CPIM: বালিগঞ্জে বাম উত্থান? বাবুল না দাঁড়ালে সায়রাকে দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হতো

রাজ্য জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে বালিগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে হেরে যাওয়া সিপিআইএম (CPIM) প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম। অভিজাত হালিম বংশের কূলবধু, উইপ্রো প্রাক্তনী সায়রার কাঁধে চড়ে এক…

Bullygunge by election left candidate saira halims vote persentage analyse

রাজ্য জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে বালিগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে হেরে যাওয়া সিপিআইএম (CPIM) প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম। অভিজাত হালিম বংশের কূলবধু, উইপ্রো প্রাক্তনী সায়রার কাঁধে চড়ে এক ধাক্কায় উল্কা গতিতে উত্থান হয়েছে বামফ্রন্টের। ভোট প্রাপ্তির হিসেব সেটি প্রমাণ করে।

উত্থান নাকি অন্য কিছু?
ফলাফল বলছে, মাত্র এক বছর আগে এই কেন্দ্রে নির্বাচনে তৃণমূলের পাওয়া ৭০.৬ শতাংশ ভোট এবার উপনির্বাচনে নেমে এসেছে ৪৯.৭ শতাংশে। অর্থাৎ টিএমসির ভোট কমেছে প্রায় ২১ শতাংশ। অন্যদিকে বিজেপির ভোট কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ। শেষ বিধানসভা নির্বাচনের সিপিআইএম পেয়েছিল ৫.৬১ শতাংশ ভোট। এবার তা বেড়ে প্রায় ৩০.১ শতাংশ। প্রায় ২৫ শতাংশের মতো ভোট টেনে আনলেন সিপিআইএমের সায়রা।

সিপিআইএমের ভোট প্রাপ্তির শতাংশ বিচারে মশগুল মুজফ্ফর আহমদ ভবন। একদা রাজ্যের প্রশাসনিক ক্ষমতার চাবি এই ভবনের সিন্দুকে রাখা থাকত। সেই চাবি হাতছাড়া হয়েছে দশ বছর আগে। তার ফল বিধানসভা ও লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে বামশক্তির শূন্য হয়ে যাওয়া। সেই মারাত্মক রক্তক্ষরণ কাটিয়ে গত পুরনিগম ও পুরভোটে সিপিআইএম রাজ্যে অন্যতম বিরোধী শক্তি বলে ফের উঠে আসছে। আর বিরোধী দল বিজেপি নামছে দ্রুত। এর শুরুয়াত হয়েছিল কলকাতা পুরনিগম ভোট থেকে। সেই রেশ ধরে কলকাতার অভিজাত বালিগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনে সিপিআইএম তার উত্থান শক্তি ধরে রাখল।

বালিগঞ্জের ভোটে জয়ী তৃণমূল কংগ্রেস। জয়ী বিজেপি ছেড়ে আসা প্রবল ‘মুসলিম বিদ্বেষী’ মন্তব্যকারী হার্ড হিটিং হিন্দুত্ববাদী বাবুল সুপ্রিয়। তিনি এখন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক। তাঁর সঙ্গে মূলত লড়াই হয়েছে সিপিআইএমের সায়রা শাহ হালিমের। তিনি হয়েছেন রানার্স। বিজেপির ‘হিন্দুবাদী’ নেত্রী কেয়া ঘোষ তৃতীয়। কংগ্রেসের কামরুজ্জামান চৌধুরী চতুর্থ।

এই চতুর্ভূজ লড়াইয়ের মাঝে সায়রা শাহ হালিম চর্চিত বেশি। কারণ, তিনি অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহর ভাইজি, প্রয়াত বিধানসভা অধ্যক্ষ হাসিম আবদুল হালিমের ‘বউমা’ ও গরিবের চিকিৎসক সিপিআইএম নেতা ড. ফুয়াদ হালিমের স্ত্রী। সর্বশেষ যে পরিচয় বাকি থাকল সেটি হলো, সায়রা জাতীয়স্তরে আলোচিত একজন নাগরিক অধিকার কর্মী।

এই সব পুঁজি সম্বল করে বালিগঞ্জে সায়রা ঝলক দেখিয়েছে সিপিআইএম। অংকের আড়ালে হাসছে রূঢ় বাস্তব। সেই বাস্তবের নাম বাবুল সুপ্রিয়। পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলের দুবারের বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু বিদ্বেষী মন্তব্যগুলি তৃণমূল কংগ্রেসের গলার কাঁটা। বাবুল টিএমসিতে আসার পর সেই কাঁটা খচখচানি আরও বাড়ে তাঁকে বালিগঞ্জের মতো মুসলিম ভোটার অধ্যুষিত এলাকা থেকে প্রার্থী করায়।

টিএমসির নেতৃত্ব, স্থানীয় সমর্থকরা কেউ চাননি বাবুল সুপ্রিয়কে। বিপদ বুঝে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসরে নামান মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও গোলাম রব্বানিকে। তাতে কিছুটা প্রলেপ পড়ে। কিন্তু বালিগঞ্জ, পার্ক সার্কাসের মতো সংখ্যালঘু জনবসতির এলাকায় শুরু হয় ‘নো ভোট টু বাবুল’ প্রচার।

এখানেই সিপিআইএমের তুরুপের তাস হন সায়রা হালিম। এনআরসি বিরোধী নেত্রীর প্রচার, তাঁর ‘উর্দু জবান’, সবমিলে সায়রা ছিলেন তীব্র আলোচিত। বালিগঞ্জের মুসলিম ভোটারদের মধ্যে চিড় ধরে। এর মাঝে ছাত্র নেতা আনিস খান খুন, বীরভূমের বগটুই গ্রামে সংখ্যালঘু গণহত্যার মতো বিষয় ভোটে প্রভাব ফেলে। কংগ্রেসের পক্ষে সংখ্যালঘু প্রার্থী আরও চিড় ধরান টিএমসির ভোট ব্যাংকে।

‘বাবুল কে দেব না ভোট’ এই মনোভাব থেকে যে ভোট হয়েছে তার ধাক্কায় সায়রা হয়েছেন দ্বিতীয়। আর বাবুলের জয় মানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয় এই প্রচার ছিল টিএমসির শেষ অস্ত্র। বালিগঞ্জ জুড়ে প্রশ্ন, বাবুলের বদলে হাবুল কিংবা টাবুল থাকলে সায়রাকে দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হতো। কারণ, সংখ্যালঘু ভোট সবসময় সংখ্যালঘু ঘনিষ্ঠ সরকারের পাশে থাকে। হিন্দুত্ববাদী বাবুল জার্সি বদলে জিতলেন এই কারণেই।