BSF: বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ চোরাচালান রুখবে সুন্দরবনের ভাসমান বর্ডার আউটপোস্ট

পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন। ভারতীয় সুন্দরবনের অপরদিকে আবার বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক জল সীমান্ত। রায়মঙ্গল, ইছামতি, সাহেবখালি ও কালিন্দী সহ একাধিক নদী ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে…

পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন। ভারতীয় সুন্দরবনের অপরদিকে আবার বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক জল সীমান্ত। রায়মঙ্গল, ইছামতি, সাহেবখালি ও কালিন্দী সহ একাধিক নদী ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বয়ে চলেছে। এই জলপথে কড়া নিরাপত্তার বেষ্টনী রয়েছে বিএসএফের। সীমান্ত নিরাপত্তায় তিনটি ভাসমান বর্ডার আউটপোস্ট পাচ্ছে বিএসএফ।

নদীপথে নজরদারি সমস্যার সমাধানে ও নিরাপত্তাকে আরো ঢেলে সাজাতে সুন্দরবন পেল বিএসএফের নতুন তিনটি ভাসমান বর্ডার আউটপোস্ট সীমা প্রহরী নর্মদা, সুতলেজ ও কাবেরী।

সীমান্তরক্ষী বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে অনুপ্রবেশ, অবৈধ পাচার ও চোরাচালানের মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটে বসিরহাটের হেমনগর, হিঙ্গলগঞ্জ ও হাসনাবাদ সহ সুন্দরবনের একাধিক থানা এলাকায়। যা দেশের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার ক্ষেত্রে যথেষ্ট চিন্তার। বর্তমানে বসিরহাট মহকুমার সুন্দরবনের বিএসএফের যে আউটপোস্ট গুলি রয়েছে সেগুলি সব কটি স্থলভাগে। কিছু স্পিডবোট ও ছোট ভাসমান তরী নিয়ে বিএসএফ এতদিন পর্যন্ত বর্ডারের বিভিন্ন এলাকায় পেট্রোলিং করতো।

এবার থেকে জল সীমান্তের আউট পোস্ট থেকে নজরদারি চলবে। ভাসমান বর্ডার আউটপোস্ট নদীর মধ‍্যে অবস্থিত আন্তর্জাতিক সীমানা সংলগ্ন বিএসএফের অফিস।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ২০১৯ সালে মোট ৯টি ভাসমান আউটপোস্টের অর্ডার দিয়েছিল কোচিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডকে। তিন ক্ষেপে তিনটি তিনটি করে এই ভাসমান বর্ডার আউটপোস্ট (ফ্লোটিং বর্ডার আউটপোস্ট) সরবরাহের কথা ছিল কোচিন শিপইয়ার্ডের। চলতি বছরের ২৬শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে তিনটি অত্যাধুনিক জাহাজ বিএসএফের হাতে তুলে দেয় কোচিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড। সেই তিনটি তরীর নাম সীমা প্রহরী নর্মদা, সীমা প্রহরী কাবেরী ও সীমা প্রহরী সুতলেজ। এই জাহাজগুলি ৪৬ মিটার লম্বা ও ১২ মিটার চওড়া। চারটি পেট্রোলিং বা স্পিড বোট বহনে সক্ষম এই জাহাজ।

প্রসঙ্গতঃ সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায় স্বচ্ছ পানীয় জলের বড্ড অভাব। নোনাজল, যা পানের যোগ্য নয়। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে কখনো বসিরহাট থেকে কখনোবা টাকি থেকে স্বচ্ছ পানীয় জল ট্যাঙ্কে করে ভরে নিয়ে গিয়ে বিএসএফের বিভিন্ন আউটপোস্ট সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এই নতুন ভাসমান তরী আসার পর সেই সমস্যার সমাধান হলো।

পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে ১০০ টন ওজন পর্যন্ত স্বচ্ছ জল নিয়ে যেতে পারবে পাশাপাশি ২৫ টন ওজনের ডিজেল ও ১৫ টনের পেট্রোলও বহন করতে সক্ষম এই তরী। আধিকারিক ও আধাসেনা জওয়ান মিলে মোট ৩৮ জনকে নিয়ে সুন্দরবনের এক জল সীমান্ত থেকে আরেক জল সীমান্তে পাড়ি দিতে পারবে।

এই জলসীমান্ত আউটপোস্ট জাহাজে থাকবে থাকার জন‍্য ঘর, জিম, থাকবে শৌচালয়, রান্না করার জায়গা। এই জাহাজ গুলির সর্বোচ্চ গতিবেগ ৮ নট প্রতি ঘন্টা। এক একটি এই তরী তৈরি করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩৯ (৩৮.৭১) কোটি টাকা।

বাংলাদেশ সংলগ্ন এলাকায় সীমান্ত সুরক্ষা বাড়াতে বিএসএফের পরিকল্পনা ছিল বসিরহাট মহকুমার নদীমাতৃক সুন্দরবনের সীমান্ত এলাকা গুলিতে আরো যাতে স্থায়ী আউটপোস্ট বানানো যায়। কিন্তু এই ভাসমান বর্ডার আউটপোস্টের আসার ফলে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর শুধুমাত্র এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকবে না। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্ত লাগোয়া সুন্দরবনের প্রতিটি প্রান্তে গিয়ে এরা নজরদারি চালাতে পারবে।

শুধুমাত্র সুন্দরবন নয় গুজরাট ও পাকিস্তান সীমান্তের কচ্ছের স্যার ক্রিক খাঁড়িতেও এইরকম ছটি ভাসমান আউটপোস্ট মোতায়েন করা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে সুন্দরবন তিনটি ভাসমান আউটপোস্ট পেলেও আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আরো তিনটি তরী পাবে। সে ক্ষেত্রে সুন্দরবনের মোট ভাসমান বর্ডার আউটপোস্টের সংখ্যা দাঁড়াবে ৬টি। এই মুহূর্তে সারাদেশে সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর কাছে মোট ভাসমান বর্ডার আউট পোষ্টের সংখ্যা রয়েছে ৯টি। এই তিনটি জাহাজ যোগ হলে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে বারোয়।

সেই তিনটি ফ্লোটিং বর্ডার আউটপোস্টের উদ্বোধন করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ্। তিনি হেলিকপ্টারে কলকাতা থেকে হিঙ্গলগঞ্জে আসেন। এই তিনটি ভাসমান তরীকে প্রাথমিকভাবে রায়মঙ্গল নদীর টি-জংশন, কালিন্দী ও সাহেবখালি নদীর সংযোগস্থল লেবুখালী ও ইছামতি নদীর হিঙ্গলগঞ্জে মোতায়েন করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএসএফের। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজন অনুযায়ী এদের স্থান পরিবর্তন করা হতে পারে।