Amritpal Singh Timeline: ভিন্দ্রানওয়ালের গ্রাম থেকে শুরু অমৃতপালের গল্প ৩৬ দিনেই খতম

৩৬ দিন ধরে চলমান মহড়া আজ শেষ হল। সকাল ৬.৪৫ মিনিটে অমৃতপাল সিংকে গ্রেফতার (Amritpal Singh Arrest) করে পাঞ্জাব পুলিশ। এদিন সন্ধ্যায় ডিব্রুগড় জেলেও পৌঁছেছেন।

Timeline of Amritpal Singh Arrest Case

৩৬ দিন ধরে চলমান মহড়া আজ শেষ হল। সকাল ৬.৪৫ মিনিটে অমৃতপাল সিংকে গ্রেফতার (Amritpal Singh Arrest) করে পাঞ্জাব পুলিশ। এদিন সন্ধ্যায় ডিব্রুগড় জেলেও পৌঁছেছে। অমৃতপাল সিং-এর নাম ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২-এ প্রথমবারের মতো উঠে আসে যখন জনরাইল সিং ভিন্দ্রানওয়ালের পৈতৃক গ্রাম মোগার রোড গ্রামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। অমৃতপালকে সংগঠনের প্রধান করা হয়েছিল (ওয়ারিস পাঞ্জাব দে) যা দীপ সিধু স্থাপন করেছিলেন।  তাকে পাগড়ি পরানো হয়েছিল। অমৃতপাল কেলেঙ্কারির গল্প এখান থেকেই শুরু হয়…

অমৃতপাল সিং নিজেকে ভিন্দ্রানওয়ালে পার্ট-২ হিসেবে ভাবতে শুরু করেন। যুবকদের তার দিকে টানতে শুরু করে। খালিস্তানকে সমর্থন করার কথা শুরু হয়। যেহেতু মোবাইল এবং ইন্টারনেট আজকাল অক্সিজেনের মতো হয়ে গেছে। তারপর কী ছিল, ভাইরাল হতে থাকে অমৃতপালের ভিডিও। দীপ সিধু সেই ব্যক্তি যিনি লাল কেল্লায় তেরঙ্গা খুলে একটি বিশেষ ধর্মের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। সড়ক দুর্ঘটনায় সিধুর মৃত্যু হলে অমৃতপাল তার দায়িত্ব নেন।

   

১৬ ফেব্রুয়ারি অমৃতপাল ও তার সমর্থকরা অপরাধ জগতে প্রবেশ করেন। এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ছিলেন লাভপ্রীত সিংও। তারা চমকৌর সাহেবের এক ব্যক্তিকে অপহরণ করে এবং তারপর তাকে মারধর করে। বিষয়টি পাঞ্জাব পুলিশের টেবিলে এলে সঙ্গে সঙ্গে এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়। পরদিনই পাঞ্জাব পুলিশ লভপ্রীত সিংকে গ্রেফতার করে। অমৃতপাল রেগে গেল। যেহেতু তিনি সবেমাত্র ওয়ারিস পাঞ্জাব দে-এর প্রধান হয়েছিলেন, তাই উত্তেজনায় তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

তারিখটি ছিল ২৩ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ অপরাধের ঠিক এক সপ্তাহ পর। আজনালা থানা অমৃতসর শহরের বাইরের এলাকায় পড়ে। এখানে হামলা চালায় অমৃতপালের সমর্থকরা। একভাবে, পুরো থানা হাই জ্যাক ছিল। তলোয়ার, বন্দুক আর স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে এলাকা। ভেঙে দেওয়া হয় পুলিশের ব্যারিকেড। তাদের দাবি ছিল লাভপ্রীত সিংকে মুক্তি দেওয়া। পুলিশ বাধা দিলে উত্তেজিত জনতা তাদের ওপর হামলা চালায়। ২৪ ফেব্রুয়ারি, খুব অনন্য উপায়ে, লাভপ্রীত সিং জেল থেকে মুক্তি পান। এর পরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে পাঞ্জাব সরকারের কাজকর্ম নিয়ে। রাজনীতিও তীব্র হয়েছে।

এরপর ১৫ দিন সবকিছু শান্ত থাকে। অমৃতপাল অবাধ বিচরণ করতে থাকে। তিনি এখন তার এজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পাঞ্জাবকে অশান্ত করার সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র ছিল। এর যোগসূত্র বিদেশী দেশের সাথে সংযুক্ত ছিল। ব্রিটেনে ভারতীয় দূতাবাসে হামলার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে ভারতীয় তেরঙাকে অপমান করার চেষ্টা করছিলেন এক ব্যক্তি। ইনি ছিলেন অবতার সিং খান্দা। যা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। এই ব্যক্তি ছিলেন দীপ সিধুর প্রশিক্ষক এবং পরে অমৃতপালের বিশেষ হয়ে ওঠেন।

এখন তারিখ এসেছে ১৮ মার্চ। অমৃতপালের ধারণা ছিল না যে পাঞ্জাব পুলিশ এত বড় পরিসরে কাজ করবে। পাঞ্জাব পুলিশ পুরো রাজ্যকে ক্যান্টনমেন্টে পরিণত করেছে। সর্বত্র অবরোধ করা হয়। অমৃতপালের কনভয় জলন্ধরে ছিল। পুলিশ কনভয়কে বাধা দিলেও পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে সে পালিয়ে যায়। তাৎক্ষণিক প্রভাবে পাঞ্জাবে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অমৃতপাল তার গাড়ি ছেড়ে অন্য গাড়িতে করে পালিয়ে যায়।

পরের দিন অর্থাৎ ১৯ মার্চ অমৃতপালের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন শুরু হয়। দলজিৎ কালসি, বসন্ত, গুমরিত সিং, ভগবন্ত সিং ‘প্রধানমন্ত্রী’কে উচ্চ নিরাপত্তায় ডিব্রুগড় জেলে পাঠানো হয়েছে। পাঞ্জাব পুলিশ সর্বাত্মক লড়াইয়ের মেজাজে ছিল। অমৃতপাল গোপনে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। তিনিও বারবার ছদ্মবেশ বদলাচ্ছিলেন।

২০মার্চ, অমৃতপালের চাচা হারজিৎ সিং পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। পুলিশ অভিযান জোরদার করেছে। তিনি অমৃতপালের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের লক্ষ্য করেছিলেন। কাকাও অমৃতপালের অপরাধে সহযোগী ছিলেন।

পরের দিন, ২১ মার্চ, চাচা হারজিত সিং, কুলবন্ত সিং ধলিওয়াল এবং গুরিন্দর পাল সিংকে আসামের ডিব্রুগড় জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখান থেকে আগে থেকেই বন্ধ ছিল খালিস্তানি সমর্থকরা। পাঞ্জাব পুলিশ সর্বত্র অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু অমৃতপাল সিং ধরা যাচ্ছিল না। ২২ মার্চ, অমৃতপাল এবং তার ডান হাত পাপলপ্রীত সিংয়ের একটি ছবি ভাইরাল হয়েছিল। দুজনেই একটা গাড়িতে বসেছিল। পুলিশ অবিলম্বে তাদের রাডারগুলিকে তীক্ষ্ণ করে এবং বেশ কয়েকটি দল ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। কিন্তু ততক্ষণে তারা পলাতক।

প্রতিদিনই পুলিশ বড় পরিসরে ব্যবস্থা নিচ্ছে। হরিয়ানার কুরুক্ষেত্রে অমৃতপাল ও পাপ্পলপ্রীতকে আশ্রয় দিয়েছিলেন এক মহিলা। পুলিশও বিষয়টি জানতে পেরেছে। সঙ্গে সঙ্গে ওই মহিলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২৫ মার্চ আরেকটি নাটক হলো। মনে হল অমৃতপাল আজ আত্মসমর্পণ করবে। কারণ অকাল তখতের জাথিদার জিয়ানি হরপ্রীত সিং অমৃতপালকে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বলেছিলেন। কিন্তু এই ঘটবে না। পুলিশ অপেক্ষা করতে থাকে কিন্তু অমৃতপালের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।

২৮ মার্চ অমৃতপাল সিংয়ের অবস্থান হোশিয়ারপুরে পাওয়া যায়। চারদিক থেকে পুলিশ ঘিরে রেখেছে। কিন্তু এখান থেকেও ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যায়। সে তার গাড়ি রেখে চলে গেল। ২৯শে মার্চ, অমৃতপালের একটি ভিডিও সামনে আসে। এখন তিনি হিরো হওয়ার চেষ্টা করছেন। বৈশাখী উপলক্ষে অমৃতপাল ‘সরবত খালসা’ ডাকেন।

৩০ মার্চ, অমৃতপালের আরেকটি ভিডিও ক্লিপ প্রদর্শিত হয়। যাতে তিনি দাবি করেন, শিগগিরই তিনি সবার সামনে আসবেন। ১০ এপ্রিল, অমৃতপালের সবচেয়ে বড় দোসর পাপ্পলপ্রীত পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। বলা হয়, এর যোগাযোগ ছিল আইএসআইয়ের সঙ্গে। অমৃতসরের কাঠুনাঙ্গল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

২০ এপ্রিল, অমৃতপালের স্ত্রী কিরণদীপ কৌরকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যায়। তিনি শ্রীগুরু রাম দাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ব্রিটেনে পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আসলে, অমৃতপাল বুঝতে পেরেছিল যে সে এখান থেকে পালাতে পারবে না। সে কারণেই তিনি চেয়েছিলেন তার স্ত্রী ব্রিটেনে পৌঁছে যাক। তিনি যখন ফ্লাইটে উঠতে যাচ্ছিলেন তখন পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়। আজ ২৩ এপ্রিল মোগার রোদে গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয় অমৃতপালকে। এরপরই তাকে হেলিকপ্টারে করে ডিব্রুগড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ হেলিকপ্টারটি ডিব্রুগড়ে অবতরণ করে।