নিউজ ডেস্ক: বছর দুয়েক আগের ঘটনা। শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো থেকে ৮০ কিলোমিটার পূর্বে কেগাল্লেতে টিকিরি নামে একটি হাতির মৃত্যু হয়। ঠিকমতো খেতে না পেয়েই টিকিরি অস্বাভাবিক রোগা হয়ে গিয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন হস্তি বিশেষজ্ঞ জয়ন্ত জয়বর্ধনে। শ্রীলঙ্কার ক্যান্ডিতে আয়োজিত একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ওই চেহারাতেই নামানো হয় টিকিরিকে।
অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র সিগিরিয়াতে হাতির পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়ানোটাই আকর্ষণ। অনেকদিন থেকেই একটি হাতিকে সেই কাজে ব্যবহার করা হত। দিনের বেশিরভাগ সময়ই পিঠে পর্যটক নিয়ে চলতে হত তাকে। সামান্য বিশ্রামটুকুও মিলত না। রোজকার মতোই সেরকমই বিশ্রাম না নিয়ে নাগাড়ে সে পিঠে মানুষ নিয়ে ঘুরছিল হাতিটি। পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাবেই পরে হাতিটির মৃত্যু হয়।
বারবার এই ঘটনার পর এবার হাতি সংরক্ষণে কঠোর হল শ্রীলঙ্কান সরকার। হাতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বৃহস্পতিবার প্রকাশিত নতুন নিয়ম অনুযায়ী শ্রীলঙ্কায় দুই বছরের কম বয়সী বাচ্চা হাতিদের কাজ করানো নিষেধ, এছাড়াও তাদের মায়েদের সঙ্গে রাখতে হবে। এছাড়াও হাতি হ্যান্ডলার বা মাহুত, কাজ করার সময় মাদক গ্রহণ করতে পারবে না। হাতির সঙ্গে মাদকাসক্ত থাকা অবস্থায় ধরা পড়লে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।
সম্প্রতি পড়শি দেশের বন্যপ্রাণী সুরক্ষা প্রতিমন্ত্রী উইমালাবিরা দিসনায়েক এই নোটিশটি প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘প্রতিটি গৃহপালিত হাতির একটি পূর্ণদৈহিক ছবি এবং ডিএনএ বিশদ সহ একটি বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্র থাকতে হবে।’ বিশ্ব বন্যপ্রাণী আইন অনুসারে, হাতি শ্রীলঙ্কায় অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় এবং সেদেশে হাতি হত্যা মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ। যদিও ধর্মীয় মিছিল, পর্যটক আকর্ষণ এবং লগিংয়ের জন্য হাতিকে কাজে লাগানো হয়।
নতুন নিয়মে, লগিং হাতি দিনে মাত্র চার ঘন্টা পর্যন্ত কাজ করতে পারবে, রাতে কাজ করানো নিষিদ্ধ। প্রতিদিন কমপক্ষে আড়াই ঘন্টা স্নানের সময় দিতে হবে, কারণ কাদায় স্নান করে হাতিগুলো ঠান্ডা হয়ে যায়। এছাড়াও একবারে মাত্র চারজন মানুষ হাতিতে চড়তে পারবে, অবশ্যই ভাল প্যাডেড স্যাডে বসতে হবে। বন্দী হাতিদেরও প্রতি ছয় মাসে বাধ্যতামূলকভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। সরকারি প্রযোজনা ছাড়া হাতিগুলিকে চলচ্চিত্রে অংশগ্রহণের অনুমতি নেই। সংবাদসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, নিয়ম ভঙ্গকারীদের তিন বছরের কারাদণ্ড হতে পারে এবং তাদের হাতিগুলিকে রাষ্ট্রীয় হেফাজতে নেওয়া হতে পারে।