Swami Vivekananda: আজকের দিনে এই বাড়িতেই নরেন্দ্রনাথ হয়েছিলেন বিবেকানন্দ

বাবুরাম ঘোষ পরবর্তী সময়ে স্বামী প্রেমানন্দ। এর মা মাতঙ্গিনী দেবীর আহ্বানে আঁটপুরে ঘুরতে এসে গুরু ভ্রাতা নরেন্দ্রনাথ দত্ত সহ আরও আটজন গুরুভ্রাতা ১৮৮৬ খ্রীস্টাব্দের ২৪…

Swami Vivekananda

বাবুরাম ঘোষ পরবর্তী সময়ে স্বামী প্রেমানন্দ। এর মা মাতঙ্গিনী দেবীর আহ্বানে আঁটপুরে ঘুরতে এসে গুরু ভ্রাতা নরেন্দ্রনাথ দত্ত সহ আরও আটজন গুরুভ্রাতা ১৮৮৬ খ্রীস্টাব্দের ২৪ শে ডিসেম্বরের রাতে ঘোষেদের দুর্গাদালানের সন্নিকটে ধুনি জ্বালিয়ে রামকৃষ্ণদেবের আদর্শকে ছড়িয়ে দেবার সংকল্প গ্রহণ করেন এবং সন্ন‍্যাসী হন। এই আঁটপুরেই নরেন্দ্র নাথ পরিচয় বদল করেন এবং স্বামী বিবেকানন্দ (Swami Vivekananda) হিসাবে জগতে পরিচিতি পান।
বাবুরাম সম্বন্ধেও জেনে নেওয়া যাক। দক্ষিণেশ্বরে প্রথম সাক্ষাতের দিনেই তিনি বাবুরামকে সস্নেহে আপনজনের মতো গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর সুঠাম, সুকোমল উজ্জ্বল গৌরবর্ণের শরীর, ভক্তসুলভ সুবিনীত আচরণ দেখে শ্রীরামকৃষ্ণ উপলব্ধি করেন, ইনি সেই ব্যক্তি, মা যাঁদের ‘ঈশ্বরকোটি’ ব’লে নির্দেশ করেছেন। শ্রীমতী রাধারানির অংশে যেহেতু বাবুরামের জন্ম, তাই তিনি এমন সুলক্ষণযুক্ত।
হুগলি জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম আঁটপুরে, সম্ভ্রান্ত ঘোষ পরিবারে, ধর্মপ্রাণ তারাপদ-মাতঙ্গিনীর ঘরে বাবুরাম মহারাজের জন্ম হয়। সেদিন চান্দ্র অগ্রহায়ণের শুক্লা নবমী। ২৬ অগ্রহায়ণ ১২৬৮, ১০ ডিসেম্বর ১৮৬১, মঙ্গলবার।
গ্রামের পড়াশুনা শেষ ক’রে কলকাতার মেট্রোপলিটান ইন্সটিটিউশনে পড়ার সময় হেড মাষ্টারমশাই শ্রী মহেন্দ্রনাথ গুপ্তের সংস্পর্শে আসেন তিনি। সেই স্কুলেরই ছাত্র ছিলেন ঠাকুরের মানসপুত্র রাখালচন্দ্র ঘোষ, যিনি পরবর্তীকালে স্বামী ব্রহ্মানন্দ নামে পরিচিত হন। কথামৃতকার শ্রীম’র হাত ধরেই বাবুরাম ঠাকুরকে দর্শন করতে দক্ষিণেশ্বর যান। ক্রমে তাঁর অত্যন্ত প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন তিনি। মাতঙ্গিনীর কাছে প্রার্থনা ক’রে তাঁর এই শুদ্ধসত্ত্ব মেজ ছেলেটিকে একদিন চেয়ে নেন শ্রীরামকৃষ্ণ। মা সানন্দে অনুমতি দিলে তারপর থেকে সেবক বাবুরাম ছায়াসঙ্গী হয়ে ওঠেন ঠাকুরের।
আগস্ট, ১৮৮৬। লীলাবসান হলো যুগাবতারের। তার ঠিক চার মাস পর, যিশুখ্রিস্টের জন্মদিনের পূর্ব-সন্ধ্যায়, আঁটপুরে বাবুরামের জন্মভিটায় নরেন্দ্রনাথের সঙ্গে বাবুরামসহ ঠাকুরের আরও আট জন অন্তরঙ্গ পার্ষদ সন্ন্যাস নিয়ে গৃহত্যাগের সঙ্কল্প করেন। বরানগরে ফিরে বিরজা হোমের পর বাবুরামের সন্ন্যাস নাম হলো স্বামী প্রেমানন্দ। নিছক নাম নয়, আচার্য শ্রীরামকৃষ্ণের আদর্শে ক্রমে তিনি হয়ে উঠলেন কঠোর তপস্যা, সেবা, প্রেম ও আনন্দের প্রত্যক্ষ বিগ্রহ!
ত্যাগব্রতী সন্ন্যাস জীবনে একজোড়া ফতুয়া, চাদর, কাপড়, চটি আর একটি ক’রে জামা, ছাতা ও লাঠিকে সম্বল করলেন! কোনও কাজকেই ছোট না ভেবে সকল কাজকেই ঠাকুরের সেবাকার্য ব’লে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন। কাশী, বৃন্দাবন, কামাখ্যা, অমরনাথ, রামেশ্বর, পুরীতে তীর্থভ্রমণ করলেন। বহু সংসারতাপিত মানুষকে ঠাকুর-মায়ের চরণতলে আশ্রয় দিলেন। বিশেষ ক’রে পূর্ববঙ্গে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি রক্ষায় তাঁর অবদান অতুলনীয়! তাঁর কঠিন অসুখের সময় সেখানকার মুসলিম অনুরাগীরা ‘শিরনি’ মানত করেছিলেন।