Pataliputra: মাওবাদীদের পূর্বসূরী এমসিসি ও জনযুদ্ধর গুলির লড়াইতে রক্তাক্ত হয়েছিল বিহার

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: বেলচি গ্রামের গণহত্যার ঘটনায় দেশ শিহরিত হয়েছিল। এরই প্রেক্ষিতে ইন্দিরার সেই দুরন্ত সফর। আসলে  বিহার থেকেই জাতীয় কংগ্রেসের দেশব্যাপী পতন এবং দেশজুড়ে ঘুরে…

প্রসেনজিৎ চৌধুরী:

বেলচি গ্রামের গণহত্যার ঘটনায় দেশ শিহরিত হয়েছিল। এরই প্রেক্ষিতে ইন্দিরার সেই দুরন্ত সফর। আসলে  বিহার থেকেই জাতীয় কংগ্রেসের দেশব্যাপী পতন এবং দেশজুড়ে ঘুরে দাঁড়ানো দুটোই হয়েছিল। এই বিহারেই ১৯৯০ সালের পর থেকে কংগ্রেস ক্ষমতায় নেই। জগন্নাথ মিশ্র মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। তিনিই বিহারে কংগ্রেসের শেষ প্রদীপ। বিহারে জেপি অনুরাগী লালুপ্রসাদ যাদবের উত্থান হচ্ছিল। গোটা দেশে বিজেপি ছড়াচ্ছিল। নেতৃত্বে লালকৃষ্ণ আদবানি ও অটল বিহারি বাজপেয়ী। পশ্চিমবঙ্গে প্রবল ক্ষমতা নিয়ে সিপিআইএমের সরকারে কমিউনিস্ট জ্যোতি বসু। রাজনৈতিক জীবনে গুরু জেপি ছাড়া জ্যোতিবাবুর প্রতি অগাধ আস্থা রেখেছেন লালুপ্রসাদ। নব্বই দশক তীব্র রামজন্মভূমি আন্দোলনের বছর। এই দশকেই বিহারের মসনদে লালুপ্রসাদের বসা। আর এই সময়েই বিজেপির রামজন্মভূমি বিরোধী অবস্থানে বার বার সামনের সারিতে আসা। মূল জনতা দলে ভাঙন ধরছিল। লালুপ্রসাদ তৈরি হচ্ছিলেন পৃথক পরিচিত গড়তে। তখন পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকার শৈশবস্থা নিশ্চিন্তে অতিক্রম করেছে। আধুনিক পাটলিপুত্রের (Pataliputra)  যুদ্ধে এসব কথা ধরা থাকছে।

১৯৭৭ সালে পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থী সরকার তৈরি হয়েছিল। আর  উগ্র বামপন্থী আন্দোলন বঙ্গভূমির বদলে বিহার ভূমিতে জমি ও জাত ভিত্তিক লড়াইয়ের প্রত্যক্ষ রণাঙ্গনে নেমে পড়ে। তৈরি হয়েছিল এমসিসি ( মাওয়েস্ট কমিউনিস্ট সেন্টার)। মাওবাদী তত্ত্বে সশস্ত্র পথে কৃষি ও শ্রমিক বিপ্লব ঘটিয়ে ক্ষমতা দখলে বিশ্বাস রাখা দলটির নেতৃত্বে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের উত্তাল নকশালবাড়ি আন্দোলনের কিছু কর্মী। তাঁদের নেতৃত্বে বিহার হয়ে উঠছিল গরম।

https://video.incrementxserv.com/vast?vzId=IXV533296VEH1EC0&cb=100&pageurl=https://kolkata24x7.in&width=300&height=400

তবে সশস্ত্র আন্দোলনের তত্ত্বেও তৈরি হচ্ছিল দ্বন্দ্ব। এরই ফল জনযুদ্ধ গোষ্ঠী বা পিডাব্লিউজি আত্মপ্রকাশ। লক্ষ্য একই-সশস্ত্র পথে সমাজতন্ত্র গঠন। কিন্তু এমসিসি ও জনযুদ্ধ গোষ্ঠীর  বন্দুক বারবার পরস্পরের দিকে গর্জে উঠেছে। পরস্পরের রক্ত নিয়েছে।  বিহারের মাটিতেই এই দুই সংগঠন এত দ্রুত ছড়াচ্ছিল যে গোয়েন্দা বিভাগ শংকিত হয়।

বিহারে উগ্র সামন্তবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আরো দুটি পক্ষ হলো সিপিআই ও সিপিআই(এম)। মূল স্রোতের এই দুটি বাম দল বিহারের বিধানসভায় আসন বাড়িয়ে নিলেও জমির আন্দোলনে  ভয়াবহ সামন্তবাদের বিরুদ্ধে সরাসরি হুঙ্কার ছাড়ে এমসিসি ও জনযুদ্ধ।

জন্মের পর বিজেপি হিন্দিভাষী এলাকায় বিশেষ করে উত্তর প্রদেশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। কিন্তু হিন্দিভাষী হয়েও বিহার এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।  এখানে লেখা হচ্ছিল রক্তাক্ত আখ্যান। ১৯৮৪ পরবর্তী ভারত ইন্দিরা বিহীন। তাঁকে খুনের পর ভয়াবহ ঘটনার কবলে পড়ছিল দেশ। আক্রান্ত হচ্ছিলেন শিখ ধর্মাবলম্বীরা। পশ্চিমবঙ্গে এরা নিরাপদ থাকলেও বাকি দেশের ছবি ছিল অন্য। বিহারে তখন মুখ্যমন্ত্রী বিন্দেশ্বরী দুবে। বিহার সরকারের অভ্যন্তরে বিরাট উথালি পাথালি চলছে। স্বাধীনতা সংগ্রামী মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা থাকলেও কূটনৈতিক যুদ্ধে তিনি কোণঠাসা হচ্ছিলেন।

পাটনার ক্ষমতায় কে বসবে এই যখন আলোচনা তখনই এক মিশকালো আঁধার রাতের নরসংহার দেশ কে নড়িয়ে দিয়ে গেল। সে রাত-ভয়ানক রাত। সে রাত প্রতিহিংসার রাত। এমসিসি বন্দুক সামন্তবাদের বিরুদ্ধে জিঘাংসার বারুদ ছড়িয়ে দিয়ে জানায়-রক্তের দাম এভাবেই চোকাতে হবে।

শুরু হলো বিহারে নতুন রক্তচরিত্র আখ্যান। (চলবে)

গত পর্ব: Pataliputra: পোড়ানো হলো একসার জীবন্ত মানুষ, গণহত্যার গ্রামে ঢুকে ইন্দিরা বুঝলেন জয় সামনে