সচিনকে ছুঁয়ে ইতিহাস মিতালির, পাক বধ করে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু ভারতের

বাইশগজে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে মানেই উত্তেজনার পারদ থাকে তুঙ্গে। সেখানে মঞ্চটা যদি বিশ্বকাপ হয়, তাহলে তো পারদটা স্বাভাবিক ভাবেই শিখরে পৌঁছে যায়। রবিবার মহিলা বিশ্বকাপের (World…

Mithali Raj

বাইশগজে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে মানেই উত্তেজনার পারদ থাকে তুঙ্গে। সেখানে মঞ্চটা যদি বিশ্বকাপ হয়, তাহলে তো পারদটা স্বাভাবিক ভাবেই শিখরে পৌঁছে যায়। রবিবার মহিলা বিশ্বকাপের (World Cup) এই হাইভোল্টেজ ম্যাচে পাকিস্তানকে ১০৭ রানের বিশাল ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়ে অভিযান শুরু করল ভারত।

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপ শুরুর আগে অবশ্য যথেষ্ট চাপে ছিল ভারতের মহিলা দল। কারণ, বিশ্বসেরার আসর শুরু হওয়ার আগে এই নিউজিল্যান্ডের মাটিতেই কিউইদের বিরুদ্ধে সিরিজ খেলেছিল প্রমীলা বাহিনী। সেই সিরিজে কার্যত পর্যুদস্ত হতে হয়েছিল মিতালি রাজ-ঝুলন গোস্বামীদের। ফলে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপে ভারতের সাফল্য নিয়ে সন্দীহান ছিলেন অনেকেই। তবে সমস্ত আশঙ্কা উড়িয়ে বড় ব্যবধানে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করল উইমেন ইন ব্লু।

এদিন টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন মিতালি। শুরুতেই শেফালি বর্মার (০) উইকেট হারালেও, দীপ্তি শর্মাকে সঙ্গে নিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন অপর ওপেনার স্মৃতি মান্ধানা। দীপ্তি ৪০ রানে আউট হওয়ার পর ধস নামে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপে। ৫২ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন স্মৃতি। এরপর মিডল অর্ডার চূড়ান্ত ব্যর্থ। অধিনায়ক মিতালি (৯) সহ হরমনপ্রীত কউর (৫), রিচা ঘোষ (১)- কেউই দলকে ভরসা জোগাতে পারেননি। মাত্র ১৮ রানের ব্যবধানে পাঁচ উইকেট খুইয়ে খাদের কিনারায় চলে যায় ভারতীয় দল। ১১৪-৬ থেকে দলকে টেনে তোলেন দুই টেলএন্ডার স্নেহ রানা এবং পূজা বস্ত্রকার। ৫৯ বলে ৬৭ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন পূজা। অন্যদিকে ৪৮ বলে ৫৩ রানের মারকাটারি ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন স্নেহ। এই দুই ব্যাটারের সুবাদে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৪৪ রান তোলে ভারত।

জবাবে পাকিস্তানের কোনও ব্যাটারকেই ক্রিজে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি ভারতীয় বোলাররা। ওপেনার সিদ্রা আমিনের ব্যাট থেকে আসে সর্বোচ্চ ৩০ রান। ৪৩ ওভারে ১৩৭ রানেই গুটিয়ে যায় পাকদের ইনিংস। মূলত বোলারদের দাপটেই জয় ছিনিয়ে নেয় ভারত। বল হাতে সবথেকে উজ্জ্বল ছিলেন রাজেশ্বরী গায়কোয়াড। চারটি উইকেট নেন তিনি। এছাড়া বাংলা অভিজ্ঞ পেসার ঝুলন গোস্বামী ঝুলিতে গিয়েছে দুই উইকেট। ব্যাটের পর বল হাতেও দলের হয়ে অবদান রাখেন স্নেহ রানা। তিনিও পান দুটি উইকেট। এছাড়া একটি করে উইকেট নিয়েছেন মেঘনা সিং এবং দীপ্তি শর্মা। ম্যাচের সেরা হয়েছে পূজা।

এদিন মাঠে নেমেই ইতিহাস গড়ে ফেললেন মিতালি রাজ। কিংবদন্তি সচিন তেন্ডুলকরকে ছুঁয়ে ফেললেন তিনি। মাস্টার ব্লাস্টারের পর দ্বিতীয় ভারতীয় ক্রিকেটার হিসাবে ছটি বিশ্বকাপ খেলার নজির গড়লেন মিতালি। প্রথম মহিলা ক্রিকেটার হিসাবে এই কৃতিত্ব দেখালেন তিনি। এছাড়া সচিন ও পাকিস্তানের কিংবদন্তি জাভেদ মিয়াঁদাদের পর বিশ্বের তৃতীয় ক্রিকেটার হিসাবে ছটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখালেন ভারত অধিনায়ক। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‍‘প্রথম ম্যাচ জিতে আমি খুশি। তবে এখনও অনেক জায়গায় উন্নতি করতে হবে আমাদের। মিডল অর্ডারে উইকেট খোয়ালে খুব চাপ পড়ে যায়। তবে পূজা, স্নেহ, দীপ্তিদের মতো অলরাউন্ডার আমাদরে হাতে থাকায় দলের শক্তি অনেকটা বেড়েছে। আশা করব, পরবর্তী ম্যাচের আগে পূজা ফিট হয়ে উঠবে।’

ব্যাটিং করার সময় চোট পান পূজা। ফলে তিনি আর ফিল্ডিং করতে নামতে পারেননি মাঠে। এটি ছিল বিশ্বকাপের মঞ্চে পূজার প্রথম ম্যাচ। অভিষেকেই বাজিমাত করলেন তিনি। ম্যাচ শেষে বললেন, ‍‘আমি খুব খুশি। প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলতে নেমেছিলাম এবং এটা আমার কেরিয়ারে প্রথম ম্যাচ সেরার পুরস্কার। ঘরোয়া ক্রিকেটেও চাপের মুখে ব্যাট করতে আমি পছন্দ করি। তবে আমরা ঠিক করেছিলাম, উইকেট যেহেতু মন্থর, তাই ২০০ লক্ষ্যমাত্রা রাখলেই যথেষ্ট। যাই হোক, দলের ফিজিও বলেছেন, চোট দ্রুত সেরে যাবে এবং আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরব।’