Gabbar Singh: ‘হিন্দুস্তান কি কসম’ ছবি বদলে দিয়েছিল পাকিস্তানি খলনায়কের জীবন

বিশেষ প্রতিবেদন: হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে সেরা খলনায়কদের তালিকায় চোখ বুজে শীর্ষে ঠাঁই করে নেবে যে চরিত্রটি সেটি হলো গব্বর সিং। ‘শোলে’ সিনেমার এই দুর্ধ্বর্ষ ডাকাতের…

amzad-khan

বিশেষ প্রতিবেদন: হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে সেরা খলনায়কদের তালিকায় চোখ বুজে শীর্ষে ঠাঁই করে নেবে যে চরিত্রটি সেটি হলো গব্বর সিং। ‘শোলে’ সিনেমার এই দুর্ধ্বর্ষ ডাকাতের চরিত্রটিকে অভিনয়গুণে যিনি সিনেমার সবচেয়ে আকর্ষণীয় চরিত্রে পরিণত করেছেন তিনি হলেন আমজাদ খান।

আমজাদ খান ছিলেন সে সময়ের গতানুগতিক খল চরিত্রের অভিনেতাদের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। তার চেহারা, কণ্ঠস্বর আর মেজাজে মিশে ছিল আভিজাত্য। তার উচ্চারণভঙ্গীও ছিল আলাদা ধাঁচের। ফলে খুব সহজেই তিনি দর্শকদের মনে স্থান করে নিতে পেরেছিলেন।

আমজাদ খানের জন্ম ১৯৪০ সালের ১২ নভেম্বর অবিভক্ত ভারতের পেশোয়ারে। পুরো নাম আমজাদ জাকারিয়া খান। বাবার নাম জাকারিয়া খান। রূপালি পর্দায় জয়ন্ত নামে অভিনয় করে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। শতাধিক ছবির এই অভিনেতার সন্তান আমজাদ খানের রক্তে মিশে ছিল অভিনয়। তিনি মুম্বাইয়ের বান্দ্রা এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন চল্লিশের দশকের শুরু থেকে। বান্দ্রার সেন্ট অ্যান্দ্রুজ হাই স্কুলে পড়তেন। কলেজে পড়ার সময় ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

১৯৫১ সালে ‘নাজনিন’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রযাত্রা শুরু হয়। সে সময় তিনি ছিলেন শিশুশিল্পী। বাবার সঙ্গে অনেক ছবিতে ছোট ছোট ভূমিকায় অভিনয় করতেন তিনি। ‘হিন্দুস্তান কি কসম’ ছবিতে একটি ছোট ভূমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমে পরিণত বয়সে তার ক্যারিয়ার শুরু হয়। সে সময় তিনি মঞ্চেও অভিনয় করতেন।

তিনি প্রথম বড় সুযোগ পান ‘শোলে’ ছবিতে গাব্বার সিংয়ের ভূমিকায়। ছবিটির চিত্রনাট্যকার ছিলেন সেলিম-জাভেদ জুটি। সেলিম খান তাকে এই ভূমিকায় পছন্দ করেন। তার জন্য সুপারিশ করেছিলেন অমিতাভ বচ্চন। তিনিও তখন বলিউডে প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছেন। ১৯৭৫ সালে ‘শোলে’ মুক্তির পর গাব্বার সিং-এর চরিত্রটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।

‘শোলে’তে ধর্মেন্দ্র, অমিতাভ, সঞ্জীব কুমারের মতো তারকাদের সঙ্গে শুধু সমান তালেই অভিনয় করেননি আমজাদ বরং সব আলো কেড়ে নেন নিজের দিকে। নায়ক জয় ও ভিরুর চেয়েও বেশি জনপ্রিয়তা পায় গাব্বার। গাব্বারের উচ্চারিত ‘কিতনে আদমি থে?’, ‘ইয়ে হাথ মুঝে দে দে ঠাকুর’, ‘জো ডর গায়া, সমঝো মর গায়া’ ইত্যাদি সংলাপ লোকের মুখে মুখে ফেরে। তিনি গাব্বার সিংয়ের সাজে ব্রিটানিয়া গ্লুকোজ বিস্কিটের বিজ্ঞাপনে অংশ নেন। সেখানে তার সংলাপ ছিল ‘গাব্বার কি আসলি পসন্দ’। কোনো খলনায়কের নামে জনপ্রিয় পণ্যের বিজ্ঞাপন সেই প্রথম।

‘শোলে’র পর অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে দেরি হয়নি তার। একের পর এক ছবিতে খলনায়ক হয়ে পর্দায় দর্শকদের মনোরঞ্জন করতে থাকেন।

১৯৭৭ সালে তিনি অভিনয় করেন সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার এক চরিত্রে। সত্যজিৎ রায়ের ক্ল্যাসিক ছবি ‘সতরঞ্জ কি খিলাড়ি’তে আওধের শেষ নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের ভূমিকায় দেখা যায় তাকে। আওধ বা লক্ষ্ণৌর শেষ নবাব ওয়াজেদ আলি ছিলেন কবি, সঙ্গীতানুরাগী এবং অভিমানী। এই জটিল চরিত্রে অভিনয় করে সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ান আমজাদ খান।

১৯৭৮ সালে মুক্তি পায় ‘মুকাদ্দার কা সিকান্দার’। এ ছবিতে নায়ক ছিলেন অমিতাভ বচ্চন আর খলনায়ক দিলওয়ারের চরিত্রে ছিলেন আমজাদ খান। এখানেও তুমুল জনপ্রিয়তা পান তিনি। দিলওয়ার শুধু সাধারণ খুনে গুন্ডা নয়, সে পাগল প্রেমিকও বটে। ‘ইনকার’, ‘দেশ পরদেশ’, ‘নাস্তিক’, ‘সাত্তে পে সাত্তা’, ‘দাদা’, ‘চম্বল কি কসম’, ‘নসিব’, ‘গঙ্গা কি সৌগান্ধ’, ‘হাম কিসিসে কম নেহি’ ইত্যাদি ছবিতে খলনায়ক রূপে দেখা যায় তাকে। ‘লাওয়ারিস’ ছবিতে ব্যতিক্রমী ভূমিকায় পর্দায় আসেন তিনি। ছবির প্রথমে এক ধনী লম্পট এবং পরের অংশে ত্যাগী ও দয়াবান ভূস্বামীর চরিত্রে দেখা যায় তাকে।

এখানে অমিতাভ বচ্চনের বাবার ভূমিকায় ছিলেন তিনি। এই সময়ে বেশ কিছু ছবিতে তাকে ইতিবাচক ভূমিকায় দেখা যায়। ‘ইয়ারানা’ ছবিতে অমিতাভের বন্ধুর ভূমিকায় অভিনয় করেন আমজাদ খান। ‘কুরবানি’ ছবিতে তীক্ষ্ণ ও রসবোধ সম্পন্ন এক পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্রে আমজাদ খান চমক সৃষ্টি করেন। কুমার গৌরব-ভিজেতা পণ্ডিত অভিনীত হিট ছবি ‘লাভস্টোরি’তে বন্ধুভাবাপন্ন পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকায় ছিলেন তিনি। ১৯৮৬ সালে হাসির ছবি ‘চামেলি কি শাদি’ তে অনিল কাপুর, অমৃতা সিং এবং আমজাদ খান দারুণ কমেডি উপহার দেন দর্শককে।

১৯৮৬ সালে সড়ক দূর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি। চিকিৎসার অংশ হিসেবে তাকে যেসব ওষুধ গ্রহণ করতে হয় তার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ায় বিপদজনকভাবে তার ওজন বেড়ে যায়। এই বাড়তি ওজনই তার মৃত্যু ডেকে আনে। ১৯৯২ সালের ২৭ জুলাই মাত্র ৫১ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তার।

প্রায় কুড়ি বছরের ক্যারিয়ারে তিনি ১৩০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত বিখ্যাত ছবির মধ্যে আরও রয়েছে ‘লাভ’, ‘হিম্মতওয়ালা’, ‘দেশপ্রেমী’, ‘লেকিন’, ‘রুদালি’, ‘পালকো কি ছাওমে’, ‘পারভারিস’, ‘বেশরম’, ‘হীরালাল পান্নালাল’, ‘কাসমে ওয়াদে’, ‘বারসাত কি এক রাত’, ‘ফুল খিলে হ্যায় গুলশান’, ‘মিস্টার নটবরলাল’, ‘সুহাগ’ ইত্যাদি। অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে অনেক ছবিতে অভিনয় করেন।