Heritage Durga Puja: দুগ্গা ঠাকুরের পুজোয় হঠাৎ ঢুকে পড়লেন পরমহংস ঠাকুর!

আয় চিনি মাখন খা…। আপনভোলা পরমহংস কী করেন তার ঠিক নেই। তবে সেবার সব ঠিকই ছিল। লাল মাটির জেলা বাঁকুড়ায় দুর্গাপুজা শুরুর ইতিহাস অনেক পুরনো…

Heritage durga puja of Bankura

আয় চিনি মাখন খা…। আপনভোলা পরমহংস কী করেন তার ঠিক নেই। তবে সেবার সব ঠিকই ছিল। লাল মাটির জেলা বাঁকুড়ায় দুর্গাপুজা শুরুর ইতিহাস অনেক পুরনো (Heritage Durga Puja)। অসংখ্য প্রাচীণ পারিবারিক পুজোর মধ্যে অন্যতম কোতুলপুরের ভদ্র বাড়ির পুজো। প্রায় ৩৫০ বছর ধরে দীর্ঘ ধারাবাহিকতা মেনে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব স্মৃতিধন্য এই পুজো আজও চলে আসছে।

যদিও কালের নিয়মে আজ আর এঁদের এককালের বিখ্যাত জমিদারি আর আজ নেই। ফলে জৌলুস হারিয়েছে জমিদারবাড়ির এই দুর্গাপুজোও। তবে এই পুজোকে ঘিরে আজও এলাকার মানুষের উন্মাদনা এতোটুকুও কমেনি। আজও এক অদ্ভুত এক নস্টালজিয়ার টানে পুজোর দিন গুলিতে ছুটে আসেন মানুষ।

   

ভদ্র বাড়ি সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, তাঁদের পূর্ব পুরুষদের এককালের মূল ব্যবসা ছিল নুন, তামাক, সরিষার আমদানি-রপ্তানি। আর এই ব্যবসাতেই তাঁরা ফুলে ফেঁপে উঠেছিলেন। আবার এমনও জনশ্রুতি রয়েছে, এই ‘ভদ্র’রা মনসামঙ্গল-খ্যাত চাঁদ সওদাগরের প্রকৃত উত্তরপুরুষ।

Heritage durga puja of Bankura

মনসামঙ্গল উপাখ্যানে বর্ণিত ব্যবসার মতো সুদূর অতীতে এই ভদ্র পরিবারের লোকজনেরাও সাত সাগর আর তেরো নদীতে ডিঙা ভাসিয়ে ব্যবসা করতে যেতেন দূর দূরান্তে।

আর এই ব্যবসায় প্রভূত লাভের কারণেই ফুলে-ফেঁপে ওঠা ভদ্র পরিবার প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে তৎকালীন বর্ধমানের মহারাজ উদয়চাঁদ মহাতাপের কাছ থেকে কোতুলপুর লাগোয়া উর্বর ১৭টি তালুকের জমিদারি সত্ত্ব কিনে নেন। একদিকে রমরমিয়ে চলা নুন, তামাক, সরিষার ব্যবসা অন্য দিকে জমিদারির বিপুল আয়- এই দু’য়ে মিলে কোতুলপুরে তৈরি হয় জমিদারের বিরাট এস্টেট।

জমিদারি পত্তনের পাশাপাশি শুরু হয় দেবী দুর্গার আরাধনা। সাতমহলা জমিদারবাড়ির উঠোনে তৈরি হয় দুর্গা মণ্ডপও। এমনকি শোনা যায়, ভদ্র বাড়ির এই পুজোতে ১৮৮০ সালের ১০ অক্টোবর সপ্তমীর সকালে কামারপুকুর থেকে বিষ্ণুপুর যাওয়ার পথে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব পুজো দেখতে ঢুকে পড়েছিলেন। বেশ কিছুক্ষণ ছিলেনও এখানে।

যদিও পরবর্ত্তী সময়ে পরবর্তীকালে ভদ্র পরিবার দুটি ভাগে ভাগ হয়ে যায়, ফলে ভাগ হয়ে যায় পুজোও। দুই ভদ্র পরিবারে সমান তালে শুরু হয় দেবী দুর্গার আরাধনা। একসময় ভদ্র পরিবারের পুজোর জাঁকজমক এতই ছিল যে অচিরেই এ বাড়ির পুজোর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল দূর দূরান্তে। পুজোর সময় পুতুল খেলা, রামলীলা পাঠ, যাত্রাপালা– সব মিলিয়ে জমিদার বাড়ি গমগম করত।

আরো পরে জমিদারি প্রথা বিলোপের সঙ্গে সঙ্গে ভদ্রবাড়ির কোষাগারেও ক্রমশ টান পড়তে শুরু করে। আর হালে তো তার আর অর্থ-কৌলীন্যই নেই। সময়ের নিয়মে এবং সংস্কারের অভাবে এখন পলেস্তরা খসে গিয়ে বেরিয়ে পড়েছে সাতমহলা বাড়ির ইটের পাঁজর। বহু মন্দির প্রায় ধ্বংস। তবু অতীতের ঐশ্বর্যের স্মৃতি হিসাবে এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে জমিদার বাড়ির একাংশ, শ্রীধর জিউ মন্দির, গিরি গোবর্ধন মন্দির,  রাসমঞ্চ আর দুর্গা মণ্ডপ।