ভারত গত ১২ বছর ধরে দেশের মাটিতে কোনো টেস্ট সিরিজ হারেনি। দেশের মাটিতে টানা ১৮টি সিরিজ জয়ের রেকর্ডও গড়েছে, যা এককথায় অনন্য। তবে ২০২৪ সালে নিউজিল্যান্ডের কাছে পরাজয়ের ফলে এই ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েছে। প্রথমে বেঙ্গালুরুতে ৮ উইকেটে পরাজিত হয়ে, তারপর পুনেতে ১১৩ রানে হার স্বীকার করে ভারত এই সিরিজ ২-০ ব্যবধানে হেরে যায়। এই পরাজয়ের পর (IND vs NZ 2nd Test) স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে একসময়ের ভারতীয় দলের খেলোয়াড় ও কোচ গৌতম গম্ভীরের ভূমিকা নিয়ে। গম্ভীরের অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক কৌশল এই পরাজয়ের অন্যতম কারণ হিসাবেই মনে করছেন ক্রিকেট সমালোচকরা।
নিউজিল্যান্ড সিরিজের আগে এবং চলাকালীন সময়ে কোচ গম্ভীর আক্রমণাত্মক খেলার ওপর জোর দেন এবং বলেছিলেন যে, তাঁর লক্ষ্য শুধুমাত্র জয়। এমন একটি অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক মানসিকতা প্রয়োগ করা হয় যা ইংল্যান্ডেও ব্যবহৃত হয়, যাকে ‘বাজবল’ হিসেবে অভিহিত করেছে ক্রিকেট বিশ্ব। নান্দনিকতা থেকে অনেকটাই দূরে থাকা যদিও এই অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক কৌশল ইংল্যান্ডকে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (WTC) টেবিলের ষষ্ঠ স্থানে নামিয়ে দিয়েছে এবং ফাইনালের স্বপ্নও প্রায় ভেঙে দিয়েছে। ভারতের ক্ষেত্রেও এর নেতিবাচক প্রভাবই লক্ষ্য করা গেল। গম্ভীরের এই কৌশল বুমেরাং হয়েই পরাজয়ের মর্মান্তিকতা বয়ে নিয়ে এল ভারতের কাছে।
India lose a Home test series after 12 Years
Newzealand defeat us without Kane williumson and Trent boultGautam Gambhir and Rohit Sharma making every impossible things possible….
The reputation build by Virat Kohli destroyed today pic.twitter.com/y7TVUZgkqe
— Vasif Eqbal (@Iamvasifeqbal) October 26, 2024
বেঙ্গালুরু টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে চার নম্বরে ব্যাটিং করে শতরান করেন সরফরাজ খান। তবে দ্বিতীয় টেস্টে শুবমান গিলের ফিরে আসার পর সরফরাজকে ছয় নম্বরে নামানো হয়। ভারতের প্রথম ইনিংস ১৫৬ রানে গুটিয়ে যায় এবং দল তখন থেকেই ব্যাকফুটে থাকে। দ্বিতীয় ইনিংসে টিম ম্যানেজমেন্ট ও কোচের সিদ্ধান্তে ওয়াশিংটন সুন্দরকে সরফরাজের ওপর ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোট করা হয়, যা দলে স্থিতিশীলতার পরিবর্তে আরও ব্যাকফুটে ঠেলে দেয় ভারতকে।
তিন দিনেই লড়াইয়ের ইতি! ৬৯ বছর পর ঘরের মাঠে ভারতকে হারিয়ে ‘ইতিহাস’ কিউয়িদের
পুনের (IND vs NZ 2nd Test) স্পিন সহায়ক পিচে তিনজন স্পিনার নিয়ে খেলত নেমেছিল ভারত এবং স্পিনাররাই সমগ্র ম্যাচ জুড়ে ২০ উইকেট তুলে নেন। তবে প্রধান পেসার হিসেবে থাকা জাসপ্রিত বুমরাহকে একবারও ব্যবহার করা হয়নি,। এছাড়াও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সফল হওয়া প্রথম ইনিংসে আকাশদীপকে মাত্র ৬ ওভার বল করানো হয় এবং দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁকে বল দেওয়াই হয়নি। যেক্ষেত্রে অধিনায়ক রোহিত শর্মার পাশাপাশি গৌতম গম্ভীরের মতবাদও খানিকটা কাজ করেছে বলেই বিশ্বাস করছেন আপামর ভারতবাসী। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দলের উইকেট নেওয়ার ক্ষেত্রে জসপ্রীত বুমরাহ কতখানি কার্যকর তার প্রমান এর আগেও পেয়েছে ভারত। সেকারেণেই হয়ত বুমরাহকে বোলিংয়ে ফেরত না আনাটা হিতে বিপরীত হল ভারতের কাছে।
স্যান্টনারের জাদুতেই ‘প্রকট’ ব্যাটিং ব্যর্থতা, কোনওরকমে ড্রয়ের পথেই হাটঁছে ভারত?
প্রসঙ্গত এই সিরিজ হারায় ভারতের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে পৌঁছানোর পথ কঠিন হয়ে উঠেছে। এখন থেকে পরবর্তী ৬ টেস্ট ম্যাচের মধ্যে ৪টি জিততেই হবে, তবেই ভারত সমস্যামুক্ত হয়ে ফাইনালে পৌঁছতে পারবে। এছাড়াও কোচ হিসাবে নিজেকে রবি শাস্ত্রী এবং রাহুল দ্রাবিড়ের পর অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত করে তুলতে চাইবেন গৌতম গম্ভীর। তবে আসন্ন বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে তাঁর এই আগ্রাসন কখনই কাজে লাগে সেটাই এখন দেখার বিষয় ।