নিজেকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তুলে ধরেন। তবে এই প্রথম ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতিতে তিনি সরাসরি দুই দেশের নেতৃত্বের কৃতিত্ব দিলেন। এটি যেমন কূটনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ভবিষ্যতের ভারত-আমেরিকা ও পাকিস্তান-আমেরিকা সম্পর্কের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক।