ভারতের বিদেশ নীতি এবং কূটনীতিতে ‘ত্রিমুখী আঘাত’ (triple jhatka) লেগেছে বলে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ (jairam-ramesh) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে টেলিফোনিক আলোচনার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে রমেশ দাবি করেছেন, পাকিস্তানের ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির, যিনি পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পেছনে উস্কানিমূলক, উত্তেজক এবং ভড়কানো বক্তব্যের জন্য দায়ী, তাকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে একান্তে বিশেষ মধ্যাহ্নভোজের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই ঘটনাকে তিনি ভারতীয় কূটনীতির জন্য একটি ‘বড় ধাক্কা’ বলে অভিহিত করেছেন এবং সরকারের নীরবতার সমালোচনা করেছেন।
‘ত্রিমুখী আঘাত’ কী?
জয়রাম রমেশ (jairam-ramesh) সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “ভারতীয় পররাষ্ট্রনীতি এবং কূটনীতি তিনটি বড় ধাক্কা খেয়েছে। প্রথমত, ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির, যার উস্কানিমূলক, উত্তেজক এবং ভড়কানো বক্তব্য পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। তাকে আজ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে একান্তে বিশেষ মধ্যাহ্নভোজের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এটি ভারতীয় কূটনীতির জন্য একটি বড় ধাক্কা। আমরা এ বিষয়ে নীরব রয়েছি, কোনো আপত্তি জানাইনি।”
দ্বিতীয়ত, রমেশ (jairam-ramesh) উল্লেখ করেন, মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল মাইকেল কুরিল্লা পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াইয়ে ‘অসাধারণ সহযোগী’ (phenomenal partner) বলে প্রশংসা করেছেন, যেখানে ভারত পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের ‘প্রধান পৃষ্ঠপোষক’ (phenomenal perpetrator) বলে মনে করে। “মাইকেল কুরিল্লা, যিনি মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান, বলেছেন পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াইয়ে অসাধারণ সহযোগী। আমরা বলছি পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক,” রমেশ যোগ করেন।
তৃতীয়ত, তিনি ইঙ্গিত দেন যে, ১০ মে থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ১৪ বার দাবি করেছেন যে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘটিয়েছেন এবং এর জন্য বাণিজ্যকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। “১০ মে থেকে ১৪ বার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন যে তিনি যুদ্ধবিরতি ঘটিয়েছেন, বাণিজ্যকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন, ভারত ও পাকিস্তানকে একত্র করেছেন,” রমেশ বলেন।
মোদী-ট্রাম্প টেলিফোনিক আলোচনা
বুধবার (১৮ জুন, ২০২৫), পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কানাডায় অনুষ্ঠিত জি৭ শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ৩৫ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে টেলিফোনিক আলোচনা করেছেন। এই আলোচনায় মোদী ট্রাম্পকে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর বিষয়ে বিস্তারিত জানান এবং স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে সমস্যার ক্ষেত্রে কখনো তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা গ্রহণ করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না।
মিসরি আরও বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদী ট্রাম্পকে (jairam-ramesh) স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে এই পুরো ঘটনাক্রমে কখনোই ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি বা পাকিস্তানের সঙ্গে মধ্যস্থতার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সামরিক পদক্ষেপ বন্ধের বিষয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি আলোচনা হয়েছে, যা পাকিস্তানের অনুরোধে হয়েছে।”
কংগ্রেসের দাবি: সংসদের বিশেষ অধিবেশন ও সর্বদলীয় বৈঠক
জয়রাম রমেশ (jairam-ramesh) বিরোধী দলের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর উচিত সংসদের একটি বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা এবং ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ৩৫ মিনিটের আলোচনার বিষয়ে দেশকে অবহিত করা। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নীরব ছিলেন।
এর কোনো প্রতিবাদ করা হয়নি। আজ আমাদের বলা হচ্ছে যে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে ৩৫ মিনিট ধরে কথা বলেছেন এবং পররাষ্ট্র সচিব যা বলেছেন, তা তিনি বলেছেন। সংসদে একই কথা বলুন। সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকুন…কালই সর্বদলীয় বৈঠক ডাকুন…এবং ট্রাম্পের কাছে যা বলেছেন, তা বলুন। আমরা সংসদে বিতর্ক চাই, গঠনমূলক বিতর্ক চাই, সর্বদলীয় বৈঠক চাই। আমরা ঐক্য ও সংহতি দেখাতে চাই।”
রমেশ (jairam-ramesh) আরও বলেন, ট্রাম্পের দাবি যে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘটিয়েছেন, তা প্রধানমন্ত্রী মোদী ৩৭ দিন ধরে খণ্ডন করেননি। “৩৭ দিন ধরে প্রধানমন্ত্রী কিছুই বলেননি। আজ আমাদের বলা হচ্ছে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে ৩৫ মিনিট কথা বলেছেন,” তিনি বলেন।
পহেলগাঁও হামলা ও অপারেশন সিঁদুর
২২ এপ্রিল, ২০২৫-এ জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও একটি জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যার মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন হিন্দু পর্যটক। এই হামলার জবাবে ভারত ৭ মে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি ঘাঁটিতে নির্ভুল হামলা চালায়, যা ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে পরিচিত। এই অপারেশনে ১০০-এর বেশি জঙ্গি নিহত হয় এবং জৈশ-ই-মোহাম্মদ ও লস্কর-ই-তৈবার মতো জঙ্গি সংগঠনের ঘাঁটি ধ্বংস হয়।
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের উস্কানিমূলক বক্তব্য এই হামলার পটভূমি তৈরি করেছিল বলে ভারতের অভিযোগ। তবুও, মুনিরকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজের আমন্ত্রণ জানানো ভারতের কূটনৈতিক ব্যর্থতার ইঙ্গিত দেয় বলে কংগ্রেস দাবি করেছে।
‘স্বাস্থ্যসাথীর দুর্নীতি নয় চাই আয়ুষ্মান ভারত’, দাবি মালব্যর
ভারতের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা
পহেলগাঁও হামলার পর, ভারত বিশ্ব মঞ্চে পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার জন্য সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল ৩৩টি দেশের রাজধানীতে পাঠায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ব্রাসেলসে বলেন, ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে এবং জঙ্গি ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করবে না।
তবে, মার্কিন (jairam-ramesh) সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধানের পাকিস্তানের প্রশংসা এবং মুনিরের মার্কিন সফর ভারতের এই প্রচেষ্টার উপর প্রশ্নচিহ্ন তুলেছে। কংগ্রেস নেতা পবন খেরাও বলেন, “আসিম মুনিরের সফরের খবর সত্য। এটি ভারতের কূটনীতির জন্য একটি ধাক্কা।”
কংগ্রেসের অভিযোগ, মোদী সরকারের পররাষ্ট্রনীতি ব্যর্থতার কারণে ভারত আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। আসিম মুনিরের মার্কিন সফর, কুরিল্লার পাকিস্তানের প্রশংসা এবং ট্রাম্পের মধ্যস্থতার দাবি ভারতের কূটনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করেছে। বিরোধী দলের দাবি, প্রধানমন্ত্রী মোদীর উচিত দেশের সঙ্গে স্বচ্ছভাবে এই বিষয়ে আলোচনা করা এবং সংসদে বিতর্কের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য প্রদর্শন করা। এই ঘটনাক্রম ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক এবং ভারতের বিশ্ব মঞ্চে অবস্থান নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।