লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর (Rahul) সাম্প্রতিক বক্তব্যে সিপিআই(এম)-কে আরএসএস-এর সঙ্গে তুলনা করার প্রসঙ্গে সিপিআই সাংসদ পি. সন্দোষ কুমার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি রাহুল গান্ধীর এই বক্তব্যকে ‘অপরিণত’ এবং ‘অরাজনৈতিক’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এই ধরনের মন্তব্য ইন্ডিয়া জোটের নেতা হিসেবে তাঁর কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।
সন্দোষ কুমার আরও অভিযোগ করেছেন যে, রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের অনেক নেতা বিজেপি এবং আরএসএস-এ যোগ দিয়েছেন, এবং তিনি নিজেই আরএসএস-বিজেপির জন্য ‘ক্যাডার সরবরাহকারী’ হিসেবে কাজ করছেন। এই বিতর্ক সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক মহলে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
সিপিআই সাংসদ পি. সন্দোষ কুমার বলেছেন, “ইন্ডিয়া জোটের নেতা হিসেবে রাহুল গান্ধীর কাছ থেকে কিছুটা পরিণত আচরণ প্রত্যাশিত। কোনো বিচক্ষণ ব্যক্তি আরএসএস-এর সঙ্গে বামপন্থী দলগুলির তুলনা করতে পারেন না। আমি জানি না তাঁর কী হয়েছে। এই ধরনের অপরিণত এবং অরাজনৈতিক বক্তব্য রাহুল গান্ধীর মতো নেতার থেকে আশা করা যায় না।
দেশ তাঁর কাছ থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান আশা করে।” তিনি আরও বলেন, রাহুলের প্রতিটি বক্তব্যে এক ধরনের অপরিপক্কতা প্রকাশ পায়, যা ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।সন্দোষ কুমার কংগ্রেস দলকে এই বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “কংগ্রেসের উচিত এই বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া। রাহুল গান্ধীর এই ধরনের মন্তব্য জোটের ঐক্যের জন্য ক্ষতিকর।” তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে, রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, যার মধ্যে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নাম উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, “রাহুল গান্ধীর মূল দলের প্রায় সবাই এখন বিজেপিতে। তিনিই আরএসএস এবং বিজেপির জন্য ক্যাডার সরবরাহ করছেন।
আমি একটি তালিকা দিতে পারি, যেখানে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার মতো নেতারা রয়েছেন। তাই বামপন্থী দলগুলির সঙ্গে আরএসএস-এর তুলনা না করাই ভালো।”এই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে রাহুল গান্ধীর একটি বক্তব্য, যেখানে তিনি সিপিআই(এম)-এর সঙ্গে আরএসএস-এর তুলনা করেছেন। যদিও বক্তব্যের বিস্তারিত বিষয়টি স্পষ্ট নয়, তবে ধারণা করা হচ্ছে এটি সাংগঠনিক কাঠামো বা রাজনৈতিক কৌশলের প্রেক্ষিতে বলা হয়েছে।
সিপিআই এবং সিপিআই(এম) এই তুলনাকে তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে, যুক্তি দিয়ে যে বামপন্থী দলগুলির আদর্শ এবং লক্ষ্য আরএসএস-এর সঙ্গে সম্পূর্ণ বিপরীত। সিপিআই(এম)-এর একজন নেতা বলেন, “আরএসএস একটি সাম্প্রদায়িক সংগঠন, যেখানে বামপন্থী দলগুলি ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সমাজতান্ত্রিক আদর্শের উপর ভিত্তি করে কাজ করে।
এই তুলনা অযৌক্তিক এবং অগ্রহণযোগ্য।”ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে এই বিতর্ক নতুন টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছে। রাহুল গান্ধী জোটের প্রধান মুখ হিসেবে বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছেন, কিন্তু তাঁর এই বক্তব্য জোটের অভ্যন্তরীণ সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, সিপিআই এবং সিপিআই(এম) এই ধরনের মন্তব্যের পর কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করতে পারে।
সন্দোষ কুমার বলেন, “ইন্ডিয়া জোটের নেতা হিসেবে রাহুল গান্ধীর উচিত দায়িত্বশীলভাবে কথা বলা। তাঁর এই ধরনের বক্তব্য জোটের ঐক্যের জন্য ক্ষতিকর।”
কংগ্রেস এই অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় বলেছে যে, রাহুল গান্ধীর বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, “রাহুল গান্ধী বিজেপি এবং আরএসএস-এর সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব।
জিএসটি স্ক্যামে বিপুল অঙ্কের প্রতারণা, বাড়ছে প্রশাসনিক কড়াকড়ি
তাঁর বক্তব্য জাতির স্বার্থে এবং সত্যের পক্ষে। তাঁকে বিতর্কে জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।” তবে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বিতর্ক জোটের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বকে আরও প্রকট করতে পারে।এই ঘটনা সংসদের আসন্ন অধিবেশনে বিরোধীদের কৌশলের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। রাহুল গান্ধীর বক্তব্য এবং সিপিআই-এর প্রতিক্রিয়া ইন্ডিয়া জোটের ঐক্য এবং বিজেপির বিরুদ্ধে তাদের সমন্বিত প্রচেষ্টার উপর প্রশ্ন তুলেছে।