আকবর যোধার প্রেমকাহিনী নিয়ে অনেক গল্প রয়েছে। তা নিয়ে রীতিমত সিনেমা তৈরি হয়ে গিয়েছে। আকবর ঘরণীকে সংকল্প করে এক পরিবারে হয় দুর্গাপুজো (Durga Puja)। পরিচিতি শিবের কোঠার পুজো নামে।
সুদূর দিল্লিতে হাতে গুনে বলে দেওয়া যাবে কটা পুজো হয়। সেই দিল্লির মসনদে রাজ করা এক মুঘল রানীর সঙ্গে বাংলার দুর্গা পুজোর যোগ আর কোথাও নেই। মিলবে বারাসতের চট্টোপাধ্যায় পরিবারে গেলে। নিতান্ত সাধারণ একটি পুজো। বিশাল কোনও জাঁকজমক নেই। পারিবারিক মন্দিরে প্রত্যেক বছর পুজো হয়, যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন আকবর ঘরণী।
ঘটনা আজ থেকে ৪১৪ বছর আগের, অর্থাৎ ১৬০৭ সালের। সম্রাট আকবর বাংলার বারো ভুঁইয়াদের মধ্যে ১১জনকে তাঁর বশ্যতা শিকার করিয়ে ফেলেছিলেন। একমাত্র বাধ সাধেন যশোরধিপতি প্রতাপাদিত্য। আকবর না পারলেও পুত্র জাহাঙ্গির ছাড়লেন না। বাবার অপূর্ণ কাজ পূর্ণ করতে তিনি সেনাবাহিনী সমেত মানসিংহকে বাংলার সুবেদার করে পাঠান৷ উদ্দেশ্য প্রতাপাদিত্যকে মুঘল বশ্যতা শিকার করানো। মানসিংহ একদম অতর্কিতে হানা দেন প্রতাপাদিত্যের দুর্গে।
হার মানতে বাধ্য হন প্রতাপাদিত্য। তাঁকে এবং তাঁর সেনাপতি তথা উপদেষ্টা শঙ্করলাল চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে নিয়ে যান দিল্লিতে।সঙ্গে নিয়ে যান প্রতাপাদিত্যের পূজিত যশোরেশ্বরী কালীর মূর্তিও৷ বন্দি অবস্থাতেই প্রতাপাদিত্যের মৃত্যু হয়৷ জাহাঙ্গিরের শঙ্করলাল চট্টোপাধ্যায়ের আমৃত্যু কারাবাসের সাজা হয়৷ সময়টা পিতৃপক্ষের৷ মহালয়ার দিন বন্দি শঙ্করলাল তর্পন করার আবেদন জানান৷জাহাঙ্গির নাকচ করে দেন৷
পিতৃতর্পণ করতে দিতেই হবে, এই দাবীতে শঙ্করলাল কারারুদ্ধ অবস্থাতেই আমরণ অনশন শুরু করেন৷ খবর পৌঁছায় রাজমাতা যোধাবাঈয়ের কাছে। তিনি ঘটনা শুনে শঙ্করের আবেদন মঞ্জুর করে দেন। সেনাপ্রহরায় যমুনা তীরে তর্পণ করেন প্রতাপাদিত্যের বিশ্বস্ত সেনাপতি৷ মন্ত্রোচ্চারণ শুনে মুগ্ধ হয়ে যান যোধাবাঈ৷
অদ্ভুত ভাবে সেই রাতেই যোধা স্বপ্নে দেখেন তিনি দুর্গাপুজো করছেন৷ স্বপ্ন ভাঙতেই প্রথমে মনে পড়ে শঙ্করের কথা৷ বন্দি শঙ্করকে বলেন দুর্গাপুজো করতে৷ শিবের উপাসক শঙ্কর, তাই প্রথমে তিনি এই পুজো করতে নিমরাজি ছিলেন৷ পরে সম্মত হন৷ এরপরেই যোধা বাঈ বোঝেন দিল্লিতে দুর্গাপুজো সম্ভব নয়। তিনি পুত্রকে বলেন শঙ্করকে যাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। কারামুক্ত হন শঙ্করলাল।
দিল্লি থেকে ফেরেন পিতৃভিটে বারাসতে৷ শিবের উপাসক শঙ্কর দুর্গাপুজো শুরু করেন। বাংলায় ফেরবার সময় যোধাবাঈ তাঁকে কথা দিয়েছিলেন তিনি নিজে শঙ্করের বাড়িতে গিয়ে তিনি পুষ্পাঞ্জলি দেবেন৷ বয়সজনিত কারণে তা আর সম্ভব হয়নি তবে যোধাবাঈ দিল্লি থেকে দূত পাঠান শঙ্করের কাছে। পত্রে লিখে পাঠান এই পুজোর খরচ তিনিই দেবেন৷ তাঁর ইচ্ছে ছিল এই পুজোয় সঙ্কল্প হবে তাঁর নামে। তাই করেছিলেন শঙ্করলাল। আকবর ঘরণীর নামে সংকল্প করে পুজো শুরু হয়৷ আর এভাবেই চট্টোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজোর সঙ্গে জড়িয়ে যান যোধাবাঈ।
শিবের উপাসকের বাড়িতে পুজো তাই এই পুজোর পরিচিতি শিবের কোঠার দুর্গা নামে। এখন আর যোধা বাঈয়ের নামে সঙ্কল্প হয় না তবে রয়ে গিয়েছে ইতিহাস। যাকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলেছে এই ঐতিহাসিক দুর্গোৎসব।