ব্যাটসম্যানের হাতে মেশিনগান গর্জন, পাক সরকার দিয়েছিল ফাঁসি

ব্যাট হাতে কাঁপাতে পারতেন ক্রিকেট মাঠ। কিন্তু তিনি শুনেছিলেন দেশ মাতৃকার ডাক। তাই হাতে তুলে নিয়েছিলেন রাইফেল। হয়েছিল লোক নায়ক৷ বাংলাদেশের (Bangladesh) মুক্তি যুদ্ধে নিজের…

Abdul Haleem Chowdhury Jewel

ব্যাট হাতে কাঁপাতে পারতেন ক্রিকেট মাঠ। কিন্তু তিনি শুনেছিলেন দেশ মাতৃকার ডাক। তাই হাতে তুলে নিয়েছিলেন রাইফেল। হয়েছিল লোক নায়ক৷ বাংলাদেশের (Bangladesh) মুক্তি যুদ্ধে নিজের জীবন বাজি রাখতে ভয় পাননি আব্দুল হালেম চৌধুরী জুয়েল (Abdul Haleem Chowdhury Jewel)। বাংলাদেশ তাঁকে মনে রখেছে ‘শহীদ জুয়েল’ নামে।

১৯৬০ নাগাদ পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন দলের হয়ে নিয়মিত খেলেছিলেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট। উদীয়মান ক্রিকেটার হিসেবে গণ্য করা হতো আব্দুল হালেম চৌধুরীকে৷ ১৯৬৬ সালে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে খেলেছিলেন ৭টি ম্যাচ। গড় রান ২০’র ওপরে৷ মোট ২৫৯ রান। ১৯৭১ সালে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সেরা পারফরম্যান্স। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে ইস্ট পাকিস্তান হোয়াইটসের হয়ে করেছিলেন যথাক্রমে ৪৭ ও ৬৫ রান। মনে করা হয় এটিই ছিল জুয়েলের ক্রিকেট কেরিয়ারের শেষ গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ।

   

‘আমার দেশের স্বাধীনতা সবার আগে। ক্রিকেট পরে।’ দেশের স্বার্থে ক্রিকেট ব্যাট তুলে রাখতে দেরি করেননি তিনি। বাইশ গজকে বিদায় জানানোর দিন কয়েক পরেই দীক্ষিত হয়েছিল মুক্তি যুদ্ধের মন্ত্রে৷ কিংবদন্তী ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য হয়েছিলেন, যা মুক্তিবাহিনীর একটি অত্যন্ত প্রশিক্ষিত এবং বিশেষায়িত কমান্ডো ইউনিট হিসেবে পরিচিত ছিল। নেতৃত্বে কিংবদন্তি মুক্তিযোদ্ধা মেজর খালেদ মোশাররফ। জুয়েল যেমন ক্রিকেট ব্যাটকে কথা বলাতে পারতেন, তেমনই রপ্ত করেছিলেন রাইফেল চালানোর কৌশল।

মুক্তিবাহিনীর ক্র্যাক প্লাটুন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য গেরিলা যুদ্ধের কৌশল অবলম্বন করেছিল। অশান্ত পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে অগুনতি মানুষ চলে যেতে থাকেন প্রতিবেশী দেশ বা সীমান্তের পাশের রাজ্যগুলোতে। গা ঢাকা দিতে হয়েছিল জুয়েলকে। ধরতে হয়েছিল ছদ্মবেশ। কিন্তু পালিয়ে যাননি কখনও। অপারেশন ফার্মগেটে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যস সফল পরিকল্পনা বলে গণ্য করা হয়।

নিজের মা-কে দেখার জন্য একবার বাড়ি ফিরেছিলেন। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তখন কে জানত এই বন্ধুদের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল এক মিরজাফর। সে গোপনে আব্দুল হালিম চৌধুরীর খবর কানে তুলে দিয়ে আসে বিরুদ্ধ শিবিরে। এরপরেই শুরু হয় তল্লাশি। কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে জুয়েলকেও বন্দি করা হয়। তাঁর মা-বাবা অনেক চেষ্টা করেছিলেন ছেলেকে ছাড়িয়ে আনার জন্য। কিন্তু মৃত্যুদণ্ড এড়ানো যায়নি। ফাঁসির সাজা শোনা হয়েছিল আব্দুল হালেম চৌধুরী জুয়েলকে। লুকিয়ে কবর দেওয়া হয়েছিল দেহ৷

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর হালিমকে বীর বিক্রম পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছিল। এটি দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ বীরত্ব পুরস্কার।মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের একটি অংশ ‘শহীদ জুয়েল’- এর নামে নামাঙ্কিত করা রয়েছে।