এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED) অবৈধ অনলাইন বেটিং অ্যাপের তদন্তে নতুন মোড় নিয়েছে। ক্রিকেটার হরভজন সিং, সুরেশ রায়না এবং অভিনেত্রী উর্বশী রাউতেলার নাম উঠে এসেছে। এনডিটিভির খবর অনুযায়ী, ১এক্সবেট-এর মতো নিষিদ্ধ প্ল্যাটফর্মের প্রচারে জড়িত থাকার অভিযোগে এই সেলিব্রিটিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মগুলো ‘১এক্সব্যাট’ নামে ছদ্মবেশে বিজ্ঞাপন চালায়, যেখানে ওয়েব লিঙ্ক ও কিউআর কোডের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের অবৈধ বেটিং সাইটে পাঠানো হয়। এটি ভারতীয় আইনের সরাসরি লঙ্ঘন। ইডি জানিয়েছে, এই প্ল্যাটফর্মগুলো দক্ষতা-ভিত্তিক খেলা বলে দাবি করলেও, এগুলোর অ্যালগরিদম এমনভাবে তৈরি যে ভারতীয় আইনে এগুলো ‘জুয়া’ হিসেবে বিবেচিত হয়।
যুবরাজ সিং-এর মতো অন্যান্য সেলিব্রিটিদের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে এই প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, যা মানুষকে প্রতারিত করছে। প্রাথমিক তদন্তে ইডি জানিয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তি আইন, ফরেন এক্সচেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট এবং প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট-সহ একাধিক আইন লঙ্ঘিত হয়েছে। হরভজন ও রায়নার প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি, আর উর্বশী রাউতেলা ও সোনু সুদের প্রতিনিধিরা প্রশ্নের কোনো জবাব দেয়নি। ইডি সূত্রে জানা গেছে, বিজ্ঞাপন প্রচারে ৫০ কোটি টাকার বেশি অর্থ বিভিন্ন মিডিয়া সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে।
অবৈধ বেটিং অ্যাপের বিরুদ্ধে এই অভিযান দেশব্যাপী চলমান। গত মে মাসে তেলঙ্গানা পুলিশ রানা দগ্গুবাতি ও প্রকাশ রাজ-সহ ২৫ জন অভিনেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। অভিযোগকারী জানিয়েছেন, এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন হচ্ছে, যা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনছে। দগ্গুবাতি ও রাজ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তারা বর্তমানে এই প্ল্যাটফর্মগুলোর প্রচার করেন না। তিনি আগে যখন করেছিলেন, তখন তা এমন অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল যেখানে দক্ষতা-ভিত্তিক গেম আইনত বৈধ। দগ্গুবাতির মুখপাত্র জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্ট এই গেমগুলোকে জুয়া থেকে আলাদা বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।
২০২৩-২৪ সালে মহাদেব অনলাইন বেটিং কেলেঙ্কারি ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়। এতে ছত্তিশ্বড়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলের নাম জড়ায়। তিনি অভিযোগকে ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। মহাদেব অ্যাপের প্রোমোটাররা ‘ফেয়ারপ্লে’ নামে একটি সহযোগী অ্যাপ তৈরি করেছিল, যা এখন দুবাই থেকে পরিচালিত হচ্ছে। ইডি-র তথ্য অনুযায়ী, মহাদেব অ্যাপ থেকে অবৈধ আয় ৬,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে অবৈধ বেটিং অ্যাপ ব্যবসা ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের এবং বছরে ৩০ শতাংশ হারে বাড়ছে। প্রায় ১১ কোটি ভারতীয় এই অ্যাপগুলো প্রতিদিন ব্যবহার করেন। এর সঙ্গে জড়িত আর্থিক প্রতারণা ১,০০০-এর বেশি আত্মহত্যার কারণ হয়েছে। এর মধ্যে স্কুলছাত্ররাও রয়েছে।