ঘোড়ায় চড়ে যাওয়া দলিত বরকে নিরাপত্তা দিতে কড়া পুলিশি প্রহরা

উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানের মতো বেশ কিছু রাজ্য আছে যেখানে আজও দলিত সম্প্রদায়ের লোকজনকে অনেক বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়। এইসব রাজ্যে আজও কোন দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ ঘোড়ায়…

উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানের মতো বেশ কিছু রাজ্য আছে যেখানে আজও দলিত সম্প্রদায়ের লোকজনকে অনেক বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়। এইসব রাজ্যে আজও কোন দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করতে যেতে পারেন না। ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করতে গিয়ে বহু তরুণকে আক্রান্ত হতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত এই ধরনের জাতিবৈষম্য দূর করতে বিশেষ উদ্যোগ নিল রাজস্থান পুলিশ।

সোমবার রাজস্থানের বুঁদি জেলার এক গ্রামে শ্রীরাম মেঘওয়াল নামে এক যুবক ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করতে যান। মেঘওয়ালকে ভিভিআইপিদের মত কড়া পাহারা দিয়ে নিয়ে যান বেশ কয়েকজন পুলিশ। মেঘওয়ালের পুরো যাত্রাপথে কড়া নজরদারি চালালেন তাঁরা। সাদা শেরওয়ানিতে সুসজ্জিত মেঘওয়াল জানালেন, তিনি দলিত সম্প্রদায়ের প্রথম ব্যক্তি যিনি এই রাস্তা দিয়ে ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করতে যাচ্ছেন।

এই বিয়ে উপলক্ষে সব ধরনের নিরাপত্তার আয়োজন করে জেলা পুলিশ। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজও বহু জায়গায় দলিতদের ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করতে যাওয়ার অনুমতি দেয় না স্থানীয় মাতব্বরেরা। কোন দলিত যুবক ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করতে গেলে আজও অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। সে কারণেই তাঁরা মেঘওয়ালের জন্য পুলিশি প্রহরার ব্যবস্থা করেছেন। জেলার পুলিশ সুপার জয় যাদব বলেছেন, তাঁরা এক সমীক্ষায় দেখেছেন, কমপক্ষে ৩০টি গ্রামে দলিতরা আজও বিয়ের অনুষ্ঠানে কখনও ঘোড়ায় চড়ার সুযোগ পাননি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা প্রতিবাদ করেছেন ঠিকই, কিন্তু তাতেও কোনও কাজ হয়নি। তাই একদিকে যেমন তাঁরা গ্রামবাসীদের বোঝানোর কাজ করছেন, তেমনই দলিত সম্প্রদায়ের কোনও তরুণ ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করতে যাওয়ার কথা জানালে তাঁকে নিরাপত্তাও দিচ্ছেন। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মী মেঘওয়ালের বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক স্বয়ং। জেলাশাসক বলেন, যদি কোনও দলিত পরিবার বিয়ের সময় ঘোড়া ব্যবহার করতে চান কিন্তু তাঁদের সেই কাজে কেউ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে তবে প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নেবে।

রাজস্থান পুলিশ জানিয়েছে, বিগত ১০ বছরে ৮০টিরও বেশি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। যেখানে দেখা গিয়েছে, দলিত সম্প্রদায়ের কেউ শোভাযাত্রা সহকারে বিয়ে করতে গেলে উচ্চবর্ণের লোকজন বাধা দিয়েছে। তবে মেঘাওয়াল শেষ পর্যন্ত পুলিশি নিরাপত্তাতেই তাঁর স্ত্রী দ্রৌপদীকে বরণ করে নিয়েছেন। বিয়ের মঞ্চে রাখা ছিল বিআর আম্বেদকরের একটি বড় ছবি। বিয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মেঘাওয়াল বলেন, এখন দলিত সম্প্রদায়ের বাকিরাও আমার মতই ঘোড়ায় চড়ে নির্ভয় বিয়ে করতে যাবে। কারণ দিন বদলাচ্ছে।