এক অজানা বিপ্লবীর কথা: অ্যান্ডারসনকে হত্যা থেকে তাম্রপত্র প্রত্যাখ্যান

Special Correspondent, Kolkata: হেমচন্দ্র ঘোষের পৈত্রিক নিবাস ছিল বানারীপাড়ার গাভা গ্রামে। তবে তাঁর বাবা মথুরানাথ ঘোষ ঢাকার আইনজীবী ছিলেন। তিনি ঢাকায় ২৪  অক্টোবর ১৮৮৪ সালে…

Hemchandra ghosh

Special Correspondent, Kolkata: হেমচন্দ্র ঘোষের পৈত্রিক নিবাস ছিল বানারীপাড়ার গাভা গ্রামে। তবে তাঁর বাবা মথুরানাথ ঘোষ ঢাকার আইনজীবী ছিলেন। তিনি ঢাকায় ২৪  অক্টোবর ১৮৮৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছাত্রাবস্থায় ঢাকার জুবিলি স্কুলের সশস্ত্র আন্দোলনে আকৃষ্ট হন। তাঁর শরীরচর্চার গুরু ছিলেন শ্যামাকান্ত ও পরেশনাথ। লাঠিখেলার দীক্ষা বিপ্লবী পুলিনবিহারী দাসের কাছে। হেমচন্দ্র ঘোষ ১৯০১ সালে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। উল্লাসকর দত্তের সাহায্যে বারীন ঘোষের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয় এবং তিনি অনুশীলন ও যুগান্তরগোষ্ঠীর সঙ্গে সংযোগ রেখে তিনি নতুন দল গঠনের প্রেরণা অনুভব করেন।

১৯০৫ সালে শ্রীশ পাল, হরিদাস দত্ত, গুণেন ঘোষ, রাজেন ল গুহ, মাখন চক্রবর্তী, খগেন দাস, বিভূতি বসু, নিকুঞ্জ সেন, সুরেন বর্ধন প্রমুখ সহযোগিদের নিয়ে মুক্তিসংঘ গঠন করেন। তিনি ছিলেন দলের বড়দা এবং হরিদাস দত্ত মেজদা। ১৯০৬ সালে হেমচন্দ্র ঘোষ কলকাতায় এসেছিলেন শ্রী অরবিন্দ, ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়, বিপিন পাল মতো বিখ্যাত বিপ্লবীদের সাথে দেখা করতে। কলকাতায় মুক্তি সংঘের একটি শাখা শ্রীশ পাল শুরু করেছিলেন। তিনি এবং তাঁর বিপ্লবী সংগঠন অর্থাৎ মুক্তিসংঘের সহযোগিতায় কিছু বিপ্লবী কর্মকাণ্ড করেন। তার মধ্যে ১৯০৮ সালে নন্দলাল ব্যানার্জির হত্যা (ক্ষুদিরাম বসুকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য এই পুলিশ অফিসার দায়িত্বে ছিলেন) এবং ১৯১৪ সালে রডা কোম্পানির অস্ত্রলুণ্ঠন।

১৯১৪ সালেই, হেমচন্দ্রকে রডা কোম্পানির অস্ত্রলুণ্ঠন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং ১৯১৮ সালে তাকে রাজবন্দী হিসাবে হাজারীবাগ কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছিল। বিভিন্ন কারাগারে ৬ বছর কারাদণ্ডের পরে ১৯২০ সালে তিনি মুক্তি পেয়ে কলকাতায় আসেন ও গোপনে দল সংগঠনে সক্রিয় হন। ১৯২৬ সালে মুক্তি সংঘের সদস্যরা বেণু নামে একটি মাসিক পত্রিকা শুরু করেন। ১৯২৮ সালে কলকাতা কংগ্রেসে তিনি ও তাঁর দল বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। এই কংগ্রেস অধিবেশনে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স নামে দলটি গঠিত হয়েছিল তার কার্যাবলি মুক্তিসংঘের সদস্যদের পরিচালনায় পরবর্তীকালে বাংলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।

এই দলের সদস্যরা মেদিনিপুরের তিন জন এবং কুমিল্লার একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে হত্যা করেন। হেমচন্দ্র ও সত্যরঞ্জন বকসি পরিচালিত মুক্তিসংঘ পরিচিত হয় বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স নামে। বিনয়-বাদল-দীনেশের অলিন্দ-যুদ্ধকে সফল করতে সহায়তা করেন। ১৯৩০ সালে দার্জিলিং-এ তদানীন্তন বাংলার গর্ভনর জন অ্যান্ডারসনকে হত্যার চেষ্টা করেন। ১৯৩৮ সালে সুভাষচন্দ্রের সমর্থনে সরব হন। ১৯৩০ সাল থেকে ১৯৪৬ সালের মধ্যে জেলের বাইরে ছিলেন মাত্র দেড় বছর। এই অকৃতদার বিপ্লবী ভারত সরকারের তাম্রপত্র প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
এর পরের ইতিহাস আর আমার পক্ষ থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। শেষে ৩১ শে অক্টোবর ১৯৮০ সালে মহান বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।