চণ্ডীর কৃপা- ২৩০ বছর ধরে চলে আসছে এই বিশেষ মেলা

Fair of Chandi: মেলার কথা হলেই মনে পড়ে সেই জনপ্রিয় মনকাড়া গান। ‘চিরদিনের’ ছায়াছবিতে স্বনামধন্য গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের বাণীকে আশ্রয় করে, প্রখ্যাত সুরকার নচিকেতা ঘোষের…

Know about unique fair of chandi of behala

Fair of Chandi: মেলার কথা হলেই মনে পড়ে সেই জনপ্রিয় মনকাড়া গান। ‘চিরদিনের’ ছায়াছবিতে স্বনামধন্য গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের বাণীকে আশ্রয় করে, প্রখ্যাত সুরকার নচিকেতা ঘোষের অনবদ্য সুরে মহানায়ক উত্তম কুমারের লিপে, কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী মান্না দে’র দরাজ নেপথ্য কণ্ঠের গাওয়া গান, “লাল নীল সবুজের মেলা বসেছে, আয় আয় আয়রে ছুটে খেলবি যদি আয়, নতুন সে এক খেলা রে…. “।

নানা রঙের শহুরে মেলা, গ্রাম্য মেলা, কত ধরণের, কত বিষয়ভিত্তিক মেলার আসরের সঙ্গে সারা জীবনে আমাদের পরিচয় ঘটে। মেলা ও উৎসবকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত আনন্দ, জনজীবনে ছড়িয়ে পড়ে। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। বিভিন্ন পার্বণ কে কেন্দ্র করে এই মেলা। সারা বছর সারা দেশে যেমন, আমাদের এই পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন ঋতুতে মেলার আয়োজনে কোন ঘাটতি নেই। মেলার আসরেই জনজীবনের মেলবন্ধন ঘটে। কত ব্যাপারীর কত রকমের বিকিকিনি। কোন্ এক অমোঘ আকর্ষণে আবালবৃদ্ধবনিতা মেলার আসরে মিলিত হয়। শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা, কেন্দুলির বাউল মেলা, শান্তিপুরের রাসের মেলা, কাটোয়ার শিবরাত্রির মেলা, কলকাতার ছাতুবাবুর বাজারের ঐতিহ্যবাহী চড়কের মেলা, কলকাতা ও বিভিন্ন স্থানের বই মেলা, হস্তশিল্প মেলা, বাণিজ্য মেলা, সংস্কৃতি মেলা, সারা রাজ্য জুড়ে বছরভর নানান মেলার আসর বসে। বস্তুত: পারস্পরিক আনন্দ, বাণিজ্য, অর্থনীতি এই মেলাগুলিতে মিলেমিশে একাকার।

Know about unique fair of chandi of behala

নানা ধরণের এই মেলাকে ঘিরে রচিত হয়েছে কত গান।মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বোলপুরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় উন্নয়নের জন্য, ব্রাহ্ম সমাজের প্রসারের উদ্দেশ্যে, বোলপুর-শান্তিনিকেতনের মানুষের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য ১৮৯৪ সালে পৌষ উৎসবের অঙ্গ হিসেবে, পৌষমেলার সূচনা করেছিলেন, যা আজও অব্যাহত রয়েছে। শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের তৈরী শিল্প সামগ্রী ও সন্নিহিত গ্রামের মানুষের হস্ত নির্মিত নানা জিনিসপত্র এই মেলায় বিক্রির উদ্দেশ্যে আনীত হয়।

কিন্ত মেলার কথার আলোচনা হবে, তাতে ভেঁপু থাকবেনা, পাঁপড়ভাজা থাকবেনা তা কি হয়? অতএব পড়শি রাজ্য উড়িষ্যার হাত ধরে, বাঙালির অতিপ্রিয় রথের মেলা, আলোচনার বিষয় হবে না, এ সম্ভব নয়। আষাঢ় মাসে যেমন পুরীতে, তেমনই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে শ্রী শ্রী জগন্নাথদেব, বলভদ্র ও সুভদ্রার রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে রথের মেলার আসর বসে। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার মাহেশের রথযাত্রা বড় সুপ্রাচীন। ১৩৯৬ সাল থেকে, এই রথযাত্রা কে কেন্দ্র করে জমজমাট মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে এই মেলায়। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মাহেশের রথের মেলার পটভূমিতে রচনা করেছিলেন তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘রাধারাণী’। রাধারাণী এই রথের মেলায় ফুলের মালা বেচতে এসে ভীড়ের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিল। কলকাতার মৌলালীতে এবং পার্ক স্ট্রীট সংলগ্ন ময়দানে ইস্কনের রথের মেলা জনপ্রিয়তার শিখর ছুঁয়েছে।

বর্তমান শহর কলকাতা ও তার উপকন্ঠে সম্বৎসর নানা ধরণের মেলা আয়োজিত হয়। তেমনই এক সুপ্রসিদ্ধ মেলা চন্ডীমেলা। অঘ্রাণ মাসের শুক্লপক্ষে চন্ডীপুজো উপলক্ষ্যে, বড়িশায়, বেহালা সখেরবাজার অঞ্চলের সাবর্ণ রায়চৌধুরী’র অতীত জমিদারীতে অনুষ্ঠিত হয় এই চন্ডীমেলা। এর ইতিহাস প্রায় ২৩০ বছরের। চন্ডী পুজোকে কেন্দ্র করে প্রায় দিন দশেক স্থায়ী হয় এই মেলা। স্থানীয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার হাজার হাজার মানুষের উৎসাহে ও সমাগমে এই মেলার আকর্ষণ ও জৌলুস ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। মেলা কমিটির সুবন্দোবস্তে, ক্রমান্বয়ে এই মেলার শ্রী-বৃদ্ধি ঘটে চলেছে। শীতের কলকাতার বড় আকর্ষণ এই ঐতিহ্যবাহী চন্ডী মেলা।

নানাধরণের বিকিকিনির পসরা এই মেলার চিরাচরিত আকর্ষণ। নানান রকম গৃহস্থালির উপকরণ ও ব্যবহারযোগ্য বস্তু, খাদ্যদ্রব্যের সম্ভার এই মেলাকে জমজমাট ও প্রভূত আকর্ষণীয় করে তোলে। মনোরঞ্জনকারী সাঙ্গীতিক ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনের মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিম কলকাতার বড়িশা-সখেরবাজার অঞ্চলের এই চন্ডী মেলা পরিপূর্ণ ও সার্থক হয়ে ওঠে।