মুর্শিদাবাদ, ১২ নভেম্বর: রাজধানী দিল্লির লালকেল্লা বিস্ফোরণের রেশ এখনো কাটেনি, এর মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় মিলল নাশকতার নতুন ইঙ্গিত। বুধবার সকালে জেলার ডোমকল, গুড়িয়া এবং সালার এলাকায় পরপর বেশ কয়েকটি তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হয়েছে আরও ৮০টি শক্তিশালী বোমা। এই উদ্ধার অভিযান চালায় জেলা পুলিশের বিশেষ টিম।
এর আগেও গত এক সপ্তাহে একই জেলায় ১৫০ ও ২০০টি বোমা উদ্ধার হয়েছিল বিভিন্ন এলাকা থেকে। ফলে মোট উদ্ধার হওয়া বোমার সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ৪৩০-এ, যা প্রশাসনের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রাত থেকেই এই অঞ্চলে চলছিল ইন্টেলিজেন্স-ভিত্তিক অপারেশন, যার উদ্দেশ্য ছিল সাম্প্রতিক কিছু নাশকতামূলক ঘটনার সঙ্গে সম্ভাব্য যোগসূত্র খুঁজে বের করা।
বাড়ি ফিরেও সেই চেয়ারে রাত কাটল পার্থর, চোখে এল জল
পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেন, “যেভাবে ধারাবাহিকভাবে গ্রামীণ এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ বোমা উদ্ধার হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে একটি বড় নাশকতার ছক তৈরি হচ্ছিল। পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হতে পারত যদি সময়মতো পদক্ষেপ না নেওয়া হতো।”
উদ্ধার হওয়া বোমাগুলির মধ্যে রয়েছে দেশি হাতবোমা ও আধুনিক টাইমারযুক্ত ইম্প্রোভাইজড ডিভাইস (IED)। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে বোমাগুলি নিষ্ক্রিয় করার কাজ শুরু করেছে। সূত্রের দাবি, বোমাগুলি মূলত নির্বাচনের আগে গোষ্ঠীগত সংঘর্ষ বা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, মুর্শিদাবাদের একাধিক গ্রামে ‘স্লিপার সেল’-এর মতো ছোট ছোট নাশকতা চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে, যারা বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠী বা অপরাধচক্রের হয়ে কাজ করছে। তদন্তকারীরা এখন খুঁজে দেখছেন, এই বোমা তৈরির উপকরণ কোথা থেকে এসেছে, এবং কে বা কারা এর পেছনে অর্থ ও লজিস্টিক সরবরাহ করেছে।
গ্রামের মানুষ এখন চরম আতঙ্কে। ডোমকলের এক বাসিন্দা বলেন, “আমরা তো ভেবেছিলাম এসব শুধু খবরের কাগজে পড়ি, কিন্তু এখন নিজের এলাকায় এসব ঘটছে দেখে ভয় লাগছে। পুলিশ না এলে হয়তো ভয়াবহ কিছু ঘটতে পারত।”
রাজ্য গোয়েন্দা দফতর ইতিমধ্যেই স্থানীয় থানাগুলিকে সতর্ক করেছে, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ মুর্শিদাবাদ জেলা বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি—এখান দিয়ে চোরাচালান ও বেআইনি পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি অস্ত্র ও বিস্ফোরক পাচারের আশঙ্কাও রয়েছে।
একজন সিনিয়র পুলিশ অফিসার বলেন, “এটি নিছক স্থানীয় গোষ্ঠীর লড়াই নয়, বরং এর পেছনে বড়সড় সংগঠিত নেটওয়ার্কের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। দিল্লির বিস্ফোরণের ঘটনার পর গোটা দেশেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে বাংলার এই বোমা উদ্ধার আরও তাৎপর্যপূর্ণ।”
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় জড়িতদের কোনোভাবেই ছাড়া হবে না। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিছু পরিত্যক্ত ঘর ও গোডাউনে বোমাগুলি মজুত করে রাখা হয়েছিল, যেখান থেকে রাতে তা স্থানান্তর করার পরিকল্পনা ছিল।
বোমা উদ্ধারের এই ধারাবাহিক ঘটনাগুলি আবারও প্রশ্ন তুলেছে—বাংলা কি ধীরে ধীরে নাশকতার নতুন কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে? নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিল্লির ঘটনার ছায়া বাংলার গ্রামাঞ্চলেও পড়ছে। তাই এখন সময় এসেছে শুধু প্রশাসনিক তৎপরতা নয়, বরং গোয়েন্দা তথ্যের বিনিময় ও জনসচেতনতা বাড়ানোর। যেখানে রাজধানী আতঙ্কে কাঁপছে, সেখানে সীমান্তঘেঁষা রাজ্যে বারবার এই ধরনের বিস্ফোরক উদ্ধার নিঃসন্দেহে সতর্কবার্তা দিচ্ছে। বাংলার শান্তি-নিরাপত্তা এখন কঠিন পরীক্ষার মুখে।


